পুরানো সেই দিনের কথা

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

বাংলা গানের বিশাল ক্ষেত্রে  অতীতে একদিন যাঁরা নিজেদের দক্ষতায় স্বনামখ্যাত হয়েছিলেন,আজও যাঁদের সেইসব গান প্রজন্মের পর প্রজন্ম শুনে মোহিত হয়, তাঁদের অনেকেই বাঙালির  স্মৃতি থেকে হারিয়ে গেছেন,যা হওয়ার কথা নয়। আর সেইসব গুণীদের নিয়ে আধুনিক সোস্যাল মিডিয়ায় মাঝেমধ্যে নানান সত্যি মিথ্যে নানা কথায় আসলটাই বোবা হয়ে যায়।

আজকে যাঁরা মাঝবয়সী তাদের নিশ্চয়ই মনে পড়ে সেই গান “শ্রীমতী যে কাঁদে,কাঁদে তারই ভাষা…”, আবার, ” কিছু নেই তবু দিতে চাই..”,অবিস্মরণীয় সেই গান,স্বয়ং মান্নাদে  সেই গানের সুখ্যাতি করেছিলেন। আর এই গান দুটিই ছিল সেই শিল্পীর একমাত্র গান, কারণ সেই শিল্পী অকালে পথদুর্ঘটনায় মারা যান। তাঁর নাম মলয় মুখোপাধ্যায় (এখনকার বিখ্যাত গায়ক শান্তনু মুখোপাধ্যায় ওরফে শান-এর বাবা)। ভুলে গেছে বাঙালি তাঁকে।

সলিল চৌধুরী “রানার” কবিতায় (সুকান্ত ভট্টাচার্য) সুর দিয়ে গান তৈরী করলেন, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সেই গান গাওয়ার আগে গানটি গেয়ে সেই সারা বাংলাকে মাতিয়ে ছিলেন ভারতীয় গণনাট্য সংঘের সনৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। ভুলে গেছে বাঙালী তাঁকেও।

বাঙালী ভুলে গেছে মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায়কে,যাঁর বহুল প্রচারিত গান, “হলুদ বনে বনে,আমার নাকছাবিটা হারিয়ে গেছে / সুখ নেইতো মনে…”। কিম্বা, জয়ন্তী সেনের গাওয়া ” আমি বউ তুমি বর, সাত পাকে বাধা ওগো তুমি কি আমার পর…?”  জয়ন্তীকে ভুলেই গেছে বাঙালী।  মনে পড়ে, সেই অতল জলের আহ্বান সিনেমায় অভিনেত্রী তন্দ্রা বর্মনের মুখে সেই  গানটি, “ভুল সবই ভুল, এই জীবনের পাতায় পাতায় যা লেখা, সে ভুল…” বাংলার ঘরে ঘরে বেজে উঠত,শিল্পী হলেন সুজাতা চক্রবর্তী। আমরা বাঙালী ভুলে গেছি তাঁকে।

আরও পড়ুন: পৃথিবীর অন্যতম একটি স্তোত্র সঙ্গীতের স্রষ্টা এবং আমরা

ভুলে গেছি  “বলি ও ননদি,আর দুমুঠো চাল ফেলে দে হাড়িতে,ঠাকুরজামাই এলো বাড়িতে” গানটির গায়িকা স্বপ্না চক্রবর্তীকে।

আমরা ভুলে গেছি শচীন গুপ্তকে,যিনি প্রথম গেয়েছিলেন সলিল চৌধুরীর  ” এবার আমি আমার থেকে আমাকে বাদ দিয়ে… ” গানটি।যা পরে গেয়েছেন সুর সরস্বতী লতা মঙ্গেশকর।

আমরা ভুলে গেছি সত্য চৌধুরীকে (পৃথিবী আমারে চায়,রেখোনা বেঁধে আমায়…)  জগন্ময় মিত্রকে(আমি দুরন্ত বৈশাখী ঝড়,…তুমি আজ কতদূরে…,) ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য,(মাটিতে জন্ম নিলাম..) মৃণাল চক্রবর্তী,সুবীর সেন, গোরাচাঁদ মুখোপাধ্যায়, সুদাম বন্দ্যোপাধ্যায়, পিন্টু ভট্টাচার্য,ললিতা ধর চৌধুরী (ওই লাল গোলাপটা দাওনা..,ছোট চঠি লাগে ভারি মিষ্টি..) সুপ্রকাশ চাকী,সুধীন সরকার,মীনা মুখোপাধ্যায়, চন্দ্রানী মুখোপাধ্যায়, দীপক মৈত্র,মীরা বিশ্বাস,চণ্ডীদাস মাল,লালন ফকিরের গান প্রথম গেয়েছিলেন প্রহ্লাদ ব্রহ্মচারী,হীরালাল সরখেল,পান্নালাল ভট্টাচার্য, সুধীরলাল চক্রবর্তী, রবীন মজুমদার, জপমালা ঘোষ,আলপনা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রমুখ প্রমুখ শিল্পীরা। এদের গানের প্রস্তুতি, তার রিহার্সাল ইত্যাদি হতো  শারদীয়া পুজোর আগে জুলাই আগস্ট মাসে,তার সাথে হতো গানের রেকর্ডিং।

Related posts

আমাদের দেশ, আমাদের দ্বেষ-বিদ্বেষ এবং রবীন্দ্রনাথ

কিন্তু মৃত্যু যে ভয়ংকর, সে-দেহে তাহার কোন প্রমাণ ছিল না

২৭ শে এপ্রিল মানে জাগা, জেগে থাকা, জাগানো…