Deprecated: Creation of dynamic property Penci_AMP_Post_Template::$ID is deprecated in /home/ndn4dljdt13e/public_html/newsonly24.com/wp-content/plugins/penci-soledad-amp/includes/class-amp-post-template.php on line 46

Deprecated: Creation of dynamic property Penci_AMP_Post_Template::$post is deprecated in /home/ndn4dljdt13e/public_html/newsonly24.com/wp-content/plugins/penci-soledad-amp/includes/class-amp-post-template.php on line 47
যেন এক মেঘে ঢাকা তারা কুয়াশা ভাঙা রোদ্দুর আশাপূর্ণা দেবী - NewsOnly24

যেন এক মেঘে ঢাকা তারা কুয়াশা ভাঙা রোদ্দুর আশাপূর্ণা দেবী

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

বাংলা ভাষায় একটি চলতি প্রবাদ আছে “যে রান্না করে সে চুলও বাঁধে”এই আপ্তবাক্যের এক জ্বলন্ত উদাহরণ হলেন রবীন্দ্রোত্তর যুগে বাংলা সাহিত্যের এক অসামান্যা নারী ” আশাপূর্ণা দেবী।

তিনি জন্মেছিলেন ১৯০৯ সালের আজকের দিনে, অর্থাৎ ৮ই জানুয়ারী  কলকাতায়। যদিও আদিবাড়ী ছিল তাঁদের হুগলির বেগমপুরেতে। বাবা ছিলেন সেই যুগের নামকরা একজন চিত্রশিল্পী, নাম হরেন্দ্রনাথ গুপ্ত এবং মায়ের নাম ছিল সরলা দেবী। সেই যুগে সাধারণত বাঙালী পরিবারে মেয়েদের লেখাপড়ার বিষয়টি  ছিল অত্যন্ত গৌন,বরঞ্চ বাল্য বয়স এবং কৈশোরেই মেয়েদের বিয়ে হয়ে যেত। যদিও সেই সময়ের অনেক আগেই বিদ্যাসাগর মেয়েদের পড়াশোনার প্রতিবন্ধকতার দরজা ভেঙে দিয়েছেন,বাল্য বিবাহও রদ করে দিয়েছেন,তবুও সমাজের উচ্চ নীম্ন সকল স্তরেই তার ব্যাপ্তি তখনও তেমনভাবে ঘটেনি।ঠিক এহেন সময়েরই মানুষ ছিলেন আশাপূর্ণা দেবী। তাই যথারীতি তাঁর-ও অতি অল্প বয়সেই  এক একান্নবর্তী পরিবারের মেজ সন্তান কালীদাস গুপ্তের সাথে বিয়ে হয়ে যায়। ফলে আশাপূর্ণা দেবীর-ও শুরু হয়ে যায় আর পাঁচটা আটপৌরে সাধারন বাঙালি পরিবারের ঘরের মেয়ে বউদের মতো রান্নাঘর,ঘর সংসারের নানাবিধ কাজকর্ম নিয়ে এক গড্ডলিকাপ্রবাহের জীবন যাপন।

স্বাভাবিক নিয়মে এরপর তিনি জননী হলেন।আরও জড়িয়ে গেলেন সংসারের দায় দায়িত্বের মধ্যে। তবু তারই ভিতর আশাপূর্ণা দেবীর  মনের বাসনায় ঘোরাফেরা করতে লাগলো বাংলা সাহিত্যের প্রতি এক অমোঘ আকর্ষণ। ছোট বেলা থেকেই লেখার প্রতি আগ্রহ।যদিও আনুষ্ঠানিক লেখাপড়া তিনি শেখেন নি। জড়িয়ে পড়েছিলেন ছোট বয়সেই সংসারের নানান দায়বদ্ধতায়। তবু্ও লেখালিখির প্রতি তাঁর অদম্য আগ্রহ।

তাঁর স্মৃতিকথা থেকেই জানা যায়,যে নিত্যদিনের সংসারের সকল দায় দায়িত্ব পালন করার শেষে তিনি তাঁর সাহিত্যচর্চা শুরু করতেন প্রায় মধ্য রাত্রে। এই ছিল তাঁর জীবনের রোজনামচা।

তাঁর প্রথম লেখা ছিল “বাইরের ডাক” নামে একটি কবিতা,যা তাঁর সাড়ে তেরো/চোদ্দ বছর বয়সে “শিশুসাথী” পত্রিকাতে প্রকাশ হয়। কাজটি তিনি অত্যন্ত গোপনে করেছিলেন।কারন তখনকার দিনে এই কাজ করা সাধারণ বাঙালি পরিবারে ছিল এক “বারন করা”-র কাজ। নানাজনের ঘরে বাইরে হাসি তামাশার উপাদান হয়ে উঠতো এইসব কাজ। যাইহোক,তিনি সর্বোতভাবে সহযোগিতা পেয়েছিলেন তাঁর স্বামী কালীদাস গুপ্তের কাছ থেকে।

১৯৩৬ সালে আনন্দবাজার পত্রিকাতে তাঁর ছোট গল্প  “পত্নী ও প্রেয়সী” প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯৩৮ সালে প্রথম বই প্রকাশ হয়..”ছোট ঠাকুরদার কাশীযাত্রা”। ১৯৪০ সালে আবার একটি বই প্রকাশ হয় “জল আর আগুন”।

এরপর তাঁর সাহিত্যচর্চা আর থেমে থাকেনি।তিনি লিখে চললেন একের পর এক সাহিত্য”প্রথম প্রতিশ্রুতি”,  “সুবর্ণলতা”,” বকুল কথা” ইত্যাদি ইত্যাদি কালজয়ী উপন্যাস।যে লেখনীতে  রয়েছে অতি সাধারণ বাঙালি পরিবারে মেয়েদের এবং পুরুষদের  সংসার জীবনের  নানান টানাপোড়েনের কথা ও কাহিনী। 

তাঁর উপন্যাস নিয়ে তৈরী হয়েছিল বাংলা সিনেমা। বাঙালি সমাজে অতি আপন করে সেইসব কাহিনী সমাদৃত হয়েছিল।আজও যার প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে যায়নি।

বাংলা সাহিত্যের আকাশে এক মেঘে ঢাকা তারা-র জন্ম হলো যার নাম আশাপূর্ণা দেবী। এক “কুয়াশা ভাঙা রোদ্দুর”-এর প্রকাশ হলো যার নাম আশাপূর্ণা দেবী।

তাঁর এই সুবিশাল কর্মকাণ্ডের জন্য ১৯৭৬ সালে তাঁকে  “জ্ঞানপীঠ”পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়।তিনি ঐ বছরেই ভারত সরকারের রাষ্ট্রীয় সম্মান ” পদ্মশ্রী” সম্মানে ভূষিত হন। এরপর তিনি পেলেন রবীন্দ্র সাহিত্য পুরষ্কার। ১৯৮৩ সালে জব্বলপুর বিশ্ববিদ্যালয় আশাপূর্ণা দেবীকে ডি.লিট. সম্মানে সম্মানিত করেন।

১৯৮৭ সালে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আশাপূর্ণা দেবীকে ডি.লিট.সম্মানে সম্মানিত করা হয়। ১৯৯০ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়  এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আশাপূর্ণা দেবীকে ডি. লিট. প্রদান করেন। তার আগে ১৯৮৮ সালে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় আশাপূর্ণা দেবীকে ডি. লিট.সম্মানে শোভিত করেন। ১৯৯৪ সালে আশাপূর্ণা দেবীকে সাহিত্য একাডেমির সদস্য পদ অলংকারে অলংকৃত করা হয়।

আশাপূর্ণা দেবী রবীন্দ্রোত্তর বাংলা সাহিত্য জগতের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। ১৯৯৫ সালের ১৩ই জুলাই আশাপূর্ণা দেবীর জীবনাবসান ঘটে।

তিনি চলে গেলেন,কিন্তু রেখে গেলেন বাংলা সাহিত্যের নকশীকাঁথার প্রান্তর জুড়ে তাঁর অমর লেখনীর সৃষ্টিশীল আলপনার চিরস্মরণীয় সৃষ্টির সম্ভার।যা বাংলা ও বাঙালির মননে ও স্মরণে চির অম্লান হয়ে থাকবে। আজ তার শুভ জন্মদিনে তার জন্য রেখে গেলাম আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা এবং প্রণাম।

Related posts

লোকসঙ্গীতের অনির্বাণ আলো আব্বাসউদ্দীন আহমদ: জন্মের ১২৫ বছরে ফিরে দেখা

বিহারের এনডিএ-র জয় তৃণমূলের উদ্বেগের কারণ হতে পারে?

জেদের জয়: ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের বিশ্বজয় নারীসত্তার সাহসিকতার প্রতীক