“আবার হবে তো দেখা…” কথা দাও বইমেলার শেষ দিনে

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

আজ বইমেলার শেষ দিনে মনে পড়ছে গত দু’বছরের কাটানো আতঙ্কের দিনগুলির কথা।

এই মহামারির সময়ে মানুষ যেন মৃত্যুর সুত্রে বড়ো আপন হয়ে উঠল,স্মৃতিতে রয়ে গেল কাছের দুরের কত মানুষের কথা। যেমন বারো বছরের ছোট্ট মেয়েটি জামেলার কথা,যে তেলেঙ্গানা থেকে ছত্তিসগড় হেঁটে এসে বাড়ি থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে মৃত্যুর কাছে হেরে গেল। মনে পড়ে সেই অসহায় পরিযায়ীদের কথা যারা ক্লান্ত শরীরে ট্রেনের লাইনে শুয়েছিল একটু জিরিয়ে নেবার জন্যে,তাদের মৃত্যু এসে ছিনিয়ে নিয়ে গেল ঘুমের মধ্যেই। মনে পড়ে বিহারের ছাবু মণ্ডলের কথা,যে লকডাউনের পরে বেকার হয়ে গিয়েছিল। নিজের মোবাইল ফোনটা বিক্রি করে আড়াই হাজার টাকা বৌয়ের হাতে তুলে দিয়ে হতাশায়,দারিদ্রের জ্বালায় আত্মহত্যা করেছিল। মনে পড়ে বীরভূমের সদর হাসপাতালের ডাক্তার অমল রায়ের কথা।যিনি কোরনা রোগীর সেবায় দিনরাত নিজেকে উজাড় করে দিয়ে শেষে নিজেই কোভিডের শিকার হয়ে মারা গেলেন। মনে পড়ে সেই অনাথ হয়ে যাওয়া শিশু,কিশোর-কিশোরীদের কথা,যাদের মা-বাবা করোনায় হারিয়ে গেলেন চিরকালের জন্য। এরকম বহুজন আছেন, যারা গত ২০২০ সালের বইমেলায় এসে,বই কিনে,আনন্দ করে বাড়ি ফরেছিলেন ভিড় বাসে,ভিড় ট্রেনে,…তাদের অনেকেই এই দু’বছর পরের বইমেলাতে আর নেই। মাঝখানের মহামারীর দুঃসময়ে হয়তো চলে গেছেন তাঁরা মরণের পারে।

সে এক ভয়াবহ সেই সব দিন গেছে।

আমরা সবাই জানি করোনাভাইরাস একেবারে চলে যাওয়ার নয়। বারবার তার ঢেউ আসবে। আমাদের সেই মারিে  নিয়েই ঘর করতে হবে। নিজেদের সচেতনতা বজায় রাখতেই হবে। কিন্তু জীবনের নকশীকাঁথায় আনন্দ তো আমাদের একান্ত কাম্য। সবার থেকে দূরে থাকা,ঘরবন্দী হয়ে থাকা,সেটাও তো একপ্রকার মৃত্যুরই সামিল। গত দুটি বছর এই মহামারির সময়ে আমাদের যে সমস্ত অতি প্রিয়জন,পরিচিত অপরিচিত  সহ-নাগরিক করোনার শহীদ হয়েছেন তাঁরা কেউই আমাদের এই আনন্দহীন, সম্পর্ক ছিন্ন জীবন চাননি,তাই তাঁদের সকলের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই জীবনের এই বেঁচে থাকার মধ্যেই এই বছর অনেক সজাগ থেকে শুরু হয়েছিল বইমেলা। বইয়ের সাথে,মেলার সাথে,সময় কাটাতে বহু বহু মানুষ এসেওছিলেন। এই কয়েকটা দিনের জীবনের এই আনন্দের উদযাপন, আমাদের সেইসব প্রিয় সহ-নাগরিকদের আত্মত্যাগের সার্থকতাকে মনে মনে বিনম্রতায় প্রণাম জানায় আমাদের প্রাত্যহিকী।

আজ ২০২২ এর বইমেলার শেষ দিন। প্রার্থনা করি আজকের এই শেষের দিনে,সকলেই যেন ভালো থাকেন।মহামারিকে জয় করে যেন সকলে আবার আসছে বছর ২০২৩ এর বইমেলার বইয়ের বৈভবে আমরা আবার উচ্ছল হতে পারি,উজ্জ্বল হতে পারি।

সচেতনতা বজায় থাকুক,অসুখ সেরে যাক সারা পৃথিবীর। বইমেলার প্রাঙ্গণে আবার হবে তো দেখা…কথা দাও,…কথা দিলাম ২০২২ এর বইমেলার শেষ দিনে,আবার আগামীর শুরুর প্রত্যাশায়,বিশ্বাসে। সকলে ভালো থাকুন,সুস্থ থাকুন,..রইল এই প্রার্থনা।

Related posts

কিন্তু মৃত্যু যে ভয়ংকর, সে-দেহে তাহার কোন প্রমাণ ছিল না

২৭ শে এপ্রিল মানে জাগা, জেগে থাকা, জাগানো…

‘কলকাতার যীশু’, ‘উলঙ্গ রাজা’, ‘অমলকান্তি’-র প্রণেতা, শতবর্ষী কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী