প্রথম পাতা খবর কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে ‘হাতিয়ার’ করে শিল্পপতিদের ভয় দেখানোর অভিযোগ মমতার, বাণিজ্য সম্মেলন থেকে তীব্র বার্তা

কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে ‘হাতিয়ার’ করে শিল্পপতিদের ভয় দেখানোর অভিযোগ মমতার, বাণিজ্য সম্মেলন থেকে তীব্র বার্তা

13 views
A+A-
Reset
বিভিন্ন কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে ‘হাতিয়ার’ করে পশ্চিমবঙ্গের শিল্পপতিদের ভয় দেখানো হচ্ছে এবং তাঁদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে— কলকাতার ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে আয়োজিত একদিনের শিল্প ও বাণিজ্য সম্মেলন থেকে ফের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে এভাবেই তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে শিল্পস্থাপনের পক্ষে সওয়াল করে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ব্যবসায়ীদের স্বাধীনতা না দিলে শিল্প কীভাবে বিকশিত হবে।

সম্মেলনের মঞ্চ থেকে গত ১৫ বছরে পশ্চিমবঙ্গের শিল্প-সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় এজেন্সির মাধ্যমে রাজ্যের শিল্পমহলে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করা হচ্ছে। মমতার কথায়, “ব্যবসায়ীদের স্বাধীনতা দেওয়া হোক। সারাক্ষণ এজেন্সি দিয়ে ভয় দেখালে ব্যবসা হবে কী করে? শিল্পপতি থেকে শ্রমিক— সকলের জন্য স্বাধীনতা চাই। শ্রমিকেরাই রাজ্যের আসল সম্পদ।”

ঘটনাচক্রে, এক দিন আগেই নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ব্যবসায়ী সম্মেলনের আগে রাজ্যের শিল্প পরিস্থিতি নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যও দাবি করেছিলেন, বহু শিল্পসংস্থা রাজ্য ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। যদিও নাম না করে, বৃহস্পতিবারের সম্মেলন থেকেই সেই সমালোচনার জবাব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী— এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

মমতার বক্তব্যের পর প্রেক্ষাগৃহজুড়ে হাততালি ও হর্ষধ্বনি ওঠে। অতীতে রাজ্যে ‘সিন্ডিকেটরাজ’ ও তোলাবাজির অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের একাংশের বিরুদ্ধে। সেই প্রেক্ষিতেই ব্যবসায়ীদের ‘স্বাধীনতা’ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য দলীয় স্তরেও একটি বার্তা বলে মনে করছেন অনেকে। একই সঙ্গে শিল্পমহলের আস্থা অর্জনের চেষ্টা হিসেবেও দেখা হচ্ছে এই বক্তব্যকে।

রাজ্যের ভাবমূর্তি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ভুয়ো খবর ছড়ানোর অভিযোগও করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “টাকা নিয়ে বাংলার নামে কুৎসা রটানো হচ্ছে।” পরিসংখ্যান তুলে ধরে মমতার দাবি, নীতি আয়োগের রিপোর্ট অনুযায়ী গত সাড়ে ১৪ বছরে রাজ্যে প্রায় ২ কোটি নিয়োগ হয়েছে এবং বেকারত্ব কমেছে ৪০ শতাংশ। তাঁর প্রশ্ন, “রাজনৈতিক স্বার্থে যারা বাংলার নিন্দা করছে, এটা কি তাদের কাছে গর্বের নয়?”

বিধানসভা নির্বাচনের আগে এটিই রাজ্যের শেষ বাণিজ্য সম্মেলন। সেখানে দেশ-বিদেশের শিল্পপতি ও বণিকমহলের প্রতিনিধিদের সামনে রাজ্যের শিল্প সম্ভাবনার বিস্তারিত ছবি তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। জানান, পশ্চিমবঙ্গ এখন এশিয়ার অন্যতম লজিস্টিক্স হাব। রাজ্যে গড়ে উঠেছে এশিয়ার বৃহত্তম চর্মশিল্প কমপ্লেক্স— যেখানে ৩৭,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে এবং কাজ পেয়েছেন প্রায় সাড়ে ৭ লক্ষ মানুষ। ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পেও এক নম্বরে রয়েছে রাজ্য।

তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের অগ্রগতির কথাও তুলে ধরেন মমতা। আইটি মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে রাজ্যে ২,৮০০টি আইটি সংস্থায় প্রায় ২ লক্ষ কর্মী কাজ করছেন। বেঙ্গল সিলিকন ভ্যালির জন্য ৩৫,০০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে এবং তৈরি হচ্ছে সেমিকন্ডাক্টর হাব। শিল্পপতি সঞ্জীব গোয়েন্‌কার শিল্পস্থাপনের জন্য উত্তরপাড়ায় ৩৫০ একর জমি চিহ্নিত করার কথাও জানান মুখ্যমন্ত্রী।

পাশাপাশি, রাজ্যেই সাইকেল উৎপাদনের পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন তিনি। বলেন, “মেয়েদের সাইকেল দেওয়ার প্রকল্পে প্রতি বছর প্রায় ১৬ লক্ষ সাইকেলের প্রয়োজন হয়। সেটা রাজ্যেই তৈরি করা যেতে পারে।”

দুর্গা অঙ্গন ও বড়দিনের উৎসবের ঘোষণা
বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকেই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, আগামী ২৯ ডিসেম্বর বিকেল ৪টেয় দুর্গা অঙ্গনের শিলান্যাস হবে। নিউটাউনের ইকো পার্কের কাছে রামকৃষ্ণ মিশনের পাশে তৈরি হতে চলেছে এই দুর্গা অঙ্গন। আবাসন পরিকাঠামো উন্নয়ন পর্ষদ (হিডকো) ইতিমধ্যেই নির্মাণকাজ শুরু করেছে।

একই দিনে পার্ক স্ট্রিটের অ্যালেন পার্কে বড়দিনের উৎসবের সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতা-সহ বিভিন্ন জেলার গির্জায় ভার্চুয়াল মাধ্যমেও উদ্বোধন করা হয়। দার্জিলিঙের ঐতিহ্যবাহী ‘সেন্ট অ্যান্ড্রুজ়’ গির্জার সংরক্ষণ কাজ শেষ হওয়ার কথাও জানান তিনি। মমতার বক্তব্য, “আমরা সব উৎসব নিজেদের মনে করে পালন করি। উৎসবই মানুষকে জীবনের টেনশন থেকে মুক্তি দেয়।”

উল্লেখ্য, বড়দিন উপলক্ষে এ বছর ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত শহর ও জেলার বিভিন্ন এলাকা সজ্জিত থাকবে। তবে ২৪ ও ২৫ ডিসেম্বর অ্যালেন পার্ক বন্ধ থাকবে এবং ওই দু’দিন পার্ক স্ট্রিটে যান চলাচল ও খাবারের স্টল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আরও খবর

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.