এক অবধারিত ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা, আমাদের পৃথিবীকে রক্ষা করতেই হবে…

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

এক অবধারিত ধ্বংসের মুখোমুখি এইমুহূর্তে আমরা। সেই বিষয় নিয়ে আমরা এই গ্রহের আপামর জনসাধারণ কমবেশি জানি,কিন্তু আমাদের ব্যক্তিগত, এলাকাগত, সমাজগত, এবং দেশীয় বা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অনেক পরিকল্পনা, ভাবনা চিন্তা থাকা সত্ত্বেও আমদের এক ধরনের উদাসীনতা আমাদেরই এই মারাত্মক ধ্বংসের কারণ হয়ে আজ আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে। সেটা কি!!??

আমরা এখন এই শতাব্দীর এক চতুর্থাংশ পার করে এলাম।কিন্তু আমাদের এখনও কোন টনক নড়েনি। তার প্রমান হিসাবে বলা যায়,যে আমরা জানি,গত শতকে(২০০০ সাল অবধি) আমাদের বিশ্বের তাপমাত্রা বেড়েছে ০.৭৪° ডিগ্রি সেলসিয়াস। পালটে গেছে জলবায়ুর গতিবিধি।তার প্রভাব পড়েছে পরিবেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে। এই শতাব্দীতে (২০০১ সাল থেকে)১.১° ডিগ্রি থেকে ৬.৬৪° ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়ার সম্ভাবনা আছে। পরিবেশ ও জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন– ১.৫° ডিগ্রি থেকে ২.৫° ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়লেই আমাদের পৃথিবীর ২০ থেকে ৩০ শতাংশ প্রজাতির জীবন বিপন্ন হবে। মেরু অঞ্চলে বরফ গলবে।পাহাড়ের হিমবাহগুলি দ্রুত গলতে শুরু করবে,এবং তা গলতেই থাকবে। সমুদ্রের জলস্তর বেড়ে যাবে,নিঃশ্চিহ্ন হয়ে যাবে অনেক দেশ,রাজ্য।

এই প্রসঙ্গে,বলি,২০২৩ সালটি উষ্ণায়নের পুরানো সমস্ত রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে।গত বছর(২০২৩) তাপমাত্রা বেড়েছে ১.৪৫° ডিগ্রি সেলসিয়াস সারা ভূপৃষ্ঠে। ২০১৫ সালে প্যারিসের বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের ২০০ টি সদস্য দেশগুলি সম্মিলিতভাবে স্থির করেছিল যে এই বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ১.৫° ডিগ্রি সেলসিয়াস-এ আটকে রাখা হবে।কারণ,এটাই ছিল বিপদমাত্রার রেখা। কিন্তু ফেলে আসা বিগত ২০২৩ সালের বছরটি দেখিয়ে দিল পৃথিবী সেই বিপদমাত্রায় ইতিমধ্যেই পৌঁছে গেছে।

পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়ার কারন কিন্তু এই আমরাই। আমাদের আধুনিক বিজ্ঞানের যাবতীয় যথেচ্ছ বিধ্বংসী আবিষ্কার আমাদের এই পৃথিবীর গ্রিন হাউস গ্যাসকে বাড়িয়ে তুলে পৃথিবীর শ্বাসরোধ করে তুলেছে। এই গ্রিনহাউজ গ্যাসে রয়েছে কার্বন-ডাই-অক্সাইড(CO2), নাইট্রাস অক্সাইড (N2O), মিথেন(CH4),ক্লোরোফ্লুরো কার্বন(CFC),ইত্যাদি বিষাক্ত গ্যাস।৷ তার সাথে রয়েছে প্রকৃতিকে উজাড় করে,ধ্বংস করে মানুষের বসতি গড়ে তোলা,বিনোদনের বহর বাড়িয়ে তোলা,বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে সবুজায়ন না করা,ইত্যাদি ইত্যাদি।

এখন প্রশ্ন হোল এটা কি অপ্রত্যাশিত? উত্তরে বলা যায়,না, এটা অপ্রত্যাশিত নয়। বহুদিন ধরে একটু একটু করে জলবায়ু পরিবর্তনের লক্ষণগুলির উপস্থিতি আমরা বুঝতে পারছিলাম। প্রতি বছর এই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনগুলি তো বটেই,অন্যান্য আন্তর্জাতিক মঞ্চেরও প্রধান আলোচ্য হয়ে উঠেছে এই জলবায়ু পরিবর্তন এবং তার বিধ্বংসী ক্ষতিকর প্রভাবগুলি ঠেকাতে সম্ভাব্য উপায় এবং পথগুলি।সেই মোতাবেক বিভিন্ন পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে বারংবার। কিন্তু,বস্তুত উল্লেখযোগ্য সুফল আদপেই হয়েছে কি’না,তার প্রমাণ মেলেনি।এই সমস্যা একটি দেশের বা একটি রাজ্যের বা একটি নির্দিষ্ট ভুখন্ডের নয়,এটি সারা পৃথিবীর সমস্যা। তাই সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে ধনী দেশগুলি একটি বিরাট অঙ্কের অর্থ সাহায্য করে একটি বিশ্ব তহবিল গঠন করে বিভিন্ন পরিকল্পনা রূপায়ণ করে,এই বিশ্বকে সম্ভাব্য ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাবে।কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক কাজ হয়নি।ফলে সিদ্ধান্তগুলো শুধুমাত্র কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে।

এই মুহূর্তে আমাদের দরকার সবুজায়ন।সারা বিশ্বের সমস্ত জায়গাতে। তার মধ্যে আশু কাজ হলো বেশি বেশি করে গাছ লাগানো। শুধুমাত্র অরণ্য সপ্তাহে নয়,সারা বছরব্যাপী গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া দরকার। ব্যক্তিগত স্তর থেকে শুরু করে সমষ্টিগত স্তরে,সরকারি, বেসরকারি স্তরে,ক্লাব,প্রতিষ্ঠান,বিভিন্ন দেশীয়,আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর প্রচেষ্টায় এইসব কাজগুলি অতি অবশ্যই করা দরকার।তা না হলে, আগামী ১০/১৫ বছরের মধ্যে আমাদের এই পৃথিবী এক ভয়াবহ ধ্বংসের মুখোমুখি হবে,এই কথাই বলা হয়েছে আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে। সারা বিশ্বে সমস্ত রকমের যুদ্ধ এখনই সম্পুর্ণ বন্ধ করতে হবে।কারণ যুদ্ধের পরিণাম কখনোই মানবসভ্যতায় ইতিবাচক হয় না।

এই বিশ্বকে মানুষের জন্য,মানুষের বেঁচে থাকার জন্য,পরবর্তী প্রজন্মের পর প্রজন্মের সুস্থভাবে এই পৃথিবীতে বসবাস করার জন্য,প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য আমাদের সকলকেই এই মুহুর্তে শপথ নিতে হবেই যে,আমাদের এই পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনকে ঠেকাতেই হবে,তারজন্য যা যা অবশ্য করনীয়,তা আমাদের অবশ্যই পালন করতে হবে।এই কাজে সারা বিশ্বের সকল দেশকেই এগিয়ে আসতে হবে।

আসন্ন অবধারিত ধ্বংসের হাত থেকে এই পৃথিবীকে রক্ষা করতেই হবে,এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

Related posts

২৭ শে এপ্রিল মানে জাগা, জেগে থাকা, জাগানো…

‘কলকাতার যীশু’, ‘উলঙ্গ রাজা’, ‘অমলকান্তি’-র প্রণেতা, শতবর্ষী কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

চৈত্র বৈশাখ মধুমাধবের মায়ায় মায়ায়