উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি জীবন যখন ধস ও বন্যার জেরে কার্যত বিপর্যস্ত, ঠিক তখনই ফের দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে উত্তরবঙ্গে পৌঁছালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার বিকেলেই তিনি পৌঁছে যান উত্তরবঙ্গের বিপর্যস্ত এলাকায়। সোমবার দিনভর নাগরাকাটার একাধিক সেতু, রাস্তা ও নদীবাঁধের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র পর্যালোচনা করেন। ত্রাণ শিবিরে গিয়ে দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলেন, তাঁদের সমস্যার কথা শোনেন। মৃতদের পরিবারের হাতে তুলে দেন আর্থিক সাহায্য ও চাকরির নিয়োগপত্র। মঙ্গলবার সকালেও তাঁর কর্মব্যস্ততা অব্যাহত থাকে। প্রথমে মিরিক, তারপর সুখিয়াপোখরিতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী। দুর্গতদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন এবং তাঁদের হাতে বাড়ি মেরামতির জন্য ১ লক্ষ টাকার আর্থিক সাহায্য তুলে দেন তিনি। একই সঙ্গে জানান, এই দুর্যোগে যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন তিনি।
সপ্তাহখানেক আগে প্রবল বৃষ্টি ও ভুটানের জলের চাপে উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলা—দার্জিলিং, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি— মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ধস ও বন্যায় ভেঙে পড়ে বহু রাস্তা, সেতু, নদীবাঁধ। শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে, বহু মানুষ এখনো অস্থায়ী ত্রাণ শিবিরে দিন কাটাচ্ছেন। প্রশাসনের তৎপরতায় পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও পাহাড়ের কিছু অংশ এখনও বিচ্ছিন্ন। এই অবস্থায় ফের দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
সুখিয়াপোখরিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সরকার সবসময় মানুষের পাশে আছে। যাঁদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাঁদের সাহায্য করা আমাদের দায়িত্ব। যাঁরা প্রিয়জন হারিয়েছেন, তাঁদের পরিবারকে পাশে পাবে সরকার।” পাশাপাশি তিনি দ্রুত অস্থায়ী ব্রিজ নির্মাণের নির্দেশ দেন এবং প্রশাসনকে বাস্তব পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেন।
জানা গিয়েছে, বুধবার মুখ্যমন্ত্রী একটি রিভিউ মিটিং করবেন, যেখানে উত্তরবঙ্গের দুর্যোগ মোকাবিলা ও পুনর্গঠন পরিকল্পনা নিয়ে বিশদ আলোচনা হবে। ইতিমধ্যেই প্রশাসনের তরফে ধসে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা ও সেতু মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে তদারকি করছেন যাতে দুর্গতদের পুনর্বাসন দ্রুত সম্পন্ন হয়।
উত্তরবঙ্গের মানুষের কাছে মুখ্যমন্ত্রীর এই পরিদর্শন এক আশার আলো হয়ে এসেছে। স্থানীয়দের কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী নিজে এসে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, এটা আমাদের কাছে বড় সাহসের কথা। এখন আমরা বিশ্বাস করতে পারছি, সরকার আমাদের কথা শুনছে।”
এই সফর শুধুই প্রশাসনিক পরিদর্শন নয়, এক মানবিক প্রতিশ্রুতি—যেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবারও প্রমাণ করলেন, রাজ্যের মানুষের দুর্দিনে তিনি সবসময় তাঁদের পাশে।