তৃণমূল থেকে অবশেষে সাসপেন্ড হলেন মুর্শিদাবাদের ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। বৃহস্পতিবার কলকাতায় তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান কলকাতার মেয়র তথা নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন মুর্শিদাবাদের দুই নেতা—বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী আখরুজ্জামান ও হরিহরপাড়ার বিধায়ক নিয়ামত শেখ। তাঁরা এই সিদ্ধান্তকে ‘যথার্থ’ বলেই মন্তব্য করেন।
বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিন—৬ ডিসেম্বর—বেলডাঙায় নতুন বাবরি মসজিদ নির্মাণের ঘোষণা করেছিলেন হুমায়ুন। এই ঘোষণা দলের নীতি, অবস্থান ও ধর্মীয় সম্প্রীতির পরিপন্থী—এই অভিযোগেই ক্রমশ দূরত্ব বাড়ছিল তাঁর সঙ্গে তৃণমূল নেতৃত্বের। নিজ অবস্থান থেকে না সরে দাঁড়াতেই শেষমেশ তাঁকে দল থেকে ছেঁটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
যদিও হুমায়ুন দাবি করেছেন, তাঁকে সাসপেন্ড করার কোনও চিঠি এখনও তাঁর হাতে পৌঁছয়নি। তাঁর কথায়, “অপেক্ষা করুন, অনেক কিছু বলার আছে। আমাকে চক্রান্ত করে সাসপেন্ড করা হয়েছে। ২২ ডিসেম্বর নতুন দল ঘোষণা করব। ১৩৫ আসনে প্রার্থী দেব।”
সাংবাদিক বৈঠকে ফিরহাদ হাকিম বলেন, “কেউ মসজিদ তৈরি করতেই পারেন। কিন্তু ধর্মীয় ভাবাবেগ উস্কে দিয়ে রাজনৈতিক মাইলেজ নেওয়া আমরা সমর্থন করি না। এতে রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হতে পারে। দায়িত্বশীল রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে এটি মেনে নেওয়া যায় না।”
ফিরহাদের দাবি, হুমায়ুনের ঘোষণায় বিজেপিরই লাভ হতো। তাই দলের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ঘটনাচক্রে, বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতার সভায় উপস্থিত ছিলেন হুমায়ুন। ঠিক সেইসময়ই কলকাতা থেকে সাসপেনশনের খবর পৌঁছয় সভাস্থলে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বহরমপুরের সভা মঞ্চ থেকে বেরিয়ে আসেন এবং সাংবাদিকদের জানান, “শুক্রবার বা সোমবার বিধায়ক পদ ছাড়ব।”
উল্লেখযোগ্য, এটি হুমায়ুনের প্রথম সাসপেনশন নয়। ২০১৫ সালেও তাঁকে ৬ বছরের জন্য তৃণমূল থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। তারপর তিনি কখনো কংগ্রেস, কখনো বিজেপি এবং পরবর্তীতে আবার তৃণমূলে ফিরে আসেন। ২০২১ সালে ভরতপুর থেকে তৃণমূলের টিকিটে জিতে বিধায়ক হন। কিন্তু এরপরও একাধিক বিতর্কিত মন্তব্যে দলের রোষের মুখে পড়তে থাকেন তিনি।
বিধানসভা ভোটের আগে কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নয় তৃণমূল। দলের মতে, হুমায়ুনের সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক মন্তব্য শাসকদলের অবস্থানকে দুর্বল করছে এবং সরাসরি বিজেপিকে শক্তি জোগাচ্ছে। তাই তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করাই হয়েছে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।