Deprecated: Creation of dynamic property Penci_AMP_Post_Template::$ID is deprecated in /home/ndn4dljdt13e/public_html/newsonly24.com/wp-content/plugins/penci-soledad-amp/includes/class-amp-post-template.php on line 46

Deprecated: Creation of dynamic property Penci_AMP_Post_Template::$post is deprecated in /home/ndn4dljdt13e/public_html/newsonly24.com/wp-content/plugins/penci-soledad-amp/includes/class-amp-post-template.php on line 47
আমাদের শারদীয়া উৎসব এবং কিছু ইতিহাস... - NewsOnly24

আমাদের শারদীয়া উৎসব এবং কিছু ইতিহাস…

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

আর মাসখানেক পরেই বাংলা ও বাঙালির সবচেয়ে প্রিয় উৎসব শারদীয়া দুর্গাপূজা। তাই এই পুজোর ইতিহাস নিয়ে কিছু কথা আজকের প্রতিবেদনে।

পলাশীর যুদ্ধ ১৭৫৭ সালের ২৩ শে জুন,একদিনেই শেষ হয়েছিল। তৈরী হয়েছিল পরের ১০০ বছরের জন্যে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনের পথ।যাইহোক সেই পলাশীর যুদ্ধজয়ের পরে সেই উপলক্ষে উৎসব করতে গিয়ে মহা সমস্যায় পড়লো ক্লাইভ।উপযুক্ত জায়গা পাওয়া যাচ্ছেনা।এই সময়ে এগিয়ে এলো কলকাতার শোভাবাজারের রাজা নবকৃষ্ণ দেব।তার বাড়িতেই পালিত হলো বিজয়োৎসব এবং দুর্গাপূজা একসঙ্গে।ক্লাইভ আর তার সাঙ্গোপাঙ্গরা এই পুজোয় অংশ নিল,এমনকি শোনা যায় ব্রিটিশ সেনারা,ক্লাইভ আর তার সঙ্গীরা সকলেই নাকি স্যালুট করেছিল মা দুর্গা-কে।প্রচুর এলাহি ব্যবস্থা ছিল,খানাপিনা সহ,আমোদ আহ্লাদের। এরপর কোম্পানি নিজে থেকেও ১৭৬৫ সালে বাংলার দেওয়ানীলাভের পরেই দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিল।এমনকি ১৭৬৬ সালে কোম্পানির অডিটর জেনারেল জন চিপস্ নিজের দপ্তর বীরভূম -বাঁকুড়াতেও দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিল।এসব চলেছিল ১৮৪০ সাল অবধি।

ইতিহাস বলে বাংলার প্রথম দুর্গাপূজা হয়েছিলো পঞ্চদশ শতকে।লোককাহিনী অনুসারে দিনাজপুর -মালদার জমিদাররা প্রথম দুর্গাপূজা করেন।আবার অন্য উৎস থেকে জানা যায় যে,অবিভক্ত বাংলার রাজশাহী জেলার(এখন বাংলাদেশে) তাহেরপুরের রাজা কংসনারায়ন,অথবা নদীয়ার রাজা ভবানন্দ মজুমদার আধুনিক সময়ে (১৬০৬ সালে) প্রথম অকালবোধন দুর্গাপূজার আয়োজন করে।রাজা কংসনারায়ন সেই সময়ে পুজোর জন্য খরচ করেছিল ৮লক্ষ টাকা।আবার শোনা যায় রাজা ভবানন্দ খরচ করেছিল ৮ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। এখনকার দিনে কতো টাকা ভাবুন।

যাইহোক, এরপর থেকে সাধারণত রাজা,জমিদার,সামন্তপ্রভুরা এই পুজোর আয়োজন করতো। আর সাধারণ প্রজারা আনন্দ করতো,উৎসব উদযাপন করে খুশিতে কাটাতো পুজোর ক’টাদিন।

এইসব বড়োলোকের বাড়ির পুজো মাঠে ময়দানে নেমে এলো হুগলির গুপ্তিপাড়ার ১২ জন ইয়ার-বন্ধুদের হাত ধরে (১২ ইয়ারী থেকেই বারোয়ারী শব্দের জন্ম হয়েছিল) ১৭৯০ সালে। আর কলকাতায় ১৮৩২ সালে প্রথম বারোয়ারী পুজো করার কৃতিত্ব কাশিমবাজারের রাজা হরনাথ নন্দীর।

সে যাইহোক, বারোয়ারী পুজোর আবির্ভাবে পরিবর্তন দেখা দিল দুর্গাপ্রতিমা এবং সাজসজ্জায়।প্রতিমা সাজানো হতো “শোলার সাজ” অথবা “ডাকের সাজ”-এ। জলা-জংলায় যে শোলা উৎপন্ন হয়,তার ভেতরের সাদা অংশ দিয়ে তৈরি করা ভূষণে সজ্জিত প্রতিমাকে বলা হতো ” শোলার সাজের প্রতিমা “,আর, রাংতা দিয়ে সজ্জিত প্রতিমাকে বলা হতো “ডাকের সাজের প্রতিমা”। এই রাংতা আসতো জাহাজে করে জার্মান থেকে ডাকের মাধ্যমে, তাই এর নাম হয়েছিল “ডাকের সাজ”।

এরপরে এক ঐতিহাসিক ব্যক্তির এই বাংলার এই পুজোয় এক বিরাট ভুমিকার কথা বলবো। আর তা হলো, মা দুর্গা তাঁর চার সন্তানদের নিয়ে একচালায় স্থান পেয়ে পুজিত হয়ে আসছিলেন দীর্ঘদিন ধরে,তাই বেশ চলছিল। কিন্তু এই একচালা ভেঙে পাঁচচালা হলো প্রথম ১৯৩৮ সালে। মা দুর্গার এই একচালার সংসার ভেঙেছিলেন সুভাষচন্দ্র বসু। না,না..ইচ্ছে করে নয়,বাধ্য হয়েই। সেবার ১৯৩৮ সালে রবীন্দ্রনাথ, ডঃ ভুপেন্দ্রনাথ দত্ত(স্বামী বিবেকানন্দের ছোট ভাই),কাজী নজরুল ইসলাম,শরৎচন্দ্র পন্ডিত(দাদাঠাকুর),বাসন্তী দেবী(দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দেশের স্ত্রী, যাকে সুভাষচন্দ্র “মা”বলে ডাকতেন),শরৎচন্দ্র বসু(সুভাষের মেজদা), প্রমুখদের কথায় সুভাষচন্দ্রকে বলা হলো কলকাতার অতি প্রাচীন কুমোরটুলির পুজোর দায়িত্ব নিতে। এই পুজো কমিটির সভাপতি ছিলেন আইনজীবী স্যার হরিশঙ্কর পাল।সুভাষচন্দ্র রাজি হলেন না।সবিনয়ে অনুরোধ রাখতে অক্ষমতা প্রকাশ করে ছিলেন।আসল কারনটা ছিল,সভাপতি পদে বৃত ব্রিটিশ সরকারের তাঁবেদারি করা হরিশঙ্কর পালের সাথে সুভাষচন্দ্র-এর বনিবনা হবেনা,এইজন্যই তিনি রাজি হননি। হরিশঙ্কর বাবু সেটা বুঝতে পেরে সরে গেলেন সভাপতি পদ থেকে।সুভাষচন্দ্র বসু হলেন কলকাতার কুমোরটুলি সার্বজনীন দুর্গাপূজা কমিটির নতুন সভাপতি। সেই পুজোয় গোপনে স্বদেশী বিপ্লবীরাও যুক্ত ছিলেন। কিন্তু মহাপঞ্চমীর দিন ঘটে গেল এক মহা অঘটন। মন্ডপে চলে এসেছিল একচালা দুর্গাপ্রতিমা। হঠাৎ বিকেলের দিকে এক বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে সব পুড়ে ছাই হয়ে গেল প্রতিমা সমেত পুরো পুজো মন্ডপ। সবাই চিন্তায় পড়ে গেল।

পাশের একটি জায়গাতে মন্ডপ নতুন করে তড়িঘড়ি করে বানানো গেলেও প্রতিমা কি করে বানানো হবে? সুভাষচন্দ্র ছুটলেন মৃৎশিল্পী গোপেশ্বর পালের কাছে। অনুরোধ করলেন প্রতিমা গড়ে দিতে হবে রাতারাতি। শিল্পী গোপেশ্বর পাল আকাশ থেকে পড়লেন,…তা কি করে সম্ভব? রাতারাতি একচালায় এতো বড়ো প্রতিমা কি করে বানানো যাবে.? মহা চিন্তায় পড়লেন শিল্পী,সহশিল্পী, পুজো কমিটির সকলে। অবশেষে উপায় বাতলে দিলেন স্বয়ং সুভাষ চন্দ্র। মা দুর্গা আর তাঁর চার ছেলে-মেয়েকে গড়তে হবে স্বতন্ত্র স্বতন্ত্র চালচিত্রতে। গোপেশ্বর পাল গড়বেন মা দুর্গার প্রতিমা, আর বাকি সহশিল্পীরা একেক জনে গড়বেন এক একটা করে চার ছেলে-মেয়ের প্রতিমা। ব্যস,তৈরি হলো এক ইতিহাস.., সুভাষচন্দ্র বসুর পরামর্শ নিয়ে অসাধ্যসাধন করেছিলেন সেদিন গোপেশ্বর পাল এবং তার সহযোগী শিল্পীরা।একরাতের মধ্যেই তৈরী হয়েছিলো স্বতন্ত্র স্বতন্ত্র পাঁচচালার দুর্গা প্রতিমা। পরেরদিন মানে মহাষষ্ঠীর ভোরে নতুন প্রতিমা এলো মন্ডপে। দেবী দুর্গা,আর তাঁর ছেলে মেয়েরা পাঁচজনে পাঁচচালায়। সে এক অভিনব ইতিহাস। যা আজও চলে আসছে আমাদের আনন্দের উৎসবে এবং আমাদের জীবনে।

Related posts

লোকসঙ্গীতের অনির্বাণ আলো আব্বাসউদ্দীন আহমদ: জন্মের ১২৫ বছরে ফিরে দেখা

বিহারের এনডিএ-র জয় তৃণমূলের উদ্বেগের কারণ হতে পারে?

জেদের জয়: ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের বিশ্বজয় নারীসত্তার সাহসিকতার প্রতীক