আগামী বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্য জুড়ে জনসংযোগ আরও জোরদার করতে নতুন কর্মসূচি হাতে নিল তৃণমূল কংগ্রেস। দলের দাবি—সাড়ে ১৪ বছরের উন্নয়নের খতিয়ানই হবে ভোটের মূল অস্ত্র। সেই লক্ষ্যেই ‘উন্নয়নের পাঁচালি’ শোনাতে এবার বুথ ভিত্তিক জনসংযোগে নামছে শাসক দল।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, বিধানসভা ভিত্তিতে দল গঠন করে এক মাসব্যাপী প্রচার কর্মসূচি চালানো হবে। দলের শীর্ষ নেতারা এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরবেন। ছোট গাড়িতে করে এলাকায় এলাকায় চলবে প্রচার, যেখানে বাজবে ইমন চক্রবর্তীর গাওয়া ‘উন্নয়নের পাঁচালি’।
এই কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবে দুপুরে স্থানীয় মানুষের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজন করবেন নেতারা। সন্ধ্যায় থাকবে স্থানীয় সংস্কৃতি নির্ভর অনুষ্ঠান এবং জনসংযোগ সভা। লক্ষ্য—ভোটের আগে সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ আরও মজবুত করা।
তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প ঘোষণার পরই রাজ্যের রাজনৈতিক ছবিটা বদলে যায়। সেই নির্বাচনে বিপুল জয় বুঝিয়ে দেয়, প্রকল্পটি কার্যত গেমচেঞ্জার হয়েছে। গত লোকসভা ভোটের আগেও ভাতার অঙ্ক বাড়িয়ে প্রকল্পটির জনপ্রিয়তা ফের যাচাই করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আগামী বিধানসভা ভোটের আগে হাতে রয়েছে আর কয়েক মাস। তার আগেই রাজ্যে তৃণমূল সরকারের সাড়ে ১৪ বছরের উন্নয়নের হিসাব জনতার সামনে তুলে ধরার কৌশল নিয়েছে দল।
২০১১ সালের মে থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষিত বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রগতি জেলা ভিত্তিতে তুলে ধরে একটি প্রচারপুস্তিকা তৈরি করেছে তৃণমূল। ভোটের প্রচারে সেই পুস্তিকা নিয়েই বুথে বুথে, বাড়িতে বাড়িতে যাবেন দলের নেতা-কর্মীরা। পুস্তিকার প্রথম পাতায় বড় করে লেখা— ‘উন্নয়নের নজির’। বিভিন্ন দফতর ধরে গত তিন বছরে জেলায় কী কী উন্নয়ন হয়েছে, তার বিস্তারিত তথ্য সেখানে তুলে ধরা হয়েছে।
তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বের বক্তব্য, বিরোধীরা যখন নারী নির্যাতন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি বা দুর্নীতির অভিযোগ তুলে প্রচার চালাচ্ছে, তখন শাসক দলের হাতিয়ার উন্নয়ন। তাঁদের দাবি, মানুষ এখন আর শুধু প্রতিশ্রুতি বা বড় বড় কথায় বিশ্বাস করেন না। তাঁরা চান নিজেদের এলাকায় কী উন্নয়ন হয়েছে, তা চোখে দেখতে। মুখ্যমন্ত্রী সেই কাজটাই করেছেন এবং সেই উন্নয়নের কথাই মানুষের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে।
অন্যদিকে, বিরোধী দলগুলিও পাল্টা প্রচারে নেমেছে। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর জেলায় একের পর এক ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে শাসক দলকে আক্রমণ করছে তারা। বিরোধীদের দাবি, উন্নয়নের তালিকা বাস্তবের তুলনায় অনেকটাই বেশি প্রচারের ভাষায় সীমাবদ্ধ।
ভোটের ময়দানে তাই একদিকে উন্নয়নের হিসাব, অন্যদিকে অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ—এই দ্বন্দ্বেই ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে বাংলার রাজনৈতিক আবহ।