শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি হলে কি করবেন, দেখে নিন

ডেস্ক: বর্তমানে আমরা করোনা পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। এই সময় আপনার বাড়িতে করোনা রোগী থাকলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল তাকে সঠিক ভাবে পর্যবেক্ষণে রাখা। তার রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বা ঘনত্ব কমে যাচ্ছে কি না, খেয়াল করা। 


করোনায় আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ বেশি ক্লান্ত বোধ করলে, মাথা ঘুরতে শুরু করলে, শরীর অতিরিক্ত অবসন্ন লাগলে, ঝিমুনি বোধ হলে, সবকিছু এলোমেলো মনে হলে দ্রুত সতর্ক হওয়া উচিত। এ ছাড়া যাঁরা হাইপোক্সিয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাঁদের নিয়মিত অক্সিজেন মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা উচিত। পালস অক্সিমিটার নামের ছোট্ট যন্ত্রটি এখন প্রায় বাড়িতেই আছে, যা আঙুলের মধ্যে লাগিয়ে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ও পালস রেট মাপা যায়। যদি অক্সিজেন মাত্রা ৯২ শতাংশের নিচে নেমে যায় তবে মস্তিষ্কে ও অন্যান্য অঙ্গে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়।


করোনা সরাসরি আমাদের ফুসফুসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই অনেক ক্ষেত্রেই রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। তাই রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলে দেহের কোষগুলি প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পায় না, ফলে দেহের স্বাভাবিক কার্যকলাপ ব্যাহত হয়। এর ফলে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দেয়। অনেক সময় মনোসংযোগে অভাবের মত মানসিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে।


সংক্রমণের মাত্রা অল্প হলে সামান্য জ্বর, সর্দি কাশি, স্বাদ গন্ধ চলে যাওয়ার মত উপসর্গ দেখা দিতে পারে। কিন্তু যে সব রোগীদের শ্বাস প্রশ্বাসে অসুবিধা হয় তাদেরই অক্সিজেন লেভেল কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অক্সিজেন লেভেল কমে গেলে শ্বাস প্রশ্বাসে নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়। অক্সিজেন কমে গেলে বুকে ব্যথার মত উপসর্গও দেখা যেতে পারে। এই রকম উপসর্গ দেখা দিলে কখনই তাকে হালকা ভাবে নেওয়া উচিত নয়।


অক্সিজেন লেভেল কমে যাওয়ার ফলে ঠোঁটে নীলচে ভাব বা ঠোঁট বিবর্ণ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। যা সায়ানোসিস (cyanosis) নামে পরিচিত। দেহে অক্সিজেন কমে যাওয়ার ফলে দেহে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়। তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনে হসপিটালে ভর্তি করা ব্যবস্থা করতে হবে। 
তাই দিনে অন্তত দুবার অক্সিমিটারে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা মেপে দেখা উচিত। অক্সিমিটারের রিডিং যদি ৯৪ শতাংশের নিচে নেমে যায়, তখনই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। তবে অনেক হাঁপানি ও সিওপিডির রোগীদের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিক অবস্থাতেই ৯৪ থাকে, তাই তাদের ক্ষেত্রে ৯০–এর নিচে নামলে বিপজ্জনক।
কি করা উচিত
বাইরে থেকে অক্সিজেন দিয়ে রোগীর শরীরের অক্সিজেনের ঘাটতি পূরণ করতে হবে। দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া এবং নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন চালিয়ে যাওয়া আবশ্যক। অক্সিজেন সিলিন্ডার বা অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটরের সাহায্যে রোগীকে অক্সিজেন সরবরাহ করা যায়। একই সঙ্গে আক্রান্ত ব্যক্তির করোনা সংক্রমণ বা অন্য যে কারণে হাইপোক্সিয়া হচ্ছে, তার চিকিৎসা শুরু করা জরুরি।


অক্সিজেন যদি দ্রুত পাওয়া না যায়, তাহলে অন্তত উপুড় হয়ে শুয়ে জোরে জোরে শ্বাস–প্রশ্বাস নিতে হবে। এতে কিছুটা উপকার পাওয়া যায়। কারণ, এর ফলে ফুসফুসের একটা বড় অংশে সহজে বাতাস যায় এবং রক্ত সহজে অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু শুধু এর ওপর নির্ভর করে থাকলে চলবে না। অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।
খাবার
করোনার এই সময় আমাদের পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। প্রতিদিন সাধ্যমতো ভাত–ডাল–মাছ–মংস–দুধ তো খেতে হবেই, এর সঙ্গে কিছু মৌসুমি ফলও খেতে হবে। ফলের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

একই সঙ্গে সিগেরেট ও তামাক একেবারে বাদ দিতে হবে। কারণ, তামাক ফুসফুসের ক্ষতি করে এবং আমাদের রক্ত চলাচলে বাধার সৃষ্টি করে।

প্রতিদিনের খাবারে একমুঠো বাদাম যোগ করুন। খিদে পেলে তেলেভাজা খাবার না খেয়ে কয়েকটা বাদাম বা কাজু-কিশমিশ খান। এতে শরীরে পুষ্টিও হবে এবং একইসঙ্গে অ্যালকালাইন ও অক্সিজেনের মাত্রা বাড়বে।


গ্রিন টি আমাদের শরীরে মেটাবলিজমের মাত্রা সঠিক করতে সাহায্য করে। ফলে শরীরে অক্সিজেনের অভাব তো হয় না, উপরন্তু শরীরের বাড়তি মেদ কমে ও শরীর ঝরঝরে লাগে।
টক দই খেলে পেটের সমস্যা থাকলে তা নিরাময় করতে সাহায্য করে টকদই। প্রতিদিন খাবারে একবাটি টক দই যদি আপনি যোগ করেন তাহলে আপনার শরীরে যথেষ্ট পরিমাণে অক্সিজেনও পৌঁছায়।

Related posts

বাইরে বেরোলে জ্বালাপোড়া গরম, কী করবেন আর কী করবেন না?

জুন মাসে ভারতে আছড়ে পড়তে পারে করোনার চতুর্থ ঢেউ

কোভিডে কাহিল ন্যাশনাল মেডিক্যাল, আক্রান্ত ৮০ স্বাস্থ্য কর্মী