প্রথম পাতা প্রবন্ধ শারদীয়ার প্রীতি, শুভেচ্ছা এবং ভালো থাকুন…এই শুভ কামনায়…

শারদীয়ার প্রীতি, শুভেচ্ছা এবং ভালো থাকুন…এই শুভ কামনায়…

431 views
A+A-
Reset

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

আজ মহাসপ্তমী। পুজোর শুরু হয়েছে বলা যায় মহালয়ার দিন থেকেই। পুজোর এই আবেশ এবং আবেগ শুধু ইদানিং কালের নয়। আগেকার দিনেও এই আবেশে আমরা ভাসতাম আপামর সাধারণ মানুষ, সবিশেষ বাঙালি।

পুজোর আনন্দ আর আয়োজন ঘরে বাইরে উভয় স্থান জুড়েই। বাইরে থাকে ষষ্ঠীর বোধন। মণ্ডপে মণ্ডপে আলোর রোশনাইতে ঝলমলিয়ে ওঠে মায়ের মৃন্ময়ী মুর্তি, অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে শৈশব, কৈশোরের হা করা চোখ দুটি,যেখানে থাকে আনন্দ,বিস্ময়, বিহ্বলতার আবেশ। এই কটা দিন একটা স্বাধীনতা যেন শৈশব কৈশোরদের মুলধন। মহাষষ্ঠী থেকে মহানবমী অবধি সেই স্বাধীনতায় দল বেঁধে ঠাকুর দেখা।ইচ্ছেমতো, পছন্দমতো খাওয়া, হৈচৈ, একটু বড়ো বড়ো ভাব।

সেসব এক দিন ছিল।অবশ্য আজও যারা কৈশোরের মধ্যে দিয়ে বয়স কাটাচ্ছে,তাদের অভিজ্ঞতাকে কম বেশি আমাদেরই অতীতের অভিজ্ঞতার নব সংস্করণ বলা যেতে পারে। তবু তখন অনেক সমস্যা ছিল ঘরে এবং বাইরে।বিশেষ করে যোগাযোগের ক্ষেত্রে। ছিল না মোবাইল, ছিল না এত যানবাহন, ছিল না এত স্মার্টনেস। আজ কিন্তু সে সবই অনেক সহজ লভ্য।

মহাসপ্তমীর ভোরে নবপত্রিকার মানে কলাবৌ-এর চান করানো। ঢাক আর কাঁসরের সম্মিলিত আওয়াজে মুখরিত আকাশ বাতাস। এইভাবে এসে যায় মহাঅষ্টমীর পুজো, সন্ধি পুজো,কুমারী পুজো,মহানবমীর পুজো। সকাল সন্ধ্যায় ধুপ আর ধুনোর গন্ধে মাতোয়ারা হয় পুজোর জায়গা।

বন্ধুদের সাথে ঠাকুর দেখা,কৈশোরের, যৌবনের দুচোখে হঠাৎ করে পড়ে যায় হয়তো অন্য দুটি চোখ।আধো লজ্জায়, আধো রোমাঞ্চে শুরু হয় রোমান্স। হোক ক’দিনের তবু তো রোমান্স।

আমাদের সময়ের মত আজও রয়েছে ধুতি পাঞ্জাবি বা আলিগড় চোস্তা পাজামা পাঞ্জাবি এবং নানান ধরনের শাড়ির রঙবাহারের চোখাচোখি, হাসি বিনিময়,আরেকটু এগিয়ে মুঠোয় আগলে রাখা মুঠো…। কেটে যায় সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী।

তখনকার দিনে সময়ের একটা সুনির্দিষ্ট সীমারেখা টানা থাকতো প্রতিটি বাড়িতে বাড়ি ফেরার জন্য, এখনও সেটা রয়েছে।তবু তারই মধ্যে রাত যত বাড়ে ভিড় তত বাড়ে,যদিও বাড়ির শাসনের এখনো একটা মান্যতার আবশ্যিকতা আছে। সেইমতন ফিরে আসা বাড়িতে।

অনেক সময়ে ফ্যামিলি নিয়ে ঠাকুর দেখা সেযুগেও ছিল,এখনকার সময়েও আছে। পুজোর কটা দিন ঘরে সকালের ঘরোয়া খাওয়া,আর রাতে সাধারনত ঠাকুর দেখতে বেড়িয়ে একটু অন্য রকমের খাওয়া দাওয়া।

সারা বছরের নানান ওঠানামায় ভরে থাকা জীবনের একঘেয়েমিতে পুজোর এই ক’দিন একটা যেন আনন্দ মাখানো ক্যালেন্ডার।

সেই ক্যলেন্ডারে দশমীর দিনের মন খারাপ করা দশমীর এই আসাটা যেন কোনো ভাবেই মন মেনে নিতে চায়না। “পোহাইও না নবমী নিশি… ” কিম্বা “নবমী নিশিরে তোর দয়া নাইরে…” এই গানের সাথে বাঙালির প্রাণ কেঁদে ওঠে।তবু মেনে নিতে হয় বাস্তবতাকে। বিদায় জানাতে হয় ঘরের মেয়ে উমাকে।

আমরা যদিও জানি যে, উমা আসবে আবার সামনের বছরে এই শরতের আশ্বিনে কাশফুল আর শিউলির যুগলবন্দী নৈসর্গিকী আবহে এই বাংলায়,এই বাঙালির আটপৌরে সাধারন জীবন যাপনের ঘরের গেরোস্থালিতে। সুখ-দুঃখের আলিম্পনে আলপনা দেওয়া নকশীকাঁথার প্রান্তরে প্রান্তরে, ভালোবাসার অন্তরে অন্তরে।

আজ মহাসপ্তমী… সবাই আনন্দে মেতে উঠুক,ভালোভাবে কাটুক পুজো, খুশিতে ভরে যাক মন প্রাণ…এই কামনা করি আর মায়ের কাছে প্রার্থনা করি,মা যেন সকলকে সুস্থ রাখেন,সকলের সংসারে যেন আনন্দ বিরাজ করে নিত্যদিন।ভরে ওঠে সুখ শান্তির সম্মৃদ্ধি।

আরও পড়ুন: বোধন… হে মহামানব একবার এসো ফিরে…

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.