ওয়েবডেস্ক : ভোটের রাজনীতি বোঝার ক্ষেত্রে সত্যিই তিনি একমেবাদ্বিতীয়ম! সোমবার তা আরও একবার প্রমাণ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যখন নন্দীগ্রামের বিশাল জনসভা থেকে তিনি ঘোষণা করে দিলেন, আগামী বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রাম থেকে তিনিই লড়বেন তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে।
তাঁর প্রস্তাব শুনে জনতা যে গর্জন করে উঠল, তাতে দু’টি বিষয় স্পষ্ট। এক, ওই ঘোষণায় দলত্যাগী নেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে সম্মুখসমর ঘোষণা করে দিলেন তৃণমূল নেত্রী। কারণ, ইস্তফা দেওয়া আগে শুভেন্দুই ছিলেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক।
দুই, মমতার ওই যুদ্ধঘোষণার মাস্টারস্ট্রোকে গোটা তৃণমূল উজ্জীবিত হয়ে গেল। নন্দীগ্রামের পাশাপাশিই তাঁর নিজের কেন্দ্র ভবানীপুর থেকেও লড়বেন মমতা।
এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিধানসভা নির্বাচনের সুর বেঁধে দিলেন তৃণমূল নেত্রী, অধিকারীদের ডেরায় দাঁড়িয়েই তিনি অধিকারীদের বিরুদ্ধে লড়বেন! এখন দেখার, শুভেন্দু মমতার ওই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে নন্দীগ্রাম থেকেই লড়েন কি না। অথবা তিনি নন্দীগ্রামের সঙ্গেই দ্বিতীয় কোনও কেন্দ্র থেকে ভোটে দাঁড়ান কি না।
কিন্তু শেষপর্যন্ত যাই-ই হোক না কেন, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রাম যে আরও ‘নাটকীয় এবং নজরকাড়া’ হয়ে গেল, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।
রাজনীতির একটি চালে সমস্ত আলো শুষে নিয়ে গেলেন মমতা। এবং তা করলেন এমন একটি দিনে, যেদিন শুভেন্দু তাঁর ‘গড়’ দক্ষিণ কলকাতায় মিছিল এবং সভা করতে চলেছেন।
মমতার তেখালির সভায় ভিড় হয়েছিল ব্যাপক। তৃণমূলনেত্রীর ভাষণের ছত্রে ছত্রে ছিল নন্দীগ্রাম আন্দোলনের স্মৃতিচারণ।
আরও পড়ুন : আগামীকাল নন্দীগ্রামে সভা মমতার, ফের তিন দিনের জেলা সফরে মুখ্যমন্ত্রী
আন্দোলনের শুরুর দিনে কী ভাবে নন্দীগ্রামে আসতেন, কী ভাবে তাঁকে আটকানো হত, কত বার তাঁর গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা-বুলেট ছোড়া হত, কী ভাবে তেখালির তাঁর গাড়িতে একাধিক বুলেট এসে লেগেছিল, সেই সময় কারা তাঁর সঙ্গে ছিলেন— সবই একে একে উঠে আসে তাঁর ভাষণে।
একবারের জন্যও অধিকারী পরিবারের নাম মুখে আনেননি মমতা। তিনি জানান, নন্দীগ্রাম তাঁর কাছে ‘লাকি’। ২০১৬ সালেও তিনি নন্দীগ্রাম থেকেই প্রথম প্রার্থী ঘোষণা করেছিলেন। ঘটনাচক্রে, সেই নামটি ছিল শুভেন্দুর।
নন্দীগ্রামের তৎকালীন বিধায়ক ছিলেন ফিরোজা বিবি। তাঁকে নন্দীগ্রামের বদলে পাঁশকুড়ার প্রার্থী করা হয়। সেখানে তিনি জেতেন। নন্দীগ্রামে জেতেন শুভেন্দু। ঘটনাচক্রে, এ বার ফিরোজাকেই নন্দীগ্রাম থেকে আবার প্রার্থী করার কথা ভাবছিল তৃণমূলের একাংশ।
সেক্ষেত্রে মুখওমুখি লড়াই হত ফিরোজা-শুভেন্দুর। কিন্তু যাঁরা ফিরোজাকে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে নন্দীগ্রামে প্রার্থী করার কথা ভাবছিলেন, তাঁরাও সম্ভবত ভাবেননি, মমতা নিজেই নন্দীগ্রামে প্রার্থী হতে চাইবেন।
ভাষণের শেষদিকে মমতা বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামে ভাল প্রার্থী দেব। এখনই নাম বলছি না।’’ পরমুহূর্তেই তিনি মঞ্চে থাকা সহকর্মীদের প্রশ্ন করে জেনে নেন, নন্দীগ্রাম ‘সাধারণ’ আসন। ‘সংরক্ষিত’ নয়। দ্রুত তিনি জনতাকে প্রশ্ন করেন, ‘‘আমিই যদি নন্দীগ্রামে দাঁড়াই কেমন হয়?’’ সগর্জনে সায় দেয় জনতা। তুমুল হর্ষধ্বনি ওঠে চারদিকে থেকে।
এরপরই সুব্রত বক্সী ওই মঞ্চ থেকে জানিয়ে দেন, মমতা যে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, দলের পক্ষ থেকে তা গ্রহণ করা হচ্ছে। নিশ্চিত ভাবেই তাঁকে নন্দীগ্রামে প্রার্থী করা হবে।
তাঁর কথায়, ‘‘আমরা বুঝিয়ে দিতে চাই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন্দীগ্রামের মানুষকে ভোলেনননি। নন্দীগ্রামের কর্মকাণ্ড ভোলেননি।’’পরে মমতা জানান, তিনি পারলে ভবানীপুর এবং নন্দীগ্রাম— দু’জায়গা থেকেই দাঁড়াবেন। তাঁর কথায়, ‘‘ভবানীপুর আমার বড় বোন। নন্দীগ্রাম মেজো বোন। দুই বোনকেই আমি ভালবাসি।’’