মানব সভ্যতা সেদিন কেঁদেছিল

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

আজ থেকে ৭৭ বছর আগে, ১৯৪৫ সালের ৬ই আগস্টের সকাল জাপানের একটি ছিমছাম শহরের ঘড়িতে সময়। তখন সকাল ৮ টা ১৫ মিনিট।

অন্যান্য দিনের মতো শহরের নানা বয়সের মানুষ নিত্যদিনের কাজে ব্যস্ত। হঠাৎ  আকাশে একটা কালো মেঘের মত সব কিছু ঢেকে দিচ্ছে দেকজা গেলো। আর যারা ঘরের বাইরে বা ঘরের মধ্যে ছিল,সকলেরই সারা গায়েতে জ্বালা ধরানো একটা অদ্ভুত রকমের অনুভুতি হচ্ছিল। নিঃশ্বাস নিতে কষ্টও হচ্ছিল,কেউ কেউ রাস্তায়, ঘরের মধ্যে এলিয়ে পড়ছিল,পরে জানা গিয়েছিল  যে,তারা মারাই গিয়েছিল।সবাই ভয়ে আতঙ্কে সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিল।

এইরকম পরিস্থিতি কেন হোল?সবাই ভাবতে শুরু করল।দেখল আকাশ থেকে একটা গরম হলকা নেমে আসছে শহরটির ওপরে। ছেয়ে ফেলছে চারিদিক।

আসলে সেই সময়ে চলছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আর সেই অবস্থায় আমেরিকার যুদ্ধবাজরা জাপানের সেই শহরে, যার নাম হিরোশিমা… সেখানে সেদিন ফেলেছিল  একটি পারমাণবিক বোমা। এটির শক্তি ছিল প্রায় ১২ থেকে ১৫ হাজার টন TNT বিস্ফোরণ ক্ষমতার সমান। চারিদিকে ৪ কিলোমিটার রেডিয়াসকে কেন্দ্র করে এই বোমার বিষক্রিয়া  ছড়িয়ে  পড়েছিল অনেক দূর।  সেই রেডিয়াসের মধ্যে যা কিছু ছিল সবই মাটির সঙ্গে মিশে গিয়েছিল।চোখের নিমেষে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল শহরের অধিকাংশ জায়গা। আমেরিকা এই বোমাটির নাম দিয়েছিল  “লিটল বয়”।

এরপর তিনদিনের মাথায় ৯ই আগস্ট, ১৯৪৫ সালেই সকাল ১১টা বেজে ২ মিনিটে আমেরিকা জাপানের নাগাসাকি শহরে দ্বিতীয় পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করেছিল। সঙ্গে সঙ্গেই পুরো শহরটি পুড়ে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়ে গিয়েছিলো।

সেই বোমাটির ওজন ছিল ৪হাজার ৬৩৩ কিলোগ্রাম।

নাম ছিল “ফ্যাটম্যান”। মাটি থেকে ৫০০ মিটার ওপরে বিস্ফোরণ হয়। নিমেষেই কেড়ে নিয়েছিল ৭৪ হাজার তরতাজা প্রাণ।

এই দুটি শহরে পারমাণবিক বোমার তেজস্ক্রিয়তা আজও রয়েছে। এই দুটি শহরে ১৯৫০/৫৫ সাল অবধি মানুষ মারা গিয়েছিল হিরোশিমাতে ২লক্ষ ৫০ হাজার,আর,নাগাসাকিতে ৩ লক্ষ ৪০ হাজার জন।

কান্না,আর্তনাদ,স্বজন হারানোর শোক,যন্ত্রণা সেদিন জাপানবাসী সহ সারা বিশ্ববাসীকে কিংকর্তব্যবিমুঢ় করে দিয়েছিল।

বোমা হামলার এতো বছর পরেও সেখানে আজও বিকলাঙ্গ শিশু জন্মায়।সেখানে ঘরে ঘরে ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত মানুষ।

সারা বিশ্বেও আজ সমস্ত দেশে ক্যান্সার রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির অবশ্যই অন্যতম কারন হোল এই পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ।

তাই মানুষের বাসযোগ্য হয়ে উঠুক আমাদের শান্তির এই পৃথিবী।এই প্রার্থনা রেখে যাই আজ নাগাসাকি হিরোশিমার ইতিহাসকে সাক্ষী রেখে।

Related posts

কিন্তু মৃত্যু যে ভয়ংকর, সে-দেহে তাহার কোন প্রমাণ ছিল না

২৭ শে এপ্রিল মানে জাগা, জেগে থাকা, জাগানো…

‘কলকাতার যীশু’, ‘উলঙ্গ রাজা’, ‘অমলকান্তি’-র প্রণেতা, শতবর্ষী কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী