Deprecated: Creation of dynamic property Penci_AMP_Post_Template::$ID is deprecated in /home/ndn4dljdt13e/public_html/newsonly24.com/wp-content/plugins/penci-soledad-amp/includes/class-amp-post-template.php on line 46

Deprecated: Creation of dynamic property Penci_AMP_Post_Template::$post is deprecated in /home/ndn4dljdt13e/public_html/newsonly24.com/wp-content/plugins/penci-soledad-amp/includes/class-amp-post-template.php on line 47
চলচ্চিত্র পরিচালক তরুণ মজুমদার এবং কিছু অজানা কথা - NewsOnly24

চলচ্চিত্র পরিচালক তরুণ মজুমদার এবং কিছু অজানা কথা

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

বাংলা চলচ্চিত্রের দিকপাল সত্যজিৎ, মৃণাল,ঋত্বিক, প্রমুখদের পরে কমার্সিয়াল ফিল্মের জগতে অন্যতম সেরা নাম হল তরুণ মজুমদার।

এই তরুণ মজুমদার অবিভক্ত বাংলার বগুড়াতে ১৯৩১ সালের ৮ই জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম ছিল বীরেন্দ্রনাথ মজুমদার। তিনি একজন স্বাধীনতা আন্দোলনের সংগ্রামী ছিলেন।

দেশভাগের আগেই তরুণ মজুমদার পরিবার সহ এদেশে চলে আসেন। লেখাপড়া শেষ করে তিনি চলচ্চিত্রের আকর্ষণে সিনেমা শিল্পে প্রবেশ করেন।পরিচিত হন স্টুডিও পাড়ার অনেকের সাথে।তারপর একসময়ে তরুন মজুমদার, শচীন মুখার্জি, এবং অভিনেতা দিলীপ মুখার্জি –এই তিনজনে মিলে “যাত্রিক” নামে একটি পরিচালক গোষ্ঠী তৈরি করে সিনেমা পরিচালনা করার পরিকল্পনা করেন।এই যাত্রিকের প্রথম সফল ছবি উত্তম কুমার,সুচিত্রা সেন অভিনীত “চাওয়া-পাওয়া” (১৯৫৯)। এরপর এই যাত্রিক ১৯৬২ সাল অবধি ছবি( কাঁচের স্বর্গ) করার পরে তিনজনেই একা একা ছবি করার পরিকল্পনা করেন।তখন থেকেই তরুন মজুমদারের পথ চলা শুরু। তিনি তৈরি করেন বিখ্যাত এবং এক নতুন ধরনের ছবি “পলাতক” (১৯৬৩/অনুপ কুমার,জহর রায়,সন্ধ্যা রায়,জহর গাঙ্গুলি, রবি ঘোষ,রুমা গুহঠাকুরতা,প্রমুখ অভিনেতা অভিনেত্রী ছিলেন/সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়)।

এরপর একের পর এক জনপ্রিয় ছবি করেছেন তরুণ মজুমদার। তিনি ১৯৯৪ সালে দুর্গাপূজার পরে পরিকল্পনা করেছিলেন নেতাজী সুভাসচন্দ্র বসুর ওপরে একটি রাজনৈতিক ছবি করবেন।চিত্রনাট্য লেখাও শুরু হয়েছিল।অনেকটা এগিয়েও কিন্তু ছবিটি হয়নি। যদিও তরুণ মজুমদার রাজনৈতিক ছবি করেছেন,যেমন তারাশঙ্করের “গণদেবতা”, ” সংসার সীমান্তে”,ইত্যাদি।

তরুণ মজুমদার ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার মানুষ। তিনি নিজের ছবির জন্যে গানও লিখেছিলেন। তাঁর লেখা গান হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরে “ফুলেশ্বরী” ছবিতে(১৯৭৪) শিল্পী মান্না দে গেয়েছিলেন.. “শুন শুন মহাশয়.. “, এরপর ” ঠগিনী”(১৯৭৪) ছবিতে আরতি মুখোপাধ্যায় গাইলেন “যদি সেই গান চৈত্রের ঝরাপাতা হয়ে..” গানটি। ১৯৮৮ সালে “পরশমণি” ছবিতে সুজাতা সরকার এবং ডায়না দাস গাইলেন তরুন মজুমদারের লেখা গান,–” ও বাবু,ও বাবুমশাই.. “, তাছাড়াও অমিত কুমার এবং ডায়না দাস গাইলেন তরুন মজুমদারের লেখা -” হে ঘোড়া টিক্ টিক্ টিক্…”। সেই বছরেই মানে ১৯৮৮ সালেই তরুণ মজুমদার ছবি করলেন “আগমন “। সেই ছবিতে তরুণ মজুমদার গান লিখলেন– “ভালোবাসার এই কি রে খাজনা..”, গানটি গাইলেন আশা ভোঁসলে এবং মান্না দে।

