বাংলা তথা ভারতীয় চলচ্চিত্রের পথিকৃৎ ‘পদাতিক’ মৃণাল সেন এবং একাই ১০০

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

অবিভক্ত বাংলার ফরিদপুর জেলায় (এখন বাংলাদেশ) ১৯২৩ সালের ১৪ মে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বাংলা তথা ভারতীয় চলচ্চিত্রের অন্যতম পথিকৃৎ মৃণাল সেন।

ফরিদপুর হাইস্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করে তিনি চলে আসেন কলকাতায়। কলকাতায় স্কটিশচার্চ কলেজ থেকে ফিজিক্সে স্নাতক হন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর হন। ১৯৫২ সালে তিনি গীতা সোমকে (পরে গীতা সেন) বিবাহ করেন। তাঁদের এক ছেলে, নাম কুণাল সেন।

তারপর তিনি সেই সময়ের অত্যন্ত প্রভাবশালী সংগঠন ভারতীয় গণনাট্য সংঘের সাথে যুক্ত হন। এরপর তিনি পেশাদার জীবনে মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভ হিসাবে কিছুদিন কাজ করার পর চলচ্চিত্রের শব্দ-কুশলী হিসাবে কাজে নিজেকে যুক্ত করেন।

তারপর মৃণাল সেন ১৯৫৫ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত বাংলা তথা হিন্দি,ওড়িয়া,তেলেগু সহ ভারতীয় চলচ্চিত্রের সাথে অতি সফলতার সাথে কাজ করে যান।

মৃণাল সেন পরিচালিত চলচ্চিত্রগুলি দেশে বিদেশে গুণীজন দ্বারা সমাদৃত হয়। বহু পুরস্কারে পুরস্কৃতও হয়।

মৃণাল সেন পরিচালিত চলচ্চিত্রগুলির তালিকা হলো যথাক্রমে… রাতভোর (১৯৫৫), নীল আকাশের নীচে (১৯৫৮), বাইশে শ্রাবণ (১৯৬০), পুনশ্চ (১৯৬১), অবশেষে (১৯৬৩), প্রতিনিধি (১৯৬৪), আকাশ কুসুম (১৯৬৫), কাঁচ কাটা হীরে(১৯৬৫), মাটির মনিষ (ওড়িয়া/১৯৬৬), জোড়া দীঘির চৌধুরী পরিবার (১৯৬৬), ভুবন সোম(হিন্দি /১৯৬৯), ইন্টারভিউ (১৯৭০), এক আধুরী কাহানী (হিন্দি /১৯৭১), ক্যালকাটা ৭১1 (১৯৭২), পদাতিক (১৯৭৩), কোরাস(১৯৭৪), মৃগয়া (১৯৭৬), ওকা উরি কথা (ওড়িয়া/ ১৯৭৭),পরশুরাম (১৯৭৮), একদিন প্রতিদিন (১৯৭৯), আকালের সন্ধানে (১৯৮০), চালচিত্র (১৯৮১), খারিজ (১৯৮২), খণ্ডহর (হিন্দি /১৯৮৩), জেনেসিস (১৯৮৬), একদিন আচানক (হিন্দি /১৯৮৯), মহাপৃথিবী (১৯৯১), অন্তরীণ (১৯৯৩), আমার ভুবন(২০০২)।

এ ছাড়াও মৃণাল সেন ভারতীয় দুরদর্শনের জন্যও অনেকগুলো টেলিফিল্ম পরিচালনা করেন, সেগুলি হোল,যথাক্রমে, ইচ্ছে-পূরণ, তাজবিদ আপনা আপনি, অপরাজিত, কভি দূর কভি পাশ, সম্ভার, আয়না, রবিবার, আজকাল, দো বাহানে, জিৎ, সাল গিরা, সওয়াল, আজনবি, দশ সাল বাদ.…।

বাংলা তথা ভারতীয় চলচ্চিত্রের অন্যতম পথিকৃৎ পদাতিক মৃণাল সেন তাঁর কাজের জন্য বিভিন্ন সময়ে দেশে বিদেশে বিভিন্ন সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়,রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সান্মানিক ডি.লিট. সম্মানে সম্মানিত হন। ১৯৮১ সালে তাঁকে আমাদের ভারত সরকার “পদ্মভূষণ ” সম্মানে ভূষিত করেন। ১৯৯৯ সালে ফরাসী সরকার তাঁকে ” কমান্ডার্ অফ্ দ্য অর্ডার অফ্ আর্টস এন্ড লেটার্স” সম্মানে সম্মানিত করেন। ২০০০ সালে রাশিয়ান সরকারের মাননীয় রাষ্ট্রপতি মিঃ পুটিন সেদেশের রাষ্ট্রীয় সম্মান “অর্ডার অফ্ ফ্রেন্ডশিপ ” সম্মানে সম্মানিত করেন। ২০০৫ সালে মৃণাল সেনকে “দাদাসাহেব ফালকে” পুরস্কারে পুরস্কৃত করা হয়। তিনি ভারত সরকারের মনোনীত রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন ১৯৯৮ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত।

সারাজীবন বাংলা তথা ভারতীয় চলচ্চিত্রের দরবারে অনেক অবদানের শেষে ২০১৮ সালের ৩০ শে ডিসেম্বর মৃণাল সেন বার্ধক্য জনীত কারনে ৯৫ বছর বয়সে নিয়তির অমোঘ বিধানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

আজ সেই মহাজীবনের জন্মের শততম বছরে তাঁর প্রতি রেখে গেলাম আমাদের আন্তরিক শ্রদ্ধা এবং প্রণাম।

Related posts

২৭ শে এপ্রিল মানে জাগা, জেগে থাকা, জাগানো…

‘কলকাতার যীশু’, ‘উলঙ্গ রাজা’, ‘অমলকান্তি’-র প্রণেতা, শতবর্ষী কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

চৈত্র বৈশাখ মধুমাধবের মায়ায় মায়ায়