পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডে ২৬ জন নিরীহ নাগরিকের মৃত্যু ঘিরে উত্তাল কাশ্মীর উপত্যকা। তার পরিপ্রেক্ষিতে জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন ৮৭টি পর্যটনকেন্দ্রের মধ্যে ৪৮টি আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার সতর্কবার্তার পরেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, পহেলগাঁওয়ের হামলা ছিল শুধু শুরু। পাকিস্তানের মদতপুষ্ট জঙ্গিরা সীমান্ত এলাকায় সংঘর্ষবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে টানা পাঁচদিন ধরে গোলাগুলি চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের লক্ষ্য, এই গোলাগুলির আড়ালে ভারতে অনুপ্রবেশ ঘটানো। এর মধ্যেই পাকিস্তান সেনা সিয়ালকোটে মোতায়েন করেছে অত্যাধুনিক রাডার সিস্টেম—যা ভারতীয় প্রত্যাঘাতের আশঙ্কার স্পষ্ট ইঙ্গিত।
গোয়েন্দাদের মতে, আইএসআইয়ের ছকে এবার জঙ্গিরা স্থানীয় জঙ্গিগোষ্ঠীর সহায়তায় ফের বড় হামলার ছক কষছে। টার্গেট করা হতে পারে নিরাপত্তারক্ষী, অ-কাশ্মীরি শ্রমিক, পুলিশ এবং কাশ্মীরি পণ্ডিতদের। তাই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পর্যটনস্থলগুলিকে আপাতত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যাতে নিরাপত্তার ঝুঁকি কমানো যায়।
এই মুহূর্তে কাশ্মীরে পর্যটন মরশুম তুঙ্গে থাকলেও পহেলগাঁওয়ের ঘটনার পরে হাজার হাজার পর্যটক উপত্যকা ছেড়ে চলে গেছেন। ২২ এপ্রিলের পর পর্যটন কার্যত স্তব্ধ হয়ে গেছে।
গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুযায়ী, কয়েকটি নিষ্ক্রিয় জঙ্গিগোষ্ঠী হঠাৎ করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। পাক ট্রেনিংপ্রাপ্ত আত্মঘাতী মুজাহিদিনরাও তৎপর। আইএসআই চায়, ভারত যখন ভবিষ্যতের নিরাপত্তা পরিকল্পনা তৈরিতে ব্যস্ত, সেই সুযোগে হামলা চালিয়ে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলতে।
আরও আশঙ্কার বিষয়—কাশ্মীরের রেল প্রকল্পগুলিকেও নিশানা করছে জঙ্গিরা। বর্তমানে রেল নির্মাণে যুক্ত রয়েছেন কয়েকশো অ-কাশ্মীরি শ্রমিক। গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে, হামলার মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা হতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে ভারত সরকারও পাল্টা ব্যবস্থা নিচ্ছে। ইতিমধ্যেই জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ থেকে নিয়োগ করা হয়েছে একটি ‘ফিদায়েঁ-রোধী’ বিশেষ বাহিনী। গুলমার্গ, সোনমার্গ ও ডাল লেকের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় তাদের মোতায়েন করা হয়েছে, যাতে সম্ভাব্য হামলার আগেই রুখে দেওয়া যায়।
এই পরিস্থিতিতে জম্মু-কাশ্মীর চূড়ান্ত সতর্কতায় রয়েছে। পর্যটন বন্ধ থাকলেও জঙ্গি মোকাবিলায় কোনও ছাড় দেওয়া হবে না—এই বার্তাই দিচ্ছে প্রশাসন।