প্রথম পাতা প্রবন্ধ বিশ্ব পরিবেশ দিবসে আমাদের অঙ্গীকার…

বিশ্ব পরিবেশ দিবসে আমাদের অঙ্গীকার…

97 views
A+A-
Reset

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু যদি বেঁচে থাকতেন, তাহলে তিনি আত্মহত্যা করতেন। কারণ, যেভাবে গাছপালা, বন-জঙ্গল কেটে নগরায়ন হচ্ছে, আর তার ফলস্বরূপ আজকের এই সময়ে বিশ্বপ্রকৃতির এবং বিশ্বপরিবেশের ভারসাম্য যেভাবে ভেঙে পড়ছে, তার ফলে মানুষের, প্রাণী কুলের অস্তিত্ব নিয়ে বেঁচে থাকা এক জটিল সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, তাতে উদ্ভিদ বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু সত্যিই আত্মহত্যা করতেন। আত্মহত্যা করতেন আইনস্টাইন, রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, বিভুতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, কীটস, বায়রন, শেলী, মোপাঁসা, জুলে ভার্নে, লুই স্টিভেনসন, শেক্সপিয়ার, জিম করবেট, প্রমুখ প্রমুখ মানব সভ্যতার অসংখ্য অসংখ্য প্রকৃতিপ্রেমিকরা।

কারন,হে আমাদের জ্ঞানী গুণী,সব ব্যাপারে অতি সচেতন সহনাগরিকবৃন্দ, আপনারা একবার ভেবে দেখেছেন,আমার-আপনার এই বিশ্ব এখন এক মারাত্মক অবস্থার মুখোমুখি। একগন এই পৃথিবীর খুবই অসুখ। সুখে শান্তিতে নেই আমাদের প্রিয় এই বিশ্বপ্রকৃতি।

একবার ভাবুন তো, আজ থেকে ৩৫০/৪০০ বছর আগে, শিল্পবিপ্লবের আগে,১৭৫০ সালে এই বিশ্বে বাতাসে কার্বন- ডাই -অক্সাইডের পরিমান ছিল ২৮০ পিপিএম(parts per million), আর ২০০৭ সালে এই পরিমাণ দাঁড়িয়ে ছিল ৩৮২ পিপিএম।এবং ২০২২ সালে সেই পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫৬ পিপিএম। কি মারাত্মক অবস্থা?

Inter-Governmental Panel of Climate change (IPCC) ১৯৯২ সালে, মানে আজ থেকে ৩০ বছর আগে বলেছিল যে,যেভাবে বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বাড়ছে.. তাতে করে ২০৪০ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে এক৷ অতি অতি ভয়ংকর বিপদ ঘনিয়ে আসছে।

এই পৃথিবীর মেরু অঞ্চলে বরফের হিমবাহ গ্লেসিয়ার প্রচন্ডভাবে গলতে শুরু করেছে। এরফলে বাড়ছে সমুদ্রের জলোচ্ছ্বাস। বেড়ে যাবে জলবায়ুর পরিবর্তন। উষ্ণতা বৃদ্ধি পাবে ভীষণ রকমে।ফলে মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যাবে,দেখা দেবে বিভৎস খরা,বৃষ্টিপাত হবে স্বাভাবিকের চাইতে কম,ব্যাপক দাবানল হবে বনাঞ্চলগুলোতে। বেড়ে যাবে দৈনন্দিন দিন-রাতের তাপমাত্রা। হবে বিধ্বংসী ঝড়।হবে ব্যাপক বজ্রপাত। এরফলে বাতাসে নানারকমের ভাইরাস,ব্যাকটেরিয়া-র জন্ম হবে। প্রাণীকুল,উদ্ভিদ আক্রান্ত হবে মারাত্মকভাবে। বাড়বে নানান ধরনের অসুস্থতা, অসুখ,মারণব্যাধি, ইত্যাদি ইত্যাদি। হিমবাহ গলে যাওয়ার ফলে অনেক দেশের অনেক জায়গা জলের তলায় চলে যাবে। পালটে যাবে মানচিত্র,ভুগোল। সমুদ্রের জলের উত্তাপ বাড়ার ফলে সমুদ্রের অভ্যন্তরে অনেক জীবকুলের মৃত্যু ঘটবে। খরার ফলে খাদ্যশস্য উৎপাদন হ্রাস পাবে। এরফলে মানুষের বেঁচে থাকা এক ভয়ংকর ভয়াবহ অবস্থার সম্মুখীন হবে।

