আসন্ন শারদীয়া উৎসবের অগ্রিম শুভ কামনা…

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

ঠিক এই সময়ে আকাশের পথে পথে মেঘেদের পায়চারি। আবার কখনো কখনো পথচলতি মেঘেদের গায়ের ঘাম, চোখের জল ঝরে পড়ছে মাটির টানে মাটির নকশীকাঁথায় ঝিরঝিরিয়ে বা ঝমঝমিয়ে বৃষ্টির ফোঁটা।

না দেখা, কিন্তু অনুভবে পাওয়া শরতীয়া হাওয়া ছুটতে ছুটতে চলে যায় দূর বহুদূর…সে কোন অজানার অচিনপুরে। আবার কখনো কখনো ইচ্ছে হাওয়ায় দুলে ওঠে রেললাইনের দু’পাশ বরাবর,পুকুরের পাড়ে পাড়ে, জঙ্গলা বনের আড়েধারে সাদা সিধে কাশ ফুলের ঝালরে ঝালরে। শারদীয়া ভোরের শিউলিতলায় পেতে রাখা ঘাসেদের সবুজ অবুঝ চাতালে টুকটাক টুপটাপ ঝরে পড়ে দোদুল দুল শিউলি ফুলগুলি।

সময়ের মেজাজে শারদীয়ার পরশখানি লেগে থাকে সারাক্ষণ। গাছেদের আর গাছ-গাছালির পাতাদের নরম লাজুক বুকে পাতা ঝরানোর দুরুদুরু ভাব শুরু হয়ে গেছে কে জানে কখন!

তা-ই তো মন বলে ওঠে… শরৎ এসে গেছে…এসে গেছে সে বাংলার মাঠে ঘাটে,ঘর-দোরে,ব্যস্ত দিনের খাটা খাটনিতে জুড়ে থাকা সকলের মনে মনে। যার যা যা,যেমন তেমন ক্ষমতা তাই নিয়ে কেনাকাটায় ছুটির দিনে ছোটাছুটি,দোকানে দোকানে,পসরায় পসরায় ভিড়ের থইথই…। কারন শরৎ এসে গেছে।

চারিদিকে উৎসবের পুজো পুজো ভাব, ইচ্ছে আর সামর্থ্য-এর অভাব তারই মাঝে কোথাও কোথাও। এইসব নিয়েই আশ্বিনের আবাহন। ক্যালেন্ডারের পাতায় চলে আসে ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসব..স্থাপত্যের দেবতা,বন্ধ কারখানার আশা-ভরসা, আটপৌরে সাইকেল সারানোর দোকানে, রিক্সা,টোটো, বাস,টাক্সি,লরি,টেম্পো,ঠ্যালা গাড়ির অভাবী স্ট্যান্ডে একটুখানি আনন্দের উচ্ছ্বাসে বিশ্বকর্মা এসে বসেন হাতির গায়ে ঠেসান দিয়ে, তারস্বরে মাইক চলে, ধবধবে-ঝকঝকে পোশাকে সেজে ঘোরাঘুরি করে আয়োজকেরা…,বিশ্বকর্মাই জানিয়ে দেয় পুজো আসছে…,আর এই পুজো তো পুজো নয়..এ হোল আমাদের জীবনের শরতের মন মাতানো উৎসব….। যা নিয়ে আসে সেই কবে থেকে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের স্তোত্র কণ্ঠস্বরের ওঠা-নামায় ধ্বণিত হয়… “আজ আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে নব মঞ্জীর,ধরনীর নীলাকাশে…” সাথে সাথে ভোরের দিগন্ত সীমায় সীমারেখার গণ্ডি অতিক্রম করে ভেসে যায় কবেকার সেই বারবার শোনা, অথচ চিরনতুন গানের সুরের মুর্ছনা… কাছে থেকে দূরে বহুদূরে… “বাজলো তোমার আলোর বেনু,মাতলো রে ভুবন..”, কিম্বা ” সিংহস্থা শশীশেখরা মরকত প্রেক্ষা..”, আবার “জাগো তুমি জাগো…”র মতো চিরন্তনী আগমনীর আগমন বার্তা।

সারাবছরের মুখিয়ে থাকা অপেক্ষার বোধহয় আর এক নাম শারদীয়া উৎসব।অনেক দুঃখ দুর্দশার মধ্যেও ক’টাদিনের একটুখানি আনন্দ,খুশীর নামই বোধহয় শারদীয়া দুর্গাপুজো।

বিগত দুটো বছরের মহামারির অনেক বিধিনিষধের পরে সেই পুজো,সেই উৎসব এ বার উন্মুক্ত অবস্থায় বাংলা ও বাঙালির ঘরের দোরগোড়ায়….। সেখানে কোনো জাত-পাত নেই,কোনো ধর্ম সম্প্রদায় নেই,কোনও দ্বিধা-দ্বন্দ নেই…,আছে শুধু আনন্দ আনন্দ আর আনন্দ। পারস্পরিক মহামিলন।

প্রার্থনা করি সকলে আনন্দে আর খুশিতে কাটাক আসন্ন মহালয়া,শারদীয়া উৎসবের দিনগুলি।

সবাই সপরিবারে, সবান্ধবে ভালো থাকুন। খুব ভালো থাকার শুভ কামনা রইল।

Related posts

আমাদের দেশ, আমাদের দ্বেষ-বিদ্বেষ এবং রবীন্দ্রনাথ

কিন্তু মৃত্যু যে ভয়ংকর, সে-দেহে তাহার কোন প্রমাণ ছিল না

২৭ শে এপ্রিল মানে জাগা, জেগে থাকা, জাগানো…