হাজার হাজার টাকা খরচ করে টিকিট কেটেছিলেন। ডিসেম্বরের শীত উপেক্ষা করে কাকভোরে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে এসে ভিড় জমিয়েছিলেন ফুটবলপ্রেমীরা। একটাই আশা—বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিয়োনেল মেসিকে অন্তত একবার চোখের সামনে দেখা। কিন্তু বাস্তবে হল উল্টো। ভিআইপি ও আয়োজকদের ভিড়ে মেসিকেই দেখতে পেলেন না সাধারণ দর্শকেরা। সেই হতাশা, ক্ষোভ আর দুঃখ থেকেই শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হল।
নির্ধারিত সময়েই যুবভারতী স্টেডিয়ামে পৌঁছন লিয়োনেল মেসি। তাঁর সঙ্গে মাঠে ঢোকেন লুইস সুয়ারেজ এবং রদ্রিগো ডি’পল। মেসি হাসিমুখে দর্শকদের দিকে হাত নাড়ালেও গ্যালারিতে বসে থাকা অধিকাংশ দর্শক সেই মুহূর্ত দেখতে পাননি। কারণ, মাঠের মাঝখানে অন্তত ৫০ জনের ভিড়ে কার্যত ঢাকা পড়ে যান আর্জেন্টাইন মহাতারকা। ভিআইপি, আয়োজক এবং আমন্ত্রিতদের ঘেরাটোপে মেসিকে স্পষ্টভাবে দেখার সুযোগই পাননি সাধারণ দর্শকেরা।
চড়া দামে টিকিট কেটে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করার পরও যখন প্রিয় ফুটবলারের একঝলক দেখার আশা ভেঙে যায়, তখনই গ্যালারিতে ক্ষোভের পারদ চড়তে শুরু করে। দর্শকদের উত্তেজনা আঁচ করেই সম্ভবত নির্ধারিত সময়ের আগেই মেসিকে মাঠ থেকে বের করে নেন আয়োজকেরা। সেই সিদ্ধান্তই পরিস্থিতিকে আরও বিস্ফোরক করে তোলে। ধৈর্য হারিয়ে দর্শকেরা মাঠের দিকে বোতল ছুঁড়তে শুরু করেন। গ্যালারিতে লাগানো মেসির ছবি দেওয়া ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হয়। এর পর ব্যারিকেড ভেঙে উন্মত্ত জনতা মাঠে ঢুকে পড়ে। গ্যালারির চেয়ার ভেঙে মাঠের ভিতরে ছুড়ে মারা হয়।
মাঠের ভিতরে ঢুকে হাতের কাছে যা পেয়েছেন, তাই দিয়েই ভাঙচুর চালান ক্ষুব্ধ মেসিভক্তরা। ভেঙে ফেলা হয় প্লেয়ারদের টানেল, ক্যানোপি সহ একাধিক অস্থায়ী কাঠামো। পুরো যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে তৈরি হয় চরম বিশৃঙ্খলা। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে ওঠে যে, নিরাপত্তার কারণে কলকাতায় আসা বলিউড তারকা শাহরুখ খানের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়।
এই বিশৃঙ্খলার জেরেই যুবভারতীতে যাননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাঝপথ থেকেই ফিরে যান তিনি। প্রবল উত্তেজনা ও নিরাপত্তাজনিত আশঙ্কার মধ্যেই যুবভারতী ছেড়ে বেরিয়ে যান লিয়োনেল মেসি। পরবর্তীতে আরও কয়েকটি অনুষ্ঠানে তাঁর অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও, পরিস্থিতির কারণে সেই কর্মসূচি কার্যত ভেস্তে যায়।
বিশ্ব ফুটবলের মহাতারকাকে একবার দেখার স্বপ্ন নিয়ে মাঠে আসা হাজার হাজার দর্শকের সেই স্বপ্ন ভেঙে গেল ভিআইপি সংস্কৃতি, অব্যবস্থা ও দুর্বল জননিয়ন্ত্রণের চাপে—শনিবার যুবভারতীতে তারই করুণ ছবি সামনে এল।