প্রথম পাতা খবর উত্তরবঙ্গের ভয়াবহ বন্যা ও ধস: অন্তত ১৭ জনের মৃত্যু, সোমবারই দুর্গত এলাকায় যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

উত্তরবঙ্গের ভয়াবহ বন্যা ও ধস: অন্তত ১৭ জনের মৃত্যু, সোমবারই দুর্গত এলাকায় যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

27 views
A+A-
Reset

দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার— গোটা উত্তরবঙ্গ এখন জলের তলায়। এক রাতের প্রবল বর্ষণে পাহাড়-সমতল মিলিয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি। ধসে বন্ধ হয়ে গিয়েছে একাধিক রাস্তা, ভেঙে পড়েছে সেতু, উপচে পড়ছে নদীর জল। মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭। এই পরিস্থিতিতে সোমবারই দুর্গত এলাকায় যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টানা পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। রবিবার সকাল থেকেই নবান্নের কন্ট্রোল রুমে থেকে পরিস্থিতির উপর নজর রেখেছেন।

টিভি নাইন বাংলাকে ফোনে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সোমবার মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে সঙ্গে নিয়ে বিকেলের মধ্যেই তিনি পৌঁছে যাবেন শিলিগুড়িতে, সেখান থেকেই দুর্যোগপূর্ণ এলাকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করবেন। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “ভূটানে প্রবল বর্ষণের কারণে উত্তরবঙ্গে জলের চাপ বেড়েছে। এই বিপর্যয় অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। সকাল ৬টা থেকে আমি মনিটরিং করছি। উত্তরবঙ্গের পাঁচটি জেলার সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকও করেছি। দুর্যোগ আমাদের হাতে নেই, কিন্তু আমরা মানুষকে নিরাপদে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।”

শনিবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিতে দার্জিলিং ও কালিম্পংয়ের বিস্তীর্ণ এলাকা বিধ্বস্ত। বহু জায়গায় ধস নেমে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। তিস্তা নদীর জল বিপদসীমা ছাড়িয়ে উঠে এসেছে জাতীয় সড়কে। কালিম্পংয়ের তিস্তা বাজার তলিয়ে গিয়েছে নদীর জলে। বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে নিরাপদ আশ্রয়ে। মিরিক ও শিলিগুড়ির সংযোগকারী দুধিয়ার লোহার সেতু মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২৯ মাইল এলাকায় বালুওয়াখানি তিস্তার স্রোতে ভেসে গিয়েছে। দার্জিলিং-শিলিগুড়ি সংযোগকারী হিল কার্ট রোড দিলারামে ধসে অবরুদ্ধ। শিলিগুড়ির পোড়াঝাড়ে বাঁধ ভেঙে জল ঢুকে প্লাবিত হয়েছে বিশাল এলাকা। ফুলবাড়ির মহানন্দা ক্যানেল ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। নেপাল সীমান্ত সংলগ্ন গলগলিয়া প্লাবিত। ভেঙেছে দুধিয়ার সেতু, ব্যাহত যোগাযোগ ব্যবস্থা।

আবহাওয়া দফতর আগেই জানিয়েছিল উত্তরবঙ্গে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা, সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে। হাসিমারায় রেকর্ড বৃষ্টিপাত হয়েছে— সকাল ৮টা পর্যন্ত ১৫৩ মিলিমিটার। জলপাইগুড়িতে একরাতে বৃষ্টি হয়েছে ১৭২ মিলিমিটার, যা এই মরশুমের রেকর্ড। তোর্সা নদীর জলস্তর বিপদসীমা থেকে ১১৮ মিটার উপরে বইছে। জলপাইগুড়ির মহামায়া পাড়া, পাণ্ডাপাড়া, স্টেশন রোড, ক্লাব রোডসহ একাধিক এলাকায় জল দাঁড়িয়ে পড়েছে। ক্লাব রোডে গাছ পড়ে বন্ধ হয়েছে রাস্তা। কোচবিহারেও ভারী বৃষ্টিতে অধিকাংশ এলাকা জলমগ্ন। তিস্তা, মহানন্দা, জলঢাকা, তোর্সা— সব নদীই এখন বিপজ্জনক উচ্চতায় বইছে।

বন্যা ও ধসের প্রভাব পড়েছে ট্রেন চলাচলেও। উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের একাধিক ট্রেন বাতিল হয়েছে। বাংলা থেকে অসমগামী কয়েকটি ট্রেনও বাতিল। ঘুরপথে চালানো হচ্ছে কিছু পরিষেবা। বাতিল হয়েছে এনজেপি–আলিপুরদুয়ার ট্যুরিস্ট স্পেশাল, ধুবরি–শিলিগুড়ি ডেমু স্পেশাল, শিলিগুড়ি–বক্সিরহাট এক্সপ্রেস। রেল সূত্রে জানানো হয়েছে, নদীর জলস্তর কমে গেলে তবেই ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করা সম্ভব হবে।

রাজ্য সরকারের তরফে ইতিমধ্যেই নবান্নে বিশেষ কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ও মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে পরিস্থিতি নজরদারিতে রাখা হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলায় এনডিআরএফ, সিভিল ডিফেন্স ও দমকল বাহিনী কাজ করছে দুর্গত এলাকায়। মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস— “উত্তরবঙ্গবাসীর পাশে সরকার আছে। এই দুর্যোগের সময় কাউকেই একা থাকতে হবে না। মানুষের নিরাপত্তাই এখন আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার।”

আরও খবর

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.