১৬ ই ডিসেম্বর বাঙালির এক ঐতিহাসিক জয়ের দিন

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

বাঙালির হাজার হাজার বছরের পরাধীনতার,গোলামীর ইতিহাস। বহু আত্মত্যাগের আর আত্মবলিদানের বিনিময়ে সুদীর্ঘ আন্দোলনের পরে ১৯৪৭ সালে অখণ্ড ভারতবর্ষের স্বাধীনতারপ্রাপ্তি হয়েছিল। কিন্তু, দেশীয় কিছু নেতার অপরিণামদর্শীতার জন্য এবং ইংরেজ শাসকের ষড়যন্ত্রের কারণে এই দেশ দ্বিখন্ডিত হয়। ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি বা দ্বিধর্মীয় তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারতকে দু-টুকরো করে স্বাধীনতা প্রাপ্ত হয় আর জন্ম হয় পঞ্জাবকে এবং এই বাংলাকে খণ্ডিত করে পাকিস্তান নামক একটি রাষ্ট্র। যার শাসনে চলে যায় এই বাংলার পূর্ববঙ্গ অঞ্চলটি।

তারপর থেকেই শুরু হয়েছিল পাকিস্তানের শোষণ এবং শাসন এই পূর্ব বাংলার বাংলা ভাষার মানুষদের ওপর। শুরু হয় ভাষার প্রতি আক্রমণ, জাতিসত্তার প্রতি অসম্মানিত অত্যাচার,ইত্যাদি ইত্যাদি। এর বিরুদ্ধে জনরোষ তৈরি হয়ে আসছিল গত শতকের সেই ৫০ এর দশকের শুরু থেকেই। পুঞ্জীভূত হচ্ছিল বাঙলার মানুষের ক্ষোভ। জন্ম নিয়েছিল ভাষা আন্দোলনের পটভূমিকা ১৯৫২ সালে। সৃষ্টি হয়েছিল ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির সেই ঐতিহাসিক ভাষা শহিদের আত্মবলিদান, এইভাবে দীর্ঘদিন চলার পরে পাকিস্তান রাষ্ট্র দ্বারা একের পর এক অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন পূর্ব বাংলার জনগণ।নেতৃত্বে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান, তাজুদ্দিন আহমেদ, মৌলানা ভাসানী,মনি সিংহ,বাঘা সিদ্দিকি প্রমুখরা।

১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চের কালো রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পূর্ব বাংলার সাধারণ  মানুষের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে  এবং নিষ্ঠুরতম ভাবে হত্যালীলার চরম অবস্থার সৃষ্টি করে। শুরু হয় খুন,ধর্ষণ,অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি ইত্যাদি।

লক্ষ লক্ষ বিভিন্ন বয়সের নারী অমানবিকভাবে ধর্ষিতা হন, লক্ষ লক্ষ মানুষকে নির্মমভাবে গুলি করে,বেয়নেটের দ্বারা খুন করা হয়,মহল্লায় মহল্লায় আগুন ধরিয়ে দিয়ে ঘর বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়,আরো কতো নৃশংস সেই সব অত্যাচারের কাহিনি। ৩০ লক্ষেরও বেশি বাঙালি সেদিন আত্মবলির শিকার হয়েছিলেন। মুজিবর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ ডাক দিলেন ” মরতে হলে মরবো,কিন্তু এই দেশ যার নাম বাংলাদেশ,সেই দেশ আর কখনো খান্ সেনাদের বশ্যতা স্বীকার করবা না,চলো আমার ভাই বোনেরা যার যা ঘরে আছে তাই নিয়া ঝাঁপিয়ে পড়ো লড়বার জন্য। ওদের কাউকেই ছাড়বা না। আর যারা এদেশে থেকেও ওদের হয়ে কাজ করছে, সে রাজাকারদেরও একদম ক্ষমা করবা না স্বাধীনতা আমাদের আনতেই হবে।”

সে এক উত্তাল সময়।সে এক ইতিহাসের অমোঘ লেখনীর সময়। আমাদের দেশ ভারতবর্ষ সর্বোতভাবে সেদিন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল সেই লড়াইয়ে,বাংলার মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে।

অবশেষে ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর ভারতের ইষ্টার্ন কম্যান্ডের জি.ও.সি. মেজর জগজিৎ সিং অরোরার কাছে পাকিস্তানের সেনা প্রধান মেজর নিয়াজী খান্ আত্মসমর্পণ করে। এবং জন্ম হয় সারা দুনিয়ার বুকে প্রথম এক বাঙালী রাষ্ট্র—যার নাম বাংলাদেশ। “আমার সোনার বাংলা,আমি তোমায় ভালোবাসি..” কবিগুরুর এই গান যে দেশের জাতীয় সঙ্গীত, আর বাংলা হোল যার রাষ্ট্র ভাষা।

সে এক গৌরবের ইতিহাস।

Related posts

আমাদের দেশ, আমাদের দ্বেষ-বিদ্বেষ এবং রবীন্দ্রনাথ

কিন্তু মৃত্যু যে ভয়ংকর, সে-দেহে তাহার কোন প্রমাণ ছিল না

২৭ শে এপ্রিল মানে জাগা, জেগে থাকা, জাগানো…