বিশ্বজয়ী রিচা ঘোষের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ইডেন যেন হয়ে উঠল গর্বের আসর। বাংলার এই কন্যা প্রথম ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটার যিনি বিশ্বকাপ জিতেছেন। শুক্রবার শিলিগুড়িতে তাঁর প্রত্যাবর্তনে যেমন দেখা গিয়েছিল আবেগের বিস্ফোরণ, তেমনই শনিবার ইডেনে অনুষ্ঠিত হল বর্ণাঢ্য সংবর্ধনা।
রিচাকে সংবর্ধনা দিল ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল (CAB)। উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সিএবি সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ঝুলন গোস্বামী, অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তী, সিএবি কর্তা সঞ্জয় দাস ও নীতীশ রঞ্জন দত্ত প্রমুখ।
ইডেন যেন সেদিন পরিণত হয়েছিল “দেবীবরণ মঞ্চে”— বিশ্বজয়ী রিচার হাতে মুখ্যমন্ত্রী নিজে তুলে দিলেন পুষ্পস্তবক, সোনার ব্যাট ও ₹৩৪ লক্ষ টাকার চেক। রিচার মা-বাবাকেও বিশেষ সম্মান জানানো হয়।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “রিচার বয়স অল্প। ওকে মানসিক চাপ দিও না। ভালোবাসা দিয়েই বাংলা ও বিশ্ব জয় করবে ও। মনের শক্তিই সবচেয়ে বড়। নিজের কাজ মন দিয়ে করে যেতে হবে। দুর্গমকে জয় করে শীর্ষে পৌঁছতে হবে— এটাই আসল বার্তা।”
মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, রিচার কৃতিত্বে গর্বিত সমগ্র রাজ্য। রাজ্য সরকারের তরফে রিচাকে ‘বঙ্গভূষণ’ সম্মান দেওয়া হয়েছে এবং তাঁকে রাজ্য পুলিশের ডিএসপি পদে নিয়োগ করা হয়েছে।
সিএবি সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “রিচা ভারতীয় দলে যে ভূমিকা পালন করে, সেটা অত্যন্ত কঠিন। ছ’নম্বরে নেমে কম বল পেয়ে এত ভালো পারফরম্যান্স করা সহজ নয়। ওর মূল্য স্মৃতি বা হরমনের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমি তিনটি আইসিসি ইভেন্টে অধিনায়ক ছিলাম, কিন্তু বিশ্বকাপ জিততে পারিনি। তুমি পেরেছো। একদিন যেন আমরা বলতে পারি— রিচা ভারত অধিনায়ক!”
ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটের কিংবদন্তি ঝুলন গোস্বামী জানান, “২০১৩ সালে সিএবি-র ট্যালেন্ট হান্ট প্রোগ্রামে শিলিগুড়িতে প্রথম রিচাকে দেখি। তখনই বুঝেছিলাম, ওর মধ্যে আলাদা কিছু আছে। ওর প্রতিভা দেখেই সিএবি-তে নাম পাঠাই। তখন সৌরভ স্যার প্রেসিডেন্ট ছিলেন, ওঁরই সমর্থনে রিচা সুযোগ পায়। বাকিটা তো ইতিহাস।”
২২ বছর বয়সি রিচা ঘোষ আজ শুধু বাংলার নয়, ভারতের গর্ব। বিশ্বকাপ জয়ী দলের অন্যতম নায়ক হিসেবে তিনি প্রমাণ করেছেন— ছোট শহর থেকেও বিশ্ব জেতা যায়। রাজ্যজুড়ে তাঁর সম্মানে চলছে উদযাপন। শিলিগুড়ির রাস্তায় এখনও ব্যানার-পোস্টারে ভরপুর তাঁর সাফল্যের কাহিনি।
এই অনুষ্ঠানে রিচা বলেন, “আমি আপ্লুত। এমন সংবর্ধনা ভাবিনি। সৌরভ স্যার, মমতা ম্যাডাম, ঝুলন দিদি— সকলের কাছ থেকে এত ভালোবাসা পেয়ে আমি আরও লড়াই করতে অনুপ্রাণিত।”