পশ্চিমবঙ্গে বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর)-এর এনুমারেশন পর্ব শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। এ বার পরবর্তী ধাপে এগিয়ে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ। আগামী মঙ্গলবার ওই খসড়া তালিকা প্রকাশ করবে কমিশন। তার আগে চূড়ান্ত পর্যায়ে চলছে তালিকা প্রস্তুতির কাজ। কমিশন সূত্রে খবর, সূচি মেনে সোমবারের মধ্যেই খসড়া তালিকা তৈরির কাজ শেষ করা হবে, যাতে মঙ্গলবার থেকেই ভোটারেরা নিজেদের নাম যাচাই করতে পারেন।
রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর ইতিমধ্যেই জেলাস্তরে পৃথক ওয়েবসাইট প্রকাশ করেছে। সংশ্লিষ্ট জেলার ভোটারেরা সেখানে ঢুকে নিজেদের নাম খসড়া তালিকায় রয়েছে কি না, তা দেখতে পারবেন। কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, অনলাইনের পাশাপাশি প্রয়োজন হলে অফলাইনেও তালিকা যাচাইয়ের সুযোগ থাকবে।
উল্লেখ্য, গত ২৭ অক্টোবর রাজ্যে এসআইআরের দিনক্ষণ ঘোষণা করেছিল নির্বাচন কমিশন। সে দিন পর্যন্ত রাজ্যে মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৬৬ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫২৯। কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এই সব ভোটারের নামেই এনুমারেশন ফর্ম ছাপানো হয়েছিল এবং বুথ স্তরের অফিসাররা (বিএলও) প্রত্যেক ভোটারের কাছেই সেই ফর্ম পৌঁছে দেন। রবিবার পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মোট ভোটারের তালিকা থেকে নাম বাদ পড়েছে ৫৮ লক্ষ ২০ হাজার ৮৯৮ জনের। বাকিদের নাম খসড়া তালিকায় ওঠার কথা।
কমিশন জানিয়েছে, যাঁরা কেবল এনুমারেশন ফর্মে সই করে জমা দিয়েছেন, তাঁদের নামও খসড়া তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সেই হিসাবে প্রাথমিক ভাবে প্রায় ৭ কোটি ৮ লক্ষ ভোটারের নাম খসড়া তালিকায় থাকতে পারে। তবে কমিশন স্পষ্ট করেছে, খসড়া তালিকায় নাম থাকলেই তা চূড়ান্ত বলে ধরে নেওয়া যাবে না। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আগে প্রত্যেকের তথ্য যাচাই করা হবে।
কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩০ লক্ষ ভোটার ‘নো-ম্যাপিং’ তালিকায় রয়েছেন। অর্থাৎ, তাঁদের নামের সঙ্গে ২০০২ সালের ভোটার তালিকার কোনও যোগসূত্র পাওয়া যায়নি। এই সব ভোটারদের প্রত্যেককেই শুনানিতে ডাকা হবে। আগামী বুধবার থেকেই প্রথম পর্যায়ে এই ৩০ লক্ষ ভোটারের শুনানি শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এ ছাড়া আরও প্রায় ১ কোটি ৭০ লক্ষ ভোটারকে ‘সন্দেহভাজন’ তালিকায় রেখেছে কমিশন। অর্থাৎ, মোট প্রায় ২ কোটি ভোটারের তথ্য নিয়ে আপাতত সংশয়ে রয়েছে নির্বাচন কমিশন। খসড়া তালিকা প্রকাশের পরে এই সব ভোটারের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিএলও-রা তথ্য যাচাই করবেন। তারপরেও যদি সংশয় থেকে যায়, সংশ্লিষ্ট ভোটারকে চিহ্নিত করে শুনানির জন্য ডাকা হবে। শুনানিতে প্রয়োজনীয় নথি পেশ করে উত্তীর্ণ হলে তবেই নাম অন্তর্ভুক্ত হবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকায়।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করে আগামী বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। তার আগের এই সময়টিকে ভোটারদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে কমিশন, কারণ খসড়া তালিকা যাচাই করেই নিজেদের নাম নিশ্চিত করার সুযোগ পাবেন তাঁরা।