Deprecated: Creation of dynamic property Penci_AMP_Post_Template::$ID is deprecated in /home/ndn4dljdt13e/public_html/newsonly24.com/wp-content/plugins/penci-soledad-amp/includes/class-amp-post-template.php on line 46

Deprecated: Creation of dynamic property Penci_AMP_Post_Template::$post is deprecated in /home/ndn4dljdt13e/public_html/newsonly24.com/wp-content/plugins/penci-soledad-amp/includes/class-amp-post-template.php on line 47
এক অজানা ইতিহাসের নাম ‘সাবিত্রী দেবী’ - NewsOnly24

এক অজানা ইতিহাসের নাম ‘সাবিত্রী দেবী’

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

তখন ইংরেজ শাসন ভারতবর্ষে। পরাধীনতার কলঙ্ক মুছে দিতে শুরু হয়েছে স্বাধীনতার মরণজয়ী আন্দোলন ৪২-এর। ভারত ছাড়ো আন্দোলন। সারা দেশ বিক্ষোভে উত্তাল।

১৯৪২ সালের ২৯ শে সেপ্টেম্বর এই বাংলার মেদিনীপুর জেলার তমলুক থানা দখল করার জন্য সেদিন স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অসম সাহসী,নির্ভিক একটি মিছিল “বন্দে মাতরম” ধ্বনি দিতে দিতে এগিয়ে চলেছে…পুরোভাগে রয়েছেন ত্রিবর্ণ রঞ্জিত পতাকা হাতে অত্যন্ত বলিষ্ঠ পদক্ষেপে এগিয়ে যাওয়া তিয়াত্তর বছরের অতি দরিদ্র সাধারন ঘরের এক প্রবীণা। সবাই তাঁকে আদরে-সমাদরে “গান্ধীবুড়ি” সম্বোধনে ডাকে। যদিও আসল নাম “মাতঙ্গিনী হাজরা”।

তিনি সুদৃঢ় পদক্ষেপে পায়ে পায়ে এগিয়ে চলেছেন, এগিয়ে চলেছে স্বাধীনতার মিছিল। শাসক বৃটিশের পুলিশ বাহিনী হুঙ্কার দিতে দিতে চালিয়েছিল গুলি শান্তিপ্রিয় মিছিলের দিকে সেদিন.…। তিন-তিনটে বুলেট সেদিন সেই বীরাঙ্গনা মাতঙ্গিনী হাজরার প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল।আর রক্তাক্ত,আহত হয়েছিল বহু মানুষ।

সেদিন শহীদ জননী মাতঙ্গিনী হাজরার নামের সাথে আর একজনের নাম উল্লেখের দাবী রাখে ইতিহাস, তিনি হলেন ” সাবিত্রী বালা দেবী। সাবিত্রী বালা দে”।

কে এই সাবিত্রী দেবী? কী তাঁর অবদানের ইতিহাস?

ইংরেজ পুলিশের গুলিতে যখন সেদিন অসংখ্য দেশপ্রেমিক রক্তাক্ত হয়ে,আহত হয়ে মাটিতে পড়ে একফোঁটা জলের জন্য বুক- ফাটা কাতরতায়  কাতরাচ্ছে। সেই আর্তির কণ্ঠ-নিসৃত আর্তনাদের খবর পেয়েই স্থানীয় এক গ্রাম্য মহিলা, যার নাম সাবিত্রী দেবী, তিনি সমস্ত মৃত্যু-ভয়কে উপেক্ষা করে,তুচ্ছ করে সেদিন ছুটে গিয়েছিলেন তমলুক থানার কাছে শঙ্কর-আড়া পোলেতে এবং মাটিতে লুটিয়ে পড়ে থাকা আহত-রক্তাক্ত বিপ্লবী দেশপ্রেমিকদের মুখে তুলে দিয়েছিলেন পরম যত্নে পিপাসার জল। নিজেকে নিবেদিত করেছিলেন সেই দেশমাতৃকার সন্তানদের সেবা-শুশ্রুষায়। আহতদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার বন্দোবস্তও তিনি করেছিলেন। যদিও তিনি যখন এই মহৎ কাজগুলি করছেন,তখন  ইংরেজের দলদাস, পদলেহনকারী পুলিশের দল সেদিন রাইফেল উঁচিয়ে সাবিত্রী দেবীকে ভয় দেখিয়ে গুলি করে মেরে ফেলার হুঙ্কার- হুমকিও দিয়েছিল বারবার। কিন্তু, অকুতোভয় সাবিত্রী দেবীকে তারা সেদিন দমাতে পারেনি। রণ-রঙ্গিনী মূর্তিতে সেদিন তিনি শাসক ইংরেজের পুলিশ বাহিনীকে প্রতি-হুঙ্কার দিয়ে সাবধান করেদিয়েছিলেন, সতর্ক করে দিয়েছিলেন। তাঁর সেই রণংদেহী মূর্তি দেখে ইংরেজ পুলিশ বাহিনীও সেদিন থমকে গিয়েছিল,স্তব্ধতায় হতবাক হয়েগিয়েছিল।

