ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা (বিএনএসএস) অনুযায়ী দেশে ইলেকট্রনিক এফআইআর চালুর নির্দেশ থাকলেও বাস্তবে তা কার্যকর করতে গিয়ে একাধিক আইনি ও প্রযুক্তিগত জটিলতা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এই পরিস্থিতিতে ই-এফআইআর ব্যবস্থার সম্ভাব্য সমস্যা, সুবিধা–অসুবিধা এবং ভুয়ো অভিযোগের মতো বিষয় নিয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা শুরু করেছে রাজ্য পুলিশ। পুলিশ কর্তাদের মতে, সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গা ভুয়ো অভিযোগ। অনলাইনে অভিযোগ জমা পড়লে অভিযোগকারীকে সরাসরি দেখার সুযোগ থাকে না, ফলে তাঁর পরিচয় যাচাই কঠিন হয়ে পড়ে। কেউ যদি মিথ্যা অভিযোগ করেন, তাহলে তাঁকে কীভাবে শনাক্ত করা হবে, হাজিরা না দিলে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে—এসব বিষয়ে এখনও কোনও স্পষ্ট আইনি নির্দেশ নেই। এই ফাঁক ভরাট করতেই রাজ্য একটি নির্দিষ্ট গাইডলাইন ও এসওপি তৈরি করতে চলেছে, যাতে সমস্ত থানা統ভাবে কাজ করতে পারে।
অন্যদিকে পুলিশ কর্মকর্তাদের একাংশ মনে করছেন, অপহরণের মতো গুরুতর অপরাধে পরিবারের সঙ্গে সামনাসামনি কথা বলা অত্যন্ত জরুরি। সময় অত্যন্ত মূল্যবান হওয়ায় মুখোমুখি বক্তব্য না পেলে তদন্ত পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়া রাজ্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এখনও দুর্বল ইন্টারনেট পরিষেবা বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। বহু গ্রামীণ এলাকায় নেটওয়ার্ক সমস্যা থাকায় e-FIR ব্যবস্থায় অভিযোগ নথিভুক্ত করতে দেরি হতে পারে। পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলের বহু মানুষ প্রযুক্তি ব্যবহারে সড়োগড়ো নন, ফলে তাঁরা এই ব্যবস্থাকে কতটা ব্যবহার করবেন, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।
ই-এফআইআর চালুর ক্ষেত্রে ডেটা সুরক্ষাও বড় উদ্বেগের বিষয়। অভিযোগকারীর ব্যক্তিগত তথ্য ডিজিটাল মাধ্যমে সংরক্ষণ হওয়ায় সাইবার হ্যাকিং বা ডেটা লিকের ঝুঁকি থেকেই যায়। এতে ভুক্তভোগীর নিরাপত্তা বরং আরও বিপন্ন হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন কর্তারা। এর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বারবার রাজ্যগুলিকে e-FIR চালুর প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তুলতে তাগিদ দিচ্ছে। যদিও এখনও কোনও রাজ্য পূর্ণমাত্রায় এই ব্যবস্থা চালু করতে পারেনি; গত মে মাসে দিল্লি পুলিশ শুধু পাইলট প্রকল্প চালু করেছে।
এই অবস্থায় রাজ্য পুলিশ ভুয়ো অভিযোগ প্রতিরোধে প্রযুক্তিগত নজরদারি তৈরির কাজ শুরু করেছে। কোন কম্পিউটার বা মোবাইল থেকে মিথ্যা অভিযোগ পাঠানো হয়েছে, সেই ডিজিটাল সূত্র ধরে যাতে অভিযোগকারীকে শনাক্ত করা যায়—সে বিষয়েও পরিকাঠামো তৈরির পরিকল্পনা চলছে। মোটের উপর রাজ্য পুলিশের লক্ষ্য, e-FIR ব্যবস্থা চালুর আগে আইনি ফাঁকফোকরগুলি দূর করা এবং একটি নির্দিষ্ট, নিরাপদ ও কার্যকর কাঠামো তৈরি করা, যাতে অনলাইন অভিযোগ ব্যবস্থা সাধারণ মানুষের জন্য সুবিধাজনক হওয়ার পাশাপাশি তদন্তেও কোনও বিঘ্ন না ঘটে।