এখনকার একটি জ্বলন্ত সমস্যা ‘ডিপফেক’ অডিও, ভিডিও, সচেতন থাকুন

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

ইদানিং খবরে জানা যাচ্ছে যে, বিভিন্ন মানুষ শিকার হচ্ছেন এই ডিপফেক অডিও এবং ভিডিও দ্বারা। সম্প্রতি এর শিকার হয়েছেন বলিউড অভিনেত্রী ক্যাটরিনা কাইফ, কাজল, রশ্মিকা মান্দানা, প্রমুখরা। এমনকি সচিন তেন্ডুলকরের মেয়ে সারা তেন্ডুলকরের জীবনেও ঘটেছে এই ঘটনা। নামকরা ব্যাক্তিদের পাশাপাশি প্রতিদিন শত শত অনামী ব্যক্তিদের ছবি থেকে যায় নেটদুনিয়ায়। এনারা সকলেই সেই প্রতারণার শিকার হন অনেক সময়ে।

ডিপফেক কি জিনিস? ডিপফেক হলো হুবুহু ন্যাচারাল দেখতে, কিন্তু আসলে তা নকল বা কিছুটা পরিবর্তন করা কন্টেন্ট , যা ভিডিও বা অডিও করে,তা এডিট করে তৈরি করা হয়। এই ডিপফেকের মাধ্যমেই artificial Intelligence (AI বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) technology ব্যবহার করা হয়। একজন ব্যক্তির মুখের ছবি বা তার কন্ঠস্বরকে অন্য কারোর সাথে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় সাজিয়ে গুজিয়ে বিশ্বাসযোগ্য আকারে প্রতিস্থাপন করা হয়। Deep learning এবং fake–এই দুটো শব্দের সংমিশ্রণে নতুন শব্দ “deep fake”- এর জন্ম। মোদ্দাকথায় যা আসলে artificial media content বা synthetic media.

সোস্যাল মিডিয়া জুড়ে এখন ডিপফেকের রমরমা, ছড়াছড়ি। এই ডিপফেক টেকনোলজি ব্যবহার করে বিভিন্ন পর্নোগ্রাফি ভিডিও প্রচার,সেক্সটরশন,বাচ্ছাদের সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্টের উপাদান,জাল বা ফেক খবর,ফ্রডিং বা প্রতারণা, গুন্ডামি ও আর্থিক প্রতারণা, জালিয়াতি ক্রমশ বেড়েই চলেছে। অল্পবয়সী ছাত্র-ছাত্রী থেকে প্রাপ্তবয়স্করাও এই সব ডিপফেকের শিকার হচ্ছেন। সামাজিক বা পারিবারিক ভয়,লজ্জা ইত্যাদি কারণে অল্প কিছু ঘটনা খবরে এলেও সিংহভাগ ঘটনার খবর আড়ালেই থেকে যায়। আর সেইসব ক্ষতিগ্রস্ত, প্রতারিত এবং গভীর চক্রান্তের শিকার হয়ে যাওয়া মানুষগুলি নিজেরা হীনমন্যতায় আক্রান্ত হন।

এই অবস্থায় সারা দেশ জুড়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে, যে এই আধুনিক যুগের সোস্যাল মিডিয়ায় এই ডিপফেকের দৌরাত্ম্য কি চলতেই থাকবে? এর কি কোন সমাধান বা রাশ টানার বা যারা এই কাজ করে তাদের কড়া শাস্তি বিধানের কোন উপায় নেই? নেই কি কোনও রকমের আইন? বাস্তবে সমস্ত কিছু জেনে বুঝেও “গুগল” বা “মেটা” ঠুটোঁ জগন্নাথের মত হাত গুটিয়ে বসে আছে।তাদের ভুমিকা অত্যন্ত নিন্দনীয়।

সারাবিশ্বে উন্নত দেশগুলোতে এই অসভ্য,অভব্য ডিপফেক অপরাধের শাস্তিবিধানের জন্য কড়া আইন তৈরি হয়েছে।বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সোস্যাল মিডিয়াতে এইসব ডিপফেকের প্রচার।

আমাদের দেশেও সেই ব্যবস্থা চালু হোক,এটাই আমরা চাই।তৈরি হোক কড়া আইন।ডিপফেক যারা তৈরি করে,এবং তা প্রচার করে, তাদের খুঁজে বার করে সেইসব অপরাধীদের কড়া এবং উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হোক। এর পাশাপাশি আমাদেরও অত্যন্ত সচেতন থাকতে হবে এইসব ব্যাপারে। সজাগ থাকতে হবে এই বিষয়টিতে। তবেই কিন্তু আমাদের সমাজ থেকে এই অপরাধ দূর হবে।হঠাৎ কোন এই ধরনের খবর,অডিও, ভিডিও যাচাই না করে,সত্যাসত্য না জেনে সোস্যাল মিডিয়াতে আমাদের পরিচিতদের শেয়ার করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।আর কেন্দ্র রাজ্য সরকারের দায়িত্ব এই ডিপফেকের চক্রান্তে যারা জড়িত তাদের কঠোর শাস্তির আইন প্রনয়ণ করা অবিলম্বে।

সকলে সচেতন থাকুন,সতর্ক থাকুন,সজাগ থাকুন।

Related posts

আমাদের দেশ, আমাদের দ্বেষ-বিদ্বেষ এবং রবীন্দ্রনাথ

কিন্তু মৃত্যু যে ভয়ংকর, সে-দেহে তাহার কোন প্রমাণ ছিল না

২৭ শে এপ্রিল মানে জাগা, জেগে থাকা, জাগানো…