পুঁজি ও প্রকৃতি: সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায় স্মারক বক্তৃতায় মার্কসের চিন্তাভাবনাকে নতুন করে চেনালেন অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়

ইমনকল্যাণ সেন

কার্ল মার্কসের চিন্তায় পুঁজি ও প্রকৃতি পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত এবং দ্বান্দ্বিক। তিনি দেখিয়েছেন যে পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা কেবলমাত্র শ্রমের শোষণের ওপর নির্ভর করে না, বরং প্রকৃতির ওপরও ব্যাপক নির্ভরশীল। ‘সত্যযুগ’ আয়োজিত ‘প্রথম সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায় স্মারক বক্তৃতা’য় তারই এক সহজবোধ্য বিশ্লেষণ মূলক আলোচনা উপস্থাপন করলেন আনন্দবাজার পত্রিকার প্রাক্তন সম্পাদক অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়। সোমবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে নিজের বক্তৃতায় শ্রোতৃবৃন্দের সঙ্গে মার্কসকে অন্য ভাবে পরিচয় করিয়ে দিলেন প্রবীণ সাংবাদিক।

‘একদিকে শুধু পুঁজি পৃথিবী অন্যদিকে বিধ্বস্ত পরিবেশ বিপন্ন গ্রহ’ শীর্ষক বক্তৃতার শুরুতে সুমিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিস্তৃত কর্মজীবনের বিভিন্ন দিক ছুঁয়ে যান প্রবীণ সাংবাদিক এবং লেখক ভবেশ দাস। এ দিনের অনুষ্ঠানে উল্লেখযোগ্য ভাবে মঞ্চে আসীন ছিলেন আরেক প্রবীণ সাংবাদিক অঞ্জন বসু।অনির্বাণবাবুর বক্তৃতার আদ্যপান্ত জুড়ে রইল পুঁজির একপেশে সর্বগ্রাসী রূপের চুলচেরা বিশ্লেষণ। বৃহৎ পুঁজি, অতিকায় পুঁজি এবং কর্পোরেট পুঁজির সমাজকে গিলে ফেলার ষড়যন্ত্র আর তারই সঙ্গে মার্কসের চিন্তাভাবনায় তাকে প্রতিহত করতে শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে প্রকৃতি সচেতনতার ব্যাপ্তি ঘটানোর প্রয়োজনীয়তার কথা।

তিনি বলেন, মার্কস মনে করতেন, পুঁজি তার স্বার্থে প্রকৃতিকে ব্যবহার করে এবং ধ্বংস করে। পুঁজিবাদী উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য ভূমি, জল, খনিজ সম্পদ ও বন উজাড় করা হয়, যা প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করে চলেছে। শ্রমিকের শ্রমশক্তির শোষণের মতো প্রকৃতিরও শোষণ হয়, যা একদিকে প্রকৃতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং অন্যদিকে পরিবেশকে সংকটের মুখে ঠেলে দেয়। কারণ, মানুষও প্রকৃতিরই অঙ্গ। … আর এই সংকট কাটিয়ে উঠতে শুধুমাত্র স্বচ্ছ ভারতের মতো কয়েকটা কর্মসূচি বা ঝাড়ু হাতে রাস্তায় নেমে পড়লেই প্রকৃতিকে রক্ষা করা সম্ভব নয়। তাছাড়া রাষ্ট্র নিজেই যেখানে পুঁজির পকেটে ঢুকে যায়, সেখানে পরিবেশ, প্রকৃতি রক্ষার দোহাই দিয়ে রাষ্ট্র কতদূর এগোতে পারে? তবে সমাজ যদি রাষ্ট্রের চালক হতে পারে, সেক্ষেত্রে পুঁজির নিয়ন্ত্রণ নেওয়া সম্ভব।

মার্কসের মেটাবলিজম নিয়ে বিশদ ব্যাখ্যা করেন অনির্বাণবাবু। তাঁর কথায়, মার্কস মূলত মানুষের উৎপাদন প্রক্রিয়া ও প্রকৃতির মধ্যে সম্পর্ক বোঝাতে ব্যবহার করেছেন। এটি তাঁর পরিবেশ ও অর্থনীতি বিষয়ক বিশ্লেষণের কেন্দ্রে রয়েছে। মার্কস দেখিয়েছেন যে, পুঁজিবাদী উৎপাদন ব্যবস্থা প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের ঐতিহ্যবাহী সম্পর্ককে ভেঙে দেয়, যা তিনি “মেটাবলিক রিফ্ট” বা বিপর্যয় হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। তাঁর মতে, পুঁজিবাদ প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের পারস্পরিক বিনিময় প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এবং পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।

Related posts

সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে পুজো উদ্বোধনে অমিত শাহ, মঞ্চ থেকেই বাংলায় বিজেপি সরকার গঠনের ডাক

প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় শর্তসাপেক্ষে জামিন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের, সব মামলাতেই মুক্তি—জেলমুক্তি কবে?

১ অক্টোবর থেকে আধার আপডেটের খরচ বাড়ছে ২৫-৫০%! দেখে নিন নতুন হারে কত লাগবে