ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদির মৃত্যুর পর থেকেই উত্তাল বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার রাতভর তাণ্ডব ও ভাঙচুরের পর শুক্রবার সকালেও পরিস্থিতি পুরোপুরি শান্ত হয়নি। রাজধানী ঢাকা ছাড়াও খুলনা, রাজশাহী ও চট্টগ্রারের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্ত বিক্ষোভ চলছেই। যদিও সকাল থেকে নতুন করে কোথাও বড়সড় ভাঙচুর বা অগ্নিসংযোগের খবর মেলেনি, তবু উত্তেজনা এখনও কাটেনি।
শুক্রবার সকাল থেকে ঢাকার শাহবাগ চত্বরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বহু মানুষ। একই সঙ্গে ঢাকায় পুড়ে যাওয়া সংবাদপত্র ‘দ্য ডেলি স্টার’-এর দফতরের সামনেও অনেকে জড়ো হয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার প্রতিবাদ জানান। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে আগুনে ডেলি স্টার অফিসের নীচের দু’টি তলা সম্পূর্ণ পুড়ে গিয়েছে। এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময়েও অফিসের ভিতরে দগ্ধ ও ভাঙাচোরা আসবাবপত্র ছড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। বাইরে পুলিশ ও র্যাবের কড়া প্রহরা ছিল।
ঢাকার কারওয়ান বাজারে সংবাদপত্র ‘প্রথম আলো’-র দফতরও আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। শুক্রবার সকালেও ভবনের বিভিন্ন অংশ থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায়। গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়ে যাওয়ার পাশাপাশি ক্যামেরা, লেন্সসহ একাধিক জিনিস চুরি হয়ে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে শুক্রবার সকাল থেকেই শাহবাগ-সহ ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ব্যারিকেড বসিয়ে যানচলাচল বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। গুলশান এলাকায় বিভিন্ন দূতাবাসের আশপাশেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
বেলা ১১টার পর ডেলি স্টার দফতরের সামনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে একদল ছাত্র-যুব জড়ো হন। তাঁদের ঘিরে কয়েক জন ব্যক্তি পাল্টা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করলে এলাকায় কিছুটা উত্তেজনা তৈরি হয়। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকে।
অন্য দিকে, শুক্রবার সকালে শাহবাগ মোড়ে বিক্ষিপ্ত ভাবে মিছিল করে স্লোগান দিতে দেখা যায় একদল বিক্ষোভকারীকে। সকলেরই দাবি—হাদি হত্যার বিচার চাই। সংবাদমাধ্যম ‘বিবিসি বাংলা’-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিক্ষোভকারীদের বেশির ভাগই দাবি করেছেন, তাঁরা কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন। সকাল ১০টার পর থেকে ধীরে ধীরে শাহবাগ চত্বরে প্রায় শ’দুয়েক বিক্ষোভকারী জড়ো হন। নতুন করে যাতে কোনও অশান্তি না ছড়ায়, সে বিষয়ে সতর্ক রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এ দিকে, বৃহস্পতিবার রাতে শুরু হওয়া হামলা ও ভাঙচুর শুক্রবারও অব্যাহত থাকার ছবি মিলেছে। শুক্রবার সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির ভাঙা বাড়িতেও ফের ভাঙচুর চালাতে দেখা যায় কয়েক জনকে। বেলা ১২টার দিকেও ৩২ নম্বরের ওই বাড়ির অবশিষ্ট দেওয়াল শাবল ও হাতুড়ি দিয়ে ভাঙতে দেখা যায় তাঁদের।
এ অবস্থায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, শুক্রবার বিকেল ৪টে নাগাদ বাংলামোটর থেকে বিক্ষোভ মিছিল করবে তাঁর দল। পাশাপাশি জনরোষের সুযোগ নিয়ে কেউ যাতে ভাঙচুর বা নাশকতামূলক কাজে জড়িয়ে না পড়ে, সে বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার বার্তাও দিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা। তার আগেই উন্মত্ত জনতার বিক্ষোভে উত্তাল সে দেশের নানা এলাকা। এই পরিস্থিতিতে নির্বিঘ্নে ভোট হওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচনী আধিকারিক এবং প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনও। এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু বলা না-হলেও কমিশনের একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে বাংলাদেশের সংবাদপত্র ‘কালের কণ্ঠ’ এমনটাই জানিয়েছে।