রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম সাক্ষাৎকার

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

সময়টা ১৯২১ সাল। শান্তিনিকেতনে প্রথম সাক্ষাৎ রবীন্দ্রনাথ এবং কাজী নজরুলের।  নজরুলের সঙ্গী ছিলেন মহম্মদ শহীদুল্লাহ। তখন  অক্টোবর -নভেম্বর মাস। ততদিনে নজরুলের একটু নামডাক হয়েছে। অতিথিদের সাদর অভ্যর্থনা জানালেন কবিগুরু।

স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ নজরুলকে বললেন একটি কবিতা আবৃত্তি করতে। নজরুল “অগ্নিবীণা” কাব্যের আগমনী কবিতা উদাত্ত কণ্ঠে শোনালেন, “একি রণ-বাজা বাজে ঘন ঘন,/রনরন রনরন ঝনঝন,/সেকি দমকি দ্রিমি গমকি গমকি/ওঠে চোটে চোটে/ছোটে লোটে ফোটে/বহ্নি ফিনিকি চমকি চমকি/ ঢাল তলোয়ার খন খন,/সদা গদা ঘোরে বোঁ-ও বন্ বন্/ শোঁ-ও শন্ শন্”।

শুনে রবীন্দ্রনাথ বিস্মিত।উপস্থিত সকলেই হতবাক। যেন আগুন ছুটছে ছন্দের তালে তালে। এইভাবেও লেখা যায় কবিতা।

আসরটি বসেছিল শান্তিনিকেতনের কলাভবনে। উপস্থিত শিক্ষক শিক্ষিকারা সকলেই আপ্লুত। মধ্যমণি কবিগুরু বিমোহিত।নজরুল কবিতা বলে চলেছেন স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে। এক সময়ে মহম্মদ শহীদুল্লাহ রবীন্দ্রনাথকে বললেনঃ”জানেন গুরুদেব,কাজী আপনার সব গান গাইতে পারে।একেবারে কণ্ঠস্থ।” বিশ্বকবি অবাক হয়ে বললেনঃ “সে কি!! আমার গান আমারই তো সব মনে থাকে না। তাহলে একটা শুনি।” আত্নভোলা নজরুল গান গাইলেন, ” সুরের গুরু,দাও দাও গো  সুরের দীক্ষা,মোরা সুরের কাঙাল “। তারপরই গাইলেন, ” তুমি কেমন করে গান করো হে গুণী,আমি অবাক হয়ে শুনি,কেবল শুনি”

এবার গুরুদেব নজরুলকে বললেন,” তোমার রচিত,তোমার সুর দেওয়া একটি গান শোনাও।” নজরুল গাইলেন‌‌-“অঞ্জলি লহো মোর সঙ্গীতে..”।

রবীন্দ্রনাথ দুটি চোখ বন্ধ করে শুনেছিলেন সেই গান।সকলেই অবাক। কবিগুরুকে প্রণাম করতে যেতেই নজরুলকে বুকে জড়িয়ে ধরে রবীন্দ্রনাথ আশীর্বাদ করে বলেছিলেন, ” বাংলা সাহিত্যে সংস্কৃতিতে তোমাকে অতি প্রয়োজন। তুমি থেমো না কাজী। তোমার সৃষ্টিতে আমি ধন্য হবো, খুশী হবো”।

তখন কাজী নজরুলের বয়স ২২ বা ২৩,আর রবীন্দ্রনাথের বয়স ৬০।

Related posts

আমাদের দেশ, আমাদের দ্বেষ-বিদ্বেষ এবং রবীন্দ্রনাথ

কিন্তু মৃত্যু যে ভয়ংকর, সে-দেহে তাহার কোন প্রমাণ ছিল না

২৭ শে এপ্রিল মানে জাগা, জেগে থাকা, জাগানো…