আপনি কথায় কথায় রেগে যান, জানুন নিয়ন্ত্রণের টোটকা

ডেস্ক: সংসারে ছোটোখাটো অভাব অভিযোগ থাকবেই। সঙ্গে থাকবে রাগ অভিমানও। তবে সেই রাগ যতক্ষণ মিষ্টত্বের পর্যায়ে আছে ততক্ষণ সংসার টক-ঝাল-মিষ্টির স্বাদে পরিপূর্ণ। কিন্তু সেই রাগ যদি হয় ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে কখনও কখনও। কেউ কিছু বলেই মেজাজ হারিয়ে ফেলছেন। সামান্য বিষয়ে রেগে গিয়ে জিনিসপত্র ভাঙচুর, গালাগালি, চিৎকার-চেঁচামেচি, এমনকি নিজেকে বা অপরকে আঘাত করেন। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় রাগ একটি স্বাভাবিক আবেগ হলেও এর প্রকাশ যদি অনিয়ন্ত্রিত বা অন্যের জন্য ক্ষতিকারক অথবা অপ্রীতিকর হয়, তখন এটি নিঃসন্দেহে অগ্রহণযোগ্য। রাগের কারণে সম্পর্কের বিচ্ছেদ, বড় ধরনের শারীরিক ক্ষতি, তবে রাগের কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিন্তু ব্যক্তি নিজেই। গবেষণা বলছে, অতিরিক্ত রাগের ফলেই শরীরে বাসা বাঁধছে নান জটিল রোগের, যা থেকেই হতে পারে মৃত্যু।


অতিরিক্ত রাগ শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেল। দীর্ঘ দিন ধরে মানসিক চাপ থেকেই ব্রেন স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, বুকে ব্যথার মতো জটিল রোগের সৃষ্টি হয়। গবেষণা বলছে, প্রতি বছর প্রায় দেড় লক্ষ মানুষ স্ট্রোক মারা যাচ্ছে। যার অনেকটাই দায়ী মানসিক চাপ, স্ট্রেস, চাপা কষ্ট। কিন্তু এধরনের আচরণ যদি বেশিদিন চলে তাহলে কিন্তু বড়সড় রোগ হতে পারে। তাই একটু সচেতন হলেই এই পরিস্থিতি থেকে নিজেকে দূরে রাখা যায়। তার জন্য নিয়মিত অনুশীলন দরকার।

স্বয়ং গৌতম বুদ্ধ বলে গেছেন যে, “কেউ রাগ করলে তাঁকে উলটে রাগ ফিরিয়ে দিও না। নিজে শান্ত থাকো। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করো।”


মানসিক চাপ: কোনো বিষয়ে নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপে থাকে, সে ক্ষেত্রেও তার অতিরিক্ত উদ্বিগ্নতা রেগে যাওয়ার মাধ্যমে প্রকাশ পেতে পারে। অবসাদকে কীভাবে কাটানো যায় তার উপায় বার করুন। দুম করে রেগে যাওয়ার আগে একটু ধৈর্য ধরে পরিস্থিতির কথা ভাবুন। চেষ্টা করুন মাথা ঠান্ডা রাখতে।


পারিবারিক পরিবেশ: ছোটবেলায় যদি কেউ এমন পরিবেশে বড় হয়, যেখানে মা-বাবা বা অভিভাবকেরা অল্পতেই রেগে যান, সেই পরিবারে শিশুরাও একই ধরনের আচরণ শেখে।বিভিন্ন মানসিক সমস্যা, যেমন ব্যক্তিত্বের ত্রুটি, বিষণ্নতা রোগ, সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার, উদ্বিগ্নতা রোগ, শুচিবায়িতা, মাদকাসক্তি, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা, কনডাক্ট ডিসঅর্ডার, ডিমেনশিয়া ইত্যাদির অন্যতম উপসর্গ রাগ।


রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমান: রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমনোর চেষ্টা করুন। রাতে শুয়ে শুয়ে মোবাইল ফোন দেখবেন না। বরং শোয়ার আগে চোখ বুজে মেডিটেশন করুন।


যোগ ব্যায়াম: যোগা করুন। ধ্যান করুন। এটা প্রমাণিত যে, ধ্যান নিয়মিত করলে, মানুষের রাগ কমে। আর ধৈর্য বৃদ্ধি পায়। তাহলে রোজ নিয়ম করে ধ্যান করুন খানিকটা সময়। আপনার রাগ কমবেই।
ডাইরি লিখুন: দিন শেষে ডায়েরি লেখার প্র্যাকটিস করুন। দিনের যাবতীয় ঘটনাকে কাগজে লিখে ফেলুন। দেখবেন এতে রাগও কমবে। পজিটিভিটি অনুভব করবেন।


পরিস্থিতি থেকে সরে আসুন: যখন বুঝে যাচ্ছেন আপনি রেগে যাচ্ছেন, তখন একেবারে প্রাথমিক অবস্থাতেই সেই পরিস্থিতি বা জায়গা দ্রুত সরে আসুন বা কারও সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে রাগ হতে থাকলে প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে ফেলুন অথবা তার সঙ্গে সেই মুহূর্তে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। এ সময় কিছু ‘রিলাক্সেসন এক্সারসাইজ’, যেমন শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, গুনগুন করে গান গাওয়া, মজার কিছু ভাবা, মনে মনে নিজেকে শান্ত হতে বলা ইত্যাদি আপনার অস্থিরতা কমাতে সাহায্য করবে।


গুণগত সময়: আপনার জীবনের গুণগত মান অন্যের ওপরে না, আপনার ভালো থাকার ওপর নির্ভর করে। সুতরাং নিজেকে ভালোবাসুন, ভালো রাখুন, গান শুনুন, বই পড়ুন, পছন্দের কাজ করুন। বন্ধুবান্ধব ও সামাজিক মেলামেশা বাড়ান, নিয়ম করে মাঝেমধ্যে বেড়াতে যান। নিজের জন্য প্রতিদিনই কিছুটা গুণগত সময় রাখুন।

Related posts

বাইরে বেরোলে জ্বালাপোড়া গরম, কী করবেন আর কী করবেন না?

আজ ধনতেরাস, জানুন সোনা কেনার শুভ সময়

ধনতেরাসে সোনা কেনার সময় এই ৫টি বিষয়ে সজাগ থাকুন