প্রথম পাতা খবর নজরে অস্বাভাবিক ধান বিক্রি : ফড়ে-চক্র রুখতে জেলায় জেলায় অভিযান খাদ্যদপ্তরের

নজরে অস্বাভাবিক ধান বিক্রি : ফড়ে-চক্র রুখতে জেলায় জেলায় অভিযান খাদ্যদপ্তরের

6 views
A+A-
Reset

চাষির নামে অস্বাভাবিক পরিমাণে ধান বিক্রির বিষয়টি নিয়ে সজাগ হয়েছে রাজ্য খাদ্যদপ্তর। সরকারি ক্রয়কেন্দ্রে বেআইনি লাভের উদ্দেশ্যে ফড়ে-চক্র সক্রিয় হতে পারে—এই আশঙ্কাতেই জেলাভিত্তিক কঠোর নজরদারির নির্দেশ দিয়েছে দপ্তর। এ নিয়ে প্রধান সচিব পারভেজ আহমেদ সিদ্দিকি সহ শীর্ষ আধিকারিকরা ইতিমধ্যেই কয়েকটি জেলায় পরিদর্শনে নেমেছেন।

সরকারের কাছে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে (MSP) ধান বেচলে কুইন্টালপ্রতি প্রায় ৫০০ টাকা বেশি পাওয়া যায়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে কিছু ফড়ে চক্র চাষিদের কাছ থেকে সস্তায় ধান কেনে সরকারি ক্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে বেশি দামে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ। প্রকৃত ছোট ও প্রান্তিক চাষিদের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে তাই কড়া নজরদারি।

লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে কেনা ধান

১ নভেম্বর থেকে এখনও পর্যন্ত মোট ১২ লক্ষ ৬০ হাজার টন ধান কেনা হয়েছে। নভেম্বরে যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ লক্ষ টন, সেখানে কেনা হয়েছে প্রায় ১০ লক্ষ টন—যা স্বাভাবিকের তুলনায় বহু বেশি। গোটা মরশুমে আগামী আগস্ট পর্যন্ত ৬৭ লক্ষ টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের।

সাম্প্রতিক পর্যালোচনা বৈঠকে জানানো হয়েছে, পুরো রাজ্যের নিরিখে এখন পর্যন্ত মোট লক্ষ্যমাত্রার ১৩% ধান কেনা হয়ে গেছে। তবে কয়েকটি জেলায় ক্রয়ের পরিমাণ অস্বাভাবিক দ্রুত বাড়ছে।

যেসব জেলায় গতি বেশি

  • উত্তর ২৪ পরগনা: ২৪%
  • ঝাড়গ্রাম: ২১%
  • উত্তর দিনাজপুর, মালদহ, জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং: ২০%

অন্যদিকে ধান উৎপাদনে শীর্ষে থাকা পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূম ও দক্ষিণ দিনাজপুর—এই চারটি জেলা পিছিয়ে রয়েছে। জেলার ভিত্তিতে এই অসামঞ্জস্যই এখন পরিদর্শনের প্রধান ফোকাস।

দালালচক্র রুখতে নতুন কঠোর ব্যবস্থা

ফড়েদের দৌরাত্ম্য কমাতে এবং প্রকৃত চাষিকে তার ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে খাদ্যদপ্তর—

  • বিক্রেতার বায়োমেট্রিক যাচাই বাধ্যতামূলক
  • একজন চাষি পুরো মরশুমে সর্বোচ্চ ৯০ কুইন্টাল ধান বিক্রি করতে পারবেন
  • একবারে সর্বোচ্চ ১৫ কুইন্টাল পর্যন্ত বিক্রির অনুমতি
  • অনথিভুক্ত বর্গাদারদের জন্যও ধান বিক্রির সুযোগ
  • অস্বাভাবিকভাবে বেশি ধান বিক্রি হলে সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত

ক্রয়কেন্দ্রের সরকারি আধিকারিকদের পাশাপাশি উপস্থিত থাকেন রাইস মিলের প্রতিনিধিরাও। অতীতে কিছু রাইস মিল মালিক এবং সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে ফড়ে চক্রের যোগসাজশের অভিযোগ উঠেছিল। সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই এবার নজরদারি আরও কঠোর করা হয়েছে।

ওয়েস্ট বেঙ্গল রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল মালেক অবশ্য জানিয়েছেন, “ধান ক্রয়কেন্দ্রে যাবতীয় কাজ দেখেন পারচেজ অফিসার এবং সরকারি আধিকারিকরা। কোনও অনিয়ম হলে তার দায়িত্ব তাঁদেরই।”

অস্বাভাবিক ধান বিক্রির প্রবণতা দেখে সরকার যে এবার সতর্ক, তা স্পষ্ট। চাষির স্বার্থ রক্ষায় এবং বেআইনি মজুত বা দালালি আটকাতে জেলাভিত্তিক এই নজরদারি আগামী কিছুদিন আরও জোরদার হবে বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর।

আরও খবর

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.