দেশ-বিদেশে নানারূপে কালীর আরাধনা

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

শক্তির উপাস্য দেবী মা কালীর আরাধনা এই বাংলার মতো দেশে-বিদেশে যুগে যুগে হয়ে আসছে বিভিন্ন ভাবে।

গ্রিক সভ্যতাতে ১০০০ খ্রীস্টপূর্ব থেকে শক্তির দেবী “এথেনা”-র আরাধনা হয়। কার্ত্তিক মাসের এই অমাবস্যার দিনেই জৈন ধর্মের প্রবর্তক মহাবীর বর্ধমান ৫২৭ খ্রীস্টপূর্বতে মোক্ষলাভ করেন। সম্রাট অশোক কলিঙ্গ যুদ্ধের সেই রক্তক্ষয়ের পরে এই কালীপুজোর দিনেই অহিংসার ব্রতী হয়ে বৌদ্ধধর্ম-এ দীক্ষিত হয়েছিলেন। পাঞ্জাবে এই দিন “বন্দি ছোড়্ দিবস” পালন করা হয়।কথিত আছে ১৬১৯ সালে শিখ ধর্মগুরু গুরু হরগোবিন্দ সিং এবং ৫২ জন শিখসন্ত তৎকালীন শাসক মোগলদের কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেছিলেন। প্রাচীন ব্যবিলনীয় সভ্যতাতে “উষ্মা-কেলি” নামে দুই শক্তির দেবীকে পুজোর রীতি ছিল। ঐতিহাসিকেরা মনে করেন সেই “উষ্মা” শব্দ থেকেই ‘উমা’ এবং “কেলি” শব্দ থেকেই হয়তো ‘কালী’-র উৎপত্তি হয়েছে। এশিয়া মাইনরে “সিকালী”দেবী,মিশরে  “শিকথ্ কেলার” দেবী, জাপানে “কালি যামা”দেবী, আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় ” কেলিফার”দেবী ইত্যাদি নামে শক্তির দেবী -র পুজো হয়।

এই কালী পুজোকে কেন্দ্র করে আমাদের দেশে,বাংলাদেশে,শ্রীলঙ্কায়, তিব্বতে,মায়ানমারে,এবং এশিয়ার প্রায় সমস্ত দেশেই আলোকমালার উৎসব পালিত হয়।চীনে এই উৎসব “ল্যান্টার্ন ফেস্টিভ্যাল” নামে পরিচিত।ভারতে “দীপাবলি” নামে পরিচিত।

এই কালী পুজোকে কেন্দ্র করে এই বাঙলায়,তিব্বতে, বাংলাদেশে, “ডাকাতে কালী”-র ইতিহাস রয়েছে। সে সব এক বিচিত্র কাহিনী। শত শত বছর আগে এই সব ডাকাতদের কাহিনী থেকে জানা যায় যে,এরা ছিলেন সে যুগের অত্যাচারী  রাজা-রাজড়া,সামন্ত প্রভু,ইংরেজ শাসক,মোগল শাসকদের যম,ত্রাস,আর সাধারণ গরীব মানুষদের কাছে ভগবান।কতকটা ইংরাজী সাহিত্যের শেরউড জঙ্গলের রবিনহুডের মতো কাহিনী।

এই সব ডাকাতদের আরাধ্যা দেবী ছিলেন মা কালী। মায়ের পুজো করে তবে ডাকাতের দল ডাকাতি করতে বেরোত। পরে তাদের নামেই সেই সব জায়গার নামকরণ হয়েছে।

Related posts

‘মহিষাসুরমর্দিনী’- কিছু অজানা কথা

‘ইন্ডিয়া দ্যাট ইজ ভারত’, কিছু ঐতিহাসিক তথ্য

তিনিই ছিলেন একমাত্র “ঐক্যপুরুষ”