বাংলার ২০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা বিজেপির, চমকের বদলে উদ্বেগই যেন বেশি!

ইমনকল্যাণ সেন: সামনেই লোকসভা ভোট। তার আগে সারা দেশের ১৯৫ জন বিজেপি প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে শনিবার। তাঁদের মধ্যে বাংলার ২০ জন। নামমাত্র কয়েকটি ছাড়া তেমন কোনো চমক নেই বিজেপির এই প্রথম দফার প্রার্থীতালিকায়। বরং কিছু ক্ষেত্রেই উদ্বেগই ধরা পড়েছে বলে ধারণা রাজনৈতিক মহলের।

বাংলার ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে ২০টিতে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বিজেপি। সেই তালিকায় একাধিক বিজয়ী প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তালিকায় রয়েছেন তিনজন প্রতিমন্ত্রী। বাংলায় যে ২০ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ৯ সাংসদ এবং ৪ বিধায়ক। কোচবিহারে নিশীথ প্রামাণিক, বালুরঘাটে সুকান্ত মজুমদার, মালদহ উত্তরে খগেন মুর্মু, রানাঘাটে জগন্নাথ সরকার, বনগাঁয় শান্তনু ঠাকুর, হুগলিতে লকেট চট্টোপাধ্যায়, পুরুলিয়ায় জ্যোর্তিময় সিং মাহাতো, বাঁকুড়ায় সুভাষ সরকার এবং বিষ্ণুপুরে সৌমিত্র খাঁ। কিন্তু এঁদের মধ্যে অনেকেরই টিকিটপ্রাপ্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল খোদ দলেরই অন্দরে। কিন্তু এঁদের উপর ভরসা করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প পথের সন্ধান মেলেনি।

উল্লেখযোগ্য ভাবে, বিদায়ী সাংসদ জন বার্লাকে বিজেপি এবার প্রার্থী করছে না। জেলার বিজেপি নেতাদের একাংশের দাবি, নিজের লোকসভা কেন্দ্রের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ তো দূরের কথা, গত পাঁচ বছরে বার্লা আলিপুরদুয়ারে দলের ‘ক্যাডারদের’ একটা বড় অংশের সঙ্গেই সে অর্থে যোগাযোগ রাখেননি। তাই আলিপুরদুয়ারের এবার প্রার্থী করা হয়েছে বিধানসভায় বিজেপির মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গাকে। পুরনো ক্ষতে প্রলেপ লাগাতে মনোজ কতটা সফল হন, সেটাই দেখার!

চার বিধায়কের মধ্যে রয়েছেন মনোজ টিগ্গা, হিরন্ময় চট্টোপাধ্যায় ওরফে হিরণ, শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী এবং গৌরীশঙ্কর ঘোষ। ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে বেশকিছু সাংসদকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। উল্টো কৌশলে এই বিধায়কদের লোকসভা ভোটে প্রার্থী করে কতটা সাফল্য মিলবে, তা নিয়েও সংশয় দেখা দিচ্ছে কর্মী-সমর্থকদের মনে।

নতুন করে বলার নয়, বিরোধীদের প্রচার ও প্রস্তুতিতে টেক্কা দিতেই তড়িঘড়ি প্রথম দফার প্রার্থীতালিকা ঘোষণা করে দিল বিজেপি। বেশকিছু আসনের ফলাফল নিয়ে বিজেপি যে এখন থেকেই রীতিমতো উদ্বিগ্ন, সেটা ধরা পড়েছে প্রার্থী বাছাইয়ে। এ ধরনের আসনগুলির মধ্যে অন্যতম পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি। কাঁথি কেন্দ্রে প্রার্থী হলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ভাই সৌমেন্দু অধিকারী। রাজনৈতিক শিবিরের মতে, শিশির অধিকারীর এই আসনে সৌম্যেন্দুকে প্রার্থী করে সেই উদ্বেগ কাটিয়ে ওঠার জোর প্রয়াস চালাচ্ছে বিজেপি। গত্যন্তর না দেখে পরিবারতন্ত্রের ঘোরতর বিরোধী প্রধানমন্ত্রী মোদীকে কার্যত আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে এখানে।

আরেক কেন্দ্র পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল। এত দিন ধরে এই কেন্দ্রের প্রার্থী বাছতে অনেক ঘাম ঝরিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু তেমন কাউকেই খুঁজে পাওয়া গেল না। তৃণমূলের সম্ভাব্য প্রার্থী দেবের বিরুদ্ধে নামিয়ে দেওয়া হল দলেরই অভিনেতা-বিধায়ককে। খড়্গপুরের বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়কে ঘাটাল কেন্দ্রের প্রার্থী করা হয়েছে।

হাওড়ায় প্রার্থী করা হয়েছে রথীন চক্রবর্তীকে। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর তাঁকে হাওড়ার মেয়র করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও পরবর্তীতে তাঁর সঙ্গে মমতার বিরোধ শুরু হয়। তৃণমূলের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়তে থাকে। ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের আগে রথীন বিজেপিতে যোগ দেন। পরবর্তীতে জেলা রাজনীতিতে তিনি কতটা কী ভূমিকা পালন করেছেন, সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে অনেক বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মনেও।

প্রখ্যাত গায়ক বাবুল সুপ্রিয়কে আসানসোলে প্রার্থী করে পর পর দুবার বাজিমাত করেছিল বিজেপি। এ বার সেই একই ফর্মুলা প্রয়োগ করল বিজেপি। খানিকটা চমক দিয়েও অনেকটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী হলেন ভোজপুরি গায়ক পবন সিং। আসানসোল লোকসভা আসনে হিন্দিভাষী ভোটার সংখ্যা প্রায় ৫০ শতাংশ। এই হিন্দিভাষী ভোটারদের টানতেই বিজেপি পবন সিংকে প্রার্থী করেছে, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। কিন্তু বাবুল সুপ্রিয়র পরিবর্তে পবন সিংকেও আসানসোলের সামগ্রিক ভোটাররা কতটা এগিয়ে রাখবেন, সেটা সময়ই বলবে।

অর্ধেকের বেশি আসনেই এখনও বিজেপির প্রার্থী ঘোষণা বাকি। উল্লেখযোগ্য ভাবে, কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে বিজেপির কাছে অপেক্ষাকৃত ‘কঠিন’ আসনগুলির জন্য এখনও প্রার্থী বাছতে পারেনি কেন্দ্রের শাসকদল।

Related posts

উলুবেড়িয়ায় ভোটের ডিউটিতে এসে মহিলার শ্লীলতাহানির অভিযোগ বিএসএফ জওয়ানের বিরুদ্ধে

বিজেপিতে বড় ধাক্কা! ভোটের মধ্যেই তৃণমূলে যোগ দিলেন বিদায়ী সাংসদ

সুন্দরবনে চোরাশিকারিদের হাতে খুন বনকর্মী, তদন্তে পুলিশ