রাতের গভীর নৈঃশব্দ ভেঙে আচমকাই শ্রীনগর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে তীব্র বিস্ফোরণের শব্দ। শুক্রবার রাতের সেই মুহূর্তে থরথর করে ওঠে নওগাম এলাকা। থানার ভিতর থেকে আগুনের ঝলকানি, চারদিকে ছিটকে থাকা দেহাংশ, ধ্বংসস্তূপ আর ধোঁয়ার বিশাল মেঘ— এমনই বিভীষিকার দৃশ্য ধরা পড়েছে স্থানীয় একটি বাড়ির সিসিটিভি ক্যামেরায়। সমাজমাধ্যমে ইতিমধ্যেই ভাইরাল সেই ফুটেজ এবং একাধিক ভিডিও, যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে বিস্ফোরণের তীব্রতা ঠিক কতটা ভয়াবহ ছিল।
থানার ভিতর প্রচুর পরিমাণে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট রাখা ছিল। ফরিদাবাদ থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়া বিস্ফোরক পদার্থের পরীক্ষা চলছিল পুলিশ ফরেন্সিক টিমের তত্ত্বাবধানে। সেই সময় রাত ১১টা ২০ মিনিটে আচমকাই ঘটে বিস্ফোরণ। থানার ভিতর আগুন দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে। বিস্ফোরণের অভিঘাতে বন্ধ জানলা মুহূর্তের জন্য খুলে আবার সজোরে বন্ধ হয়ে যায়। ধোঁয়ায় ঢেকে যায় গোটা এলাকা। দমকল পৌঁছনোর পর দেখা যায় থানার বড় অংশটাই ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে জানা গেছে, ঘটনায় অন্তত ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম হয়েছেন ২৭ জন, যার মধ্যে তিন জন সাধারণ মানুষও আছেন। মৃতদের মধ্যে রয়েছেন বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মী এবং তিন জন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ। আশঙ্কা করা হচ্ছে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে, কারণ ধ্বংসস্তূপের নিচে একাধিক দেহাংশ চাপা পড়ে ছিল। উদ্ধারকারীদের বেগ পেতে হয়েছে সেগুলি উদ্ধার করতে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণের শব্দ ১৫ কিলোমিটার দূর থেকেও শোনা গেছে। থানার ৩০০ মিটার দূর পর্যন্ত ছিটকে পাওয়া গেছে দেহাংশ।
কাশ্মীরের ডিজিপি জানিয়েছেন, ফরিদাবাদ থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়া অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের নমুনা পরীক্ষা চলাকালীনই বিস্ফোরণ ঘটে এবং এর পিছনে অন্য কোনও কারণ নেই বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, থানাটি গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সংলগ্ন কয়েকটি বিল্ডিংয়েও বিস্ফোরণের অভিঘাত পড়েছে। গোটা ঘটনায় তদন্ত চলছে।
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগেই নওগাম থানার পুলিশ জইশ জঙ্গিদের সমর্থনে পোস্টার সাঁটার অভিযোগে আদিল আহমেদ নামে এক চিকিৎসককে গ্রেফতার করে। তাঁর জেরায় ফরিদাবাদে মজুত প্রচুর বিস্ফোরকের হদিস মেলে। গত ১০ নভেম্বর উদ্ধার করা হয় ৩৬০ কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট। দিল্লির লালকেল্লার সামনে গাড়ি বিস্ফোরণে ১৩ জনের মৃত্যুর ঘটনার পর থেকেই সেই বিস্ফোরককে সুরক্ষার স্বার্থে নওগাম থানায় রাখা হয়। আর সেই বিস্ফোরক পরীক্ষা চলাকালীনই ঘটে গেল এই ভয়াবহ অঘটন।
নওগাম থানার ধ্বংসস্তূপ, জ্বলে ওঠা আগুনে অন্ধকার রাতের আকাশ আলোকিত হওয়া, চারদিকে দেহাংশ ছড়ানো— এই দৃশ্য এখন উপত্যকাজুড়ে আতঙ্কের নতুন ছায়া ফেলেছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত অনেক প্রশ্নেরই উত্তর মিলবে না।