দেশের সংসদীয় ইতিহাসে বিরল নজির। চলমান অধিবেশনের মধ্যে রাজ্যসভায় একটিও পূর্ণমন্ত্রী উপস্থিত না থাকায় বাধ্য হয়ে অধিবেশন মুলতুবি ঘোষণা করলেন চেয়ারম্যান তথা উপরাষ্ট্রপতি সিপি রাধাকৃষ্ণণ। শুক্রবার সংসদ হামলার ২৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে রাজ্যসভার সদস্যরা নিহত নিরাপত্তারক্ষীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের পরই বিরোধীরা লক্ষ্য করেন, উচ্চকক্ষে কোনও পূর্ণমন্ত্রী নেই—যা নিয়মবিরুদ্ধ। কারণ বিধি অনুযায়ী একজন পূর্ণমন্ত্রীর উপস্থিতি ছাড়া অধিবেশন চালানো যায় না।
বিষয়টি তৎক্ষণাৎ চেয়ারম্যানের নজরে আনেন বিরোধী সাংসদরা। তাঁরা অনুরোধ জানান অন্তত একজন পূর্ণমন্ত্রীকে অবিলম্বে রাজ্যসভায় উপস্থিত রাখার জন্য। পাশাপাশি তাঁরা পরিষ্কার জানিয়ে দেন—কোনও মন্ত্রী না ফিরে আসা পর্যন্ত অধিবেশন মুলতুবি করা হোক। বিষয়টির গুরুত্ব স্বীকার করেন চেয়ারম্যানও এবং সঙ্গে সঙ্গে এক প্রতিমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন কোনও পূর্ণমন্ত্রীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে। কিন্তু পাঁচ মিনিট অপেক্ষার পরও উচ্চকক্ষে কোনও মন্ত্রী উপস্থিত হননি। এরপর বাধ্য হয়ে রাধাকৃষ্ণণ অধিবেশন মুলতুবি ঘোষণা করেন। প্রায় ১০ মিনিট ধরে কোনও মন্ত্রী না থাকার ফলে সভা স্থগিত থাকে।
সরকারি পক্ষের এই পরিস্থিতিকে সংসদের মর্যাদাহানির সমতুল্য বলে দাবি করছে বিরোধী দলগুলি। কংগ্রেস নেতা জয়ারাম রমেশ মন্তব্য করেছেন, “এটা সভার অপমান।” বিরোধীদের অভিযোগ—যে অধিবেশনের জন্য সরকারি কোষাগার থেকে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয়, সেখানে সরকারের পূর্ণমন্ত্রীদের এই উদাসীনতা উদ্বেগজনক এবং সংসদীয় প্রথাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়। স্রেফ মন্ত্রী না থাকার কারণে অধিবেশন মুলতুবি—এমন ঘটনা সংসদের সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় শোনা যায়নি।
ঘটনা শুধু অপমান নয়, সরকারি পক্ষের সমন্বয়হীনতা ও নিষ্ক্রিয়তারও ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে দাবি বিরোধীদের। সংসদ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংসদের নিয়ম রক্ষার দায়িত্ব সরকারের, এবং এই ব্যত্যয় একটি বড় সংকেত যে উচ্চকক্ষকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। এই ঘটনা নিয়ে আগামী দিনেও রাজনৈতিক মহলে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হওয়া নিশ্চিত।