তরুণ মজুমদার শুধু চিত্র পরিচালক, গীতিকার, চিত্রনাট্যকার ছিলেন না,তিনি সুরকারও ছিলেন। ১৯৭৫ সালে ” সংসার সীমান্তে ” সিনেমাতে পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা “সুজন কাণ্ডারী.. ” গানটির সুর করেছিলেন তরুণ মজুমদার এবং সেই গানটি গেয়েছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।এই গানের মধ্যেই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং সন্ধ্যা রায়ের কথপোকথন শোনা যায়,সেই সংলাপ লিখেছিলেন স্বয়ং তরুন মজুমদার। আবার এই ছবিতেই পতিতাদের নিয়ে একটি গান পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখলেন মুখড়ায়…”ও সাধের জামাই রে,তুই নি ক্যান নাগর হইলি না..”, তরুণ মজুমদার সঙ্গে সঙ্গে কাগজটা টেনে নিয়ে “নাগর” শব্দটা কেটে দিয়ে লিখলেন “ভাতার” শব্দটি। এই গানটি চারজন মিলে লিখেছিলেন–পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, তরুন মজুমদার, হৃদয়েশ পাণ্ডে,হিমাংশু শেখর দাস। গানটিতে সুর দিয়েছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়।গানটি গেয়েছিলেন হৈমন্তী শুক্লা,প্রভাতী মুখোপাধ্যায়, ইলা বসু,ছবি ভট্টাচার্য, অঞ্জলি মুখোপাধ্যায়।

তরুণ মজুমদার তাঁর সিনেমায় রবীন্দ্রসঙ্গীত-এর ব্যবহার করেছেন অত্যন্ত শৈল্পিক নিপুনতায়।ফলে সিনেমার সামগ্রিকতায় এক অতুলনীয় ভাবের জন্ম দিয়েছিল।যা বাংলা চলচ্চিত্রের এক ঐতিহাসিক সম্পদ।

তরুণ মজুমদার একটি বেসরকারি চ্যানেলের জন্য বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের “দুর্গেশনন্দিনী” চিত্রনাট্য তৈরি করেছিলেন এবং সেই সিরিয়ালটা অনেক দিন ধরে সম্প্রচারিত হয়েছিল।

তরুণ মজুমদারের টালিগঞ্জ পাড়ায় এন.টি.ওয়ান স্টুডিওতে অফিস ছিল।সেই অফিসে ঢুকলেই প্রথমেই চোখে পড়বে দেওয়ালজোড়া স্বামী বিবেকানন্দ-এর ছবি।আর দেখা যেত বিশাল বিশাল দুটি ছবি..রবীন্দ্রনাথের এবং নেতাজী সুভাসচন্দ্র বসুর।

তরুন মজুমদার ছিলেন এক সফল চলচ্চিত্র পরিচালক এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা। নানা টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে চলেছিল তরুণ মজুমদারের ব্যক্তিগত জীবন প্রবাহ।তিনি বিয়ে করেছিলেন অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়কে।কিন্তু,সেই বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায় পরে।একা হয়ে যান উভয়েই।

যাইহোক,তরুণ মজুমদারের বহুবর্ণ বিচিত্র জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে ২০২২ এর ৪ঠা জুলাই। বাংলা তথা ভারতীয় চলচ্চিত্রের এক ঐতিহাসিক উজ্জ্বল নক্ষত্র মিলিয়ে গেল,বিলীয়মান হয়ে গেল মহাকালের নিয়তির লেখা অমোঘ লীলার মহাকাব্যে। বাংলা তথা ভারতবর্ষের সিনেমা শিল্পে তিনি অমর হয়ে থাকবেন চিরকাল এবং শ্রদ্ধার আসনে বিরাজ করবেন বাঙালির মনের মণিকোঠায়।

Related posts

লোকসঙ্গীতের অনির্বাণ আলো আব্বাসউদ্দীন আহমদ: জন্মের ১২৫ বছরে ফিরে দেখা

বিহারের এনডিএ-র জয় তৃণমূলের উদ্বেগের কারণ হতে পারে?

জেদের জয়: ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দলের বিশ্বজয় নারীসত্তার সাহসিকতার প্রতীক