বীরাঙ্গনা সাবিত্রী দেবী ছিলেন  তথাকথিত সমাজচ্যুত এক বারাঙ্গনা নারী। এই ঘটনা সেদিন সারা বাংলা তথা সারা ভারতবর্ষ-কে বিস্মিত করেছিল- একজন অবহেলিত,অপমানিত,উপেক্ষিত, গ্রাম্য দরিদ্র মহিলা কিভাবে বীরাঙ্গনায় রূপান্তরিত হন— তার প্রামাণ্য নিদর্শন দেখে।

এই প্রসঙ্গে সেই যুগের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকাতে এই খবর প্রকাশিত হয়েছিল, যেমন,যুগান্তর,বসুমতী,আনন্দবাজার প্রমুখ পত্রিকাতে। পত্রিকাগুলিতে সাবিত্রী দেবীর বীরগাথা নিয়ে চারনকবির একটি কবিতাও প্রকাশ হয়। সেটি হোল:

 ” বিয়াল্লিশের সেপ্টেম্বর,তারিখ উনত্রিশে/

মাতঙ্গিনী-সহ বিপ্লবীদের বুকে গুলি মারে পুলিশে।।

গুলিবিদ্ধ মাতঙ্গিনী হাতে ত্রিবর্ণ, রক্তে মাটি ভাসে,/

অসংখ্য বিপ্লবী আহত,মৃত্যু যাতনায় কাতরায় তার পাশে।।

আহতদের সেবার তরে দৌড়ে আনে জল,/

বারাঙ্গনা সাবিত্রী তার সে দৃঢ় মনোবল,।।

পুলিশ দেখায় ভয় গুলিভরা বন্দুক উঁচিয়ে,/

সঙ্গে সঙ্গে সেই নারী তেজেতে ওঠেন যে চেঁচিয়ে,।।

প্রতিবাদী জেহাদ জানায় তার বঁটি-টি ধরিয়া,/

সেব তিনি করিবেনই বলে হয়েছিলেন মরিয়া,।।

সে নাহি মানে সৈন্যদল,তারে রুখিতে না পারে,

কালী- দুর্গা,আমিনা-রূপী নারীশক্তির কাছে বৃটিশ হারে।।

বারাঙ্গনা সাবিত্রী, সে বীরাঙ্গনা জানি,/

শ্রদ্ধা সহকারে, প্রনামে-সালামে তারে ধন্য ধন্য মানি।”

যদিও এহেন বীরাঙ্গনা নারীর শেষ জীবন ছিল অত্যন্ত কষ্টের।চরম দারিদ্রের মধ্যে দিয়ে কাটে তাঁর জীবন।একটি হতশ্রী মাটির ঘরে,মাটির উনুন,ভাঙা তোবড়ানো একটি এ্যালুমিনিয়ামর থালা,শতচ্ছিন্ন কাপড় জামা,কোনদিন খেতে  পেতেন,আবার কোনদিন ছিল নিরম্বু উপোস। এই ছিল তাঁর দৈনন্দিন জীবন।

সবশেষে  সবার চক্ষুর আড়ালে থাকা সেই বীরাঙ্গনা নারী একদিন  নীরবে চলে গেলেন চিরদিনের বিদায় নিয়ে ১৯৯২ সালে,তখন তাঁর বয়স ৭২।

Related posts

লোকসঙ্গীতের অনির্বাণ আলো আব্বাসউদ্দীন আহমদ: জন্মের ১২৫ বছরে ফিরে দেখা

বিহারের এনডিএ-র জয় তৃণমূলের উদ্বেগের কারণ হতে পারে?

জেদের জয়: ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের বিশ্বজয় নারীসত্তার সাহসিকতার প্রতীক