রবীন্দ্রনাথের খুবই মন খারাপ

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়
কাল ২৫শে বৈশাখ।রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন। বাঙালির ঘরে বাইরে মনে,মননে আগামী একপক্ষ কাল শুধুই রবীন্দ্রনাথ। সেই একপক্ষ হল কবিপক্ষ।গান,কবিতা,নাটক, আলোচনা,বিভিন্ন পদযাত্রা,মঞ্চে,মুক্ত মঞ্চে,টিভি চ্যানেলে,নানা রকমের অনুষ্ঠান চলবে এই সময় জুড়ে।
কিন্তু তাতে কি রবীন্দ্রনাথের প্রতি সত্যিই আমরা যথাযথভাবে শ্রদ্ধা জানাতে পারবো? যেভাবে আমরা রবীন্দ্র-প্রণাম করি তাতে কি তিনি যদি থাকতেন, সত্যিই কি খুশী হতেন?
কারন,”এই ভারতের মহামানবের সাগর তীরে…” তিনি যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মহামিলনের আহ্বান জানিয়েছিলেন, তা কিন্তু আজ কখনও কখনও অপমানিত হচ্ছে,অসম্মানিত হচ্ছে।এটা তাঁর খুব মন খারাপের বিষয়। এটা তিনি চাননি।
তিনি চেয়েছিলেন,সবার মুখে দুমুঠো অন্নের সংস্থান, দেশের সকল মানুষের জন্য শিক্ষা,সকলের জন্য আস্তানা,সকলের জন্য সুস্বাস্থের চিকিৎস, সবার সঙ্গে সকলের সম্প্রীতির বন্ধন এইসব কি আজও আমরা সঠিকভাবে করে উঠতে পেরেছি? বোধহয় পারিনি।

তাই বোধহয় তিনি একলাটি সবার ভিড়ের মধ্যে থেকেও, যেন নিরালায় একান্তে মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন একা একা, বিভিন্ন জায়গাতে মর্মর মূর্তির রূপ নিয়ে। কখনও অন্ধকারে, কখনও আলোছায়ায়, কখনওবা রোদে,ঝড়ে,জলে,শীতে, উন্মুক্ত আকাশের নীচে।

আসুন আমরা আহ্বান জানাই বিশ্বকবির এই শুভ জন্মদিনের মঙ্গল মুহূর্তে বা দিনে সকলে বলি পরস্পর পরস্পরকে… আমরা রবীন্দ্রনাথকে যথাযথ মূল্যায়নের শ্রদ্ধায় তাঁর অপূর্ণ ইচ্ছাগুলিকে সফল করে তুলবো। তার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে সমস্ত স্তরে সততা আর আন্তরিকতার সাথে।

না আমরা,কখনোই আমাদের প্রিয় রবি ঠাকুর-কে মন খারাপ করে থাকতে দেবোনা।
কার তিনি আমাদের অহংকার, তিনি আমাদের অলংকার. তিনিই প্রথম এশিয়া মহাদেশের মানুষ,তথা প্রথম ভারতীয় তথা প্রথম বাঙালি… যিনি ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থ লিখে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন।

তিনিই প্রথম মানুষ যিনি বলেছিলেন..”ভারতবর্ষের সমস্ত সমস্যাকে সমাধান করার পথ পেতে গেলে স্বামী বিবেকানন্দকে জানতে হবে। কারন বিবেকানন্দের মধ্যে নেতিবাচক কিছুই নেই, সবই ইতিবাচক।”(মিঃ চার্লস এন্ড্রুজ-কে একটি চিঠিতে)।

তিনিই সারা বিশ্বে একমাত্র কবি যিনি তিনটি দেশের জাতীয় সঙ্গীত-এর রচনার সাথে যুক্ত।
এক বিশাল মনের আর মননের মানুষ ছিলেন রবীন্দ্রনাথ।
তাঁর সেই বিশালতার ছত্রছায়ায় বেঁচে থাক এই বাংলা, এই দেশ,এই পৃথিবী এই আমরা আজকের মানুষ, আগামী দিনের মানুষ।
সব শেষে প্রণাম জানাই,”হে নূতন, দেখা দিক আর বার জন্মেরও প্রথম শুভক্ষণ”।

Related posts

২৭ শে এপ্রিল মানে জাগা, জেগে থাকা, জাগানো…

‘কলকাতার যীশু’, ‘উলঙ্গ রাজা’, ‘অমলকান্তি’-র প্রণেতা, শতবর্ষী কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

চৈত্র বৈশাখ মধুমাধবের মায়ায় মায়ায়