আন্তর্জাতিক আবহাওয়া অধিদপ্তরের এবং আমাদের দেশের কেন্দ্রীয় মৌসম ভবনের পূর্বাভাস বলছে যে এই ২০২৩ সাল থেকে আগামী ২০২৮ সাল অবধি বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ হবে অন্তত ২ থেকে ৫ ডিগ্রি স্বাভাবিকের চেয়ে। বেড়ে যাবে বিশ্ব উষ্ণায়ন। কারণ বাতাসে প্রচুর পরিমানে কার্বন-ডাই-অক্সাইড,মিথেন,ক্লোরোফ্লুরো কার্বন,কার্বন মনোক্সাইড বেড়ে যাচ্ছে। গ্রীনহাউস প্রচণ্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই অবস্থার কারনগুলির উৎস হলো আপনার-আমার মতো মানুষের অপরিমিত ভোগের চাহিদা (অত্যন্ত বেশি পরিমানে এ.সি.-র ব্যবহার, রেফ্রিজারেটরের ব্যবহার,নগরায়ন,গাছ কেটে ফেলে শিল্পাঞ্চল তৈরী, আবাসন তৈরী, ইত্যাদি ইত্যাদি) বিশ্ব মানব সভ্যতাকে এক চরম ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

এর প্রতিকার একমাত্র সারা বিশ্বে বিপুলসংখ্যক সবুজায়ন করা। সারা বিশ্বে যত বেশি সবুজায়ন হবে তত বেশি প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় থাকবে।

আগামী কাল ৫ই জুন সারা পৃথিবীটাকে সবুজে মুড়ে ফেলার ব্রত নিয়েই পালিত হবে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। আন্তর্জাতিকভাবে এই কাজ সারাবিশ্বে হয়ে আসছে বিগত শতাব্দীর সাতের দশক থেকে। আমাদের এখানেও সেই কর্মকান্ড চলবে প্রতি বছরের মতো আগামী একপক্ষ কাল ব্যাপী।

এই পরিপ্রেক্ষিতে,আসুন আগামীকাল ৫ই জুন বিশ্বপরিবেশ দিবসের প্রাক্কালে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ হই,যে আমরা আমাদের নিজেদের এবং আমাদের সন্তান-সন্ততিদের কল্যাণে এই বিশ্বকে বাসযোগ্য করে তোলার জন্য সবুজের সমারোহ দিয়ে সবুজায়নের কাজে অংশগ্রহন করবো। এই উপলক্ষে আসুন,আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী আমাদের ব্যক্তিগত এবং সমষ্টিগত উদ্যোগে আমাদের নিজ নিজ এলাকায় বৃক্ষরোপন করি।আর আমাদের ঘরের বারান্দায়,উঠোনে,বা পাশে কোথাও এক চিলতে জায়গায় ছোট ছোট গাছ লাগাই।ঘরের মধ্যে লাগাই ইন্ডোর প্ল্যান্ট..যা আমদের প্রান ভরে বাতাসে অক্সিজেন নিতে সাহায্য করবে। বাঁচবে আমাদের জীবন,বুক ভরে নিতে পারবো নিঃশ্বাস।বাঁচবে আমাদের সন্তান -সন্ততি, তাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য,এই বিশ্বকে তাদের বাসযোগ্য করে তোলার জন্য আমাদের পরিবেশের যাবতীয় খামতি,যাবতীয় জঞ্জাল দূর করতেই হবে, এই হোক আজকের দিনের একমাত্র অঙ্গীকার। কারন,একদিন তো প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে আমরা এই এখনকার প্রজন্ম চলে যাব।কিন্তু সেই চলে যাবার আগে আমাদের নিজেদের অতিপ্রিয় সন্তানদের সুস্থভাবে এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য এই বিশ্বকে দূষণমুক্ত,জঞ্জালকণামুক্ত করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে যেতেই হবে,এই হোক আজকে নিজেদের শপথ, আমাদের নিজেদেরই কাছে।

যাবার বেলায় পরিশেষে উচ্চারণ করি শপথে-অঙ্গীকারে…কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য-এর “ছাড়পত্র” কবিতার সেই অমোঘ আহ্বানঃ……

“চলে যাব– তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ // প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,// এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি// নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।// অবশেষে সব কাজ সেরে//আমার দেহের রক্তে নতুন শিশুকে// করে যাব আশীর্বাদ, তারপর হব ইতিহাস।”

“একটি গাছ…একটি প্রাণ…

গাছ লাগান..প্রাণ বাঁচান..”

আরও খবর

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

সম্পাদকের পছন্দ

টাটকা খবর

©2023 newsonly24. All rights reserved.