দীর্ঘ দুই বছরের অপেক্ষার পর অবশেষে জেলমুক্তির পথে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় সব মামলায় জামিন পেয়ে গেলেন তিনি। সোমবার বিকেলে বিশেষ সিবিআই আদালতে আটজন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হওয়ার পরই আদালত তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে।
এদিন আদালত নির্দেশ দিয়েছে, জামিনের শর্ত হিসেবে ৯০ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। আদালত সূত্রে খবর, সেই অর্থ ইতিমধ্যেই জমা পড়ে গিয়েছে। ফলে এখন কেবলমাত্র আনুষ্ঠানিক রিলিজ অর্ডার জেল কর্তৃপক্ষের হাতে পৌঁছনোর অপেক্ষা।
২০২২ সালের ২২ জুলাই শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে ইডি। এরপর থেকে একের পর এক মামলায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ ও বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রাখা হয়।
বহুবার জামিনের আবেদন খারিজ হয়। অবশেষে সেপ্টেম্বর মাসে কলকাতা হাই কোর্টে একটি মামলায় জামিন পান প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। তবে বাকি মামলাগুলির কারণে তিনি মুক্তি পাননি।
এরপর পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন। সর্বোচ্চ আদালত নির্দেশ দেয়, “সিবিআইয়ের তরফে আটজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হওয়ার পরই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।”
সেই নির্দেশ অনুসারে সোমবার বিশেষ সিবিআই আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পূর্ণ হয়। আদালত জানায়, তদন্তের এই ধাপে পার্থর জামিনে আর কোনও বাধা নেই।
আদালতের রিলিজ অর্ডার আলিপুর আদালতের সিজেএমের এজলাসে পাঠানো হবে। সেখান থেকে তা পৌঁছবে প্রেসিডেন্সি জেলে, যেখানে পার্থ বর্তমানে বন্দি। প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলেই প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী জেল থেকে মুক্তি পাবেন।
এই মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পাশাপাশি জামিন পেয়েছেন এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্যও। বর্তমানে তিনি বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাঁর ক্ষেত্রেও মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।
আদালত সূত্রে খবর, মামলার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯, ২২ এবং ২৩ ডিসেম্বর। সিবিআই এখনও পর্যন্ত একাধিক সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করেছে এবং আর্থিক অনিয়ম সংক্রান্ত প্রমাণ সংগ্রহের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে।
২০২২ সালের জুলাই মাসে দক্ষিণ কলকাতার নাকতলার বাড়িতে ইডির তল্লাশি অভিযান চলাকালীন পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হয়। একইসঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়-এর একাধিক ফ্ল্যাট থেকেও বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ ও সম্পত্তির নথি উদ্ধার হয়।
পরবর্তীকালে ইডি এবং সিবিআই পৃথকভাবে মামলার তদন্ত শুরু করে। সেই থেকেই পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিচারবিভাগীয় হেফাজতে ছিলেন।