জেল থেকে মুক্তি পেয়েই রাজনৈতিক ময়দানে ফিরলেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। মঙ্গলবারই বেহালা (পশ্চিম) বিধানসভা কেন্দ্রের বাসিন্দাদের উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি লিখলেন তিনি। এই কেন্দ্রেরই পাঁচবারের বিধায়ক পার্থ, যিনি ২০২২ সালের ২৩ জুলাই এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে জেলবন্দি ছিলেন। দীর্ঘ ৩ বছর ৩ মাস ১৯ দিন পর মুক্তি পেয়ে নিজের কেন্দ্রের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ পুনর্গঠনের উদ্যোগে নামলেন তিনি।
চিঠিতে পার্থ চট্টোপাধ্যায় সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন— “চাকরি দেওয়ার বদলে আমি কার কাছ থেকে টাকা নিয়েছি?”
অভিযোগ, রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের চাকরি পাইয়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে পার্থ দাবি করেছেন, তিনি কোনও অর্থ লেনদেন করেননি। তাঁর কথায়, “আমার সততার ছবিকে যারা মসীলিপ্ত করার চেষ্টা করল— তাদের ছেড়ে দেওয়া সামাজিক অপরাধ।”
বেহালাবাসীর উদ্দেশে তিনি লিখেছেন—“দীর্ঘ কর্মজীবন ও পরিষদীয় জীবনে কেউ আমার সততা নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি। আমার ছবিকে মসীলিপ্ত হওয়ার হাত থেকে উদ্ধার করুন। যদি কেউ আমার নাম করে টাকা নিয়ে থাকে, প্রমাণ-সহ ‘জনবাক্স’-এ জমা দিন, আমি ব্যবস্থা নেব।”
জেল থেকে মুক্তি পেয়েই পার্থ চালু করেছেন তাঁর নতুন উদ্যোগ— ‘জনবাক্স’। এর মাধ্যমে বেহালার সাধারণ মানুষ, বিশেষত শিক্ষাদুর্নীতি নিয়ে ক্ষুব্ধ নাগরিকরা সরাসরি তাঁর কাছে অভিযোগ জানাতে পারবেন। পার্থ জানিয়েছেন, তিনি নিজেই সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখবেন।
চিঠিতে তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, বেহালাবাসীর আশীর্বাদেই তিনি বার বার জিতেছেন। ২০০১ সাল থেকে টানা পাঁচবার ওই কেন্দ্র থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। একসময় বিরোধী দলনেতা, পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তবে ২০২২ সালে গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁর রাজনৈতিক জীবনে ছন্দপতন ঘটে।
নিজের ভাবমূর্তি পুনর্গঠনের পাশাপাশি রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়েও ভাবছেন পার্থ। মঙ্গলবারই তিনি তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে জানতে চেয়েছেন, তাঁকে দল থেকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত কোন নিয়মে নেওয়া হয়েছে। সেই চিঠির অনুলিপি পাঠানো হয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুব্রত বক্সীকেও।
পার্থ জানিয়েছেন, তিনি শীতকালীন অধিবেশনে নির্দল বিধায়ক হিসেবে অংশ নিতে চান। তাঁর কথায়, “আমি বেহালা পশ্চিমের মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। যাঁরা আমাকে সৎমানুষ ভেবে পরপর পাঁচবার ভোটে জিতিয়েছেন, আমি তাঁদের কাছেই বিচার চাইব।”
রাজনৈতিক মহলের মতে, পার্থের এই খোলা চিঠি ও ‘জনবাক্স’ চালুর পদক্ষেপ আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে তাঁর জনসমর্থন যাচাইয়ের কৌশল। পুরনো দলের টিকিট না পেলেও নির্দল প্রার্থী বা অন্য রাজনৈতিক দলের হয়ে ভোটে লড়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।