ইউক্রেন হামলার জের, রাষ্ট্রসংঘে বরখাস্ত রাশিয়া

রাষ্ট্রসংঘের হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল থেকে বরখাস্ত করা হল রাশিয়াকে। ইউক্রেনে গণহত্যার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে সাসপেন্ড করা হল রাশিয়াকে। এদিকে, ঘোষণার পরই কাউন্সিল থেকে পদত্যাগ করে মস্কো। গোটা প্রক্রিয়ার ভোটাভুটি থেকে বিরত ছিল ভারত। ইউক্রেনের উপর হামলার জেরে রাশিয়াকে এই মানবাধিকার সংগঠন থেকে বিতাড়িত করা হল বলেই জানানো হয়েছে।

২০১১-য় লিবিয়ার পরে এই প্রথম কোনও দেশের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ করা হল। ইউক্রেন সঙ্কটের ক্ষেত্রে ভারত ভোটদানে বিরত থাকার ধারা অব্যাহত রেখেই এই প্রথম কার্যত রাশিয়ার বিরুদ্ধে গেল। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশেষ অধিবেশনে আমেরিকার নেতৃত্বে আনা রাশিয়া-বিরোধী প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় ৯৩টি দেশ। বিরুদ্ধে ২৪টি দেশ। ভোটদানে বিরত থেকেছে ৫৮টি দেশ, যার মধ্যে রয়েছে ভারতও। ৪৭ সদস্যের এই কাউন্সিল থেকে সাময়িক ভাবে রাশিয়াকে বরখাস্ত করার জন্য প্রস্তাবের পক্ষে ভোটদানকারী রাষ্ট্রগুলির দুই তৃতীয়াংশের সমর্থন প্রয়োজন ছিল।

ইউক্রেনের উপর ভয়াবহ হামলা চালানোর অভিযোগেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে এই ভোটাভুটি হয় রাষ্ট্রসংঘে। জেনারেল অ্যাসেম্বলির ৯৩টি সদস্য দেশই রাশিয়াকে বরখাস্তের পক্ষে ভোট দিয়েছে। যা এক কথায় ঐতিহাসিক ঘটনা। রাষ্ট্রসংঘে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি টিএস ত্রিমূর্তি রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোটদানের প্রক্রিয়ায় বিরত থাকার খবর নিশ্চিত করেছেন। ভারত সরকারের তরফে টুইট করে জানানো হয়েছে, হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল থেকে রাশিয়াকে বরখাস্ত করা সংক্রান্ত প্রক্রিয়া থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিবৃতিতে ত্রিমূর্তি জানিয়েছেন, ভারত যে কোনওরকম হিংসারই অবসান চায়।

ভারতের ভোটদান থেকে বিরত থাকাটা এই মঞ্চে রাশিয়া-বিরোধী হয়ে উঠল বলেই মনে করা হচ্ছে। এর ফলে মস্কোর সঙ্গে ভবিষ্যতে সম্পর্কে চিড় ধরার আশঙ্কা তৈরি হল। আবার একই ভাবে ভোটদানে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত খুশি করেনি আমেরিকাকেও। রাশিয়াকে মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে সরাতে ভারতের ভোটও জরুরি ছিল আমেরিকার কাছে। ফলে যে ‘ভারসাম্য’ নিয়ে চলছিল ভারত, তা কিছুটা ধাক্কা খেল বলেই প্রাথমিক ভাবে মনে করছে কূটনৈতিক শিবির।

যুদ্ধ নয়, বিশেষ অপারেশন’ বলে দাবি করেও রাশিয়ার সেনা যে কাউকেই রেয়াত করছে না, বারবার এই অভিযোগ করেছে ইউক্রেন। অভিযোগ, অনেকেরই মাথা গুঁড়িয়ে দিয়েছে রাশিয়ার বুলেট। উপগ্রহচিত্রে দেখা গিয়েছে, গির্জা চত্বরে পরিখার মতো করে কাটা ৪৫ ফুট লম্বা গণকবর! শোনা যাচ্ছে, রুশ ফৌজ একই দশা করেছে বরোদিয়াঙ্কা শহরেরও।

এরই নজির টেনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এদিন রাষ্ট্রপুঞ্জকে বলেছেন, ”দায়েশের (আইএস) মতো সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে বুচার রুশ ফৌজের কোনও তফাত নেই। তফাত একটাই যে, এখানে বর্বরতা চালাচ্ছে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের এক সদস্য। ইউক্রেনে কী চলছে, তার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ এখনও দুনিয়ার সামনে আসেনি।” এরপর রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করে ন্যাটো জানিয়েছে, নিজেদের দখলে থাকা অংশে আগামী দিনে আরও ভয়ঙ্কর হত্যালীলা চালাতে পারে রাশিয়ার সেনা। রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতের স্থায়ী মিশনের প্রতিনিধি টি তিরুমূর্তি যদিও সেই বাঁধা গতেই বলেছেন, ‘ভারত শান্তির পক্ষে। ভারত চায় অবিলম্বে হিংসা বন্ধ হোক এবং কূটনীতি ও সংলাপের মাধ্যমে সংঘাতের সমাধান হোক।’

Related posts

হুগলির ধনিয়াখালিতে বিক্ষোভের মুখে লকেট, অশান্ত পরিস্থিতি

ভোট চলাকালীন ঝেঁপে বৃষ্টি, ছাতা মাথায় ভিড় ভোটারদের

দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ঝেঁপে বৃষ্টি, জারি কমলা সতর্কতা