আবারও জঙ্গি হামলায় রক্ত ঝরল জম্মু-কাশ্মীরে। রবিবার জম্মু আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রীর সফরের দু’দিন আগে জম্মুর সেনা ছাউনির কাছে নিরাপত্তা বাহিনী এবং জঙ্গিদের মধ্যে হল গুলির লড়াই। প্রাথমিক ভাবে গুলির লড়াইয়ে এক জন সিআইএসএফ কর্মী নিহত এবং চার জন আহত হয়েছেন বলেও সেনা সূত্রে খবর। এই সঙ্ঘাতে সেনাবাহিনীর গুলিতে দু’জন জঙ্গি মারা গিয়েছে বলেও সেনা সূত্র জানিয়েছে। হামলায় জখম হয়েছেন আরও ৯ জন। উল্লেখ্য, সাম্বা জেলায় দু’দিন বাদেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফর। মোদীর সফরের মুখে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তারপরও যেভাবে হামলার ঘটনা ঘটল, তাতে চিন্তায় প্রশাসন।
উল্লেখ্য, ৩৭০ ধারা বিলোপের পর রবিবার প্রথমবার জম্মুতে জনসভা করার কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। জানা যাচ্ছে, এদিনের হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর নয়জন জখম হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দুই পুলিশকর্মীকে সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জঙ্গিরা জম্মুতে হামলার ছক কষছিল বলে আগেই খবর ছিল গোয়েন্দাদের কাছে। পাশাপাশি, পুলিশ সুনজবা এলাকায় অন্তত দুই জঙ্গির লুকিয়ে থাকার খবর পেয়েছিল। সেই মতো সেনা সদস্যরা জম্মু শহরের সুনজবা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় একটি তল্লাশি অভিযান শুরু করার পরই লুকিয়ে থাকা জঙ্গিদের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ শুরু হয়।
CISF আধিকারিকরা জানিয়েছেন, সকালের শিফটে কাজে যোগ দিতে ১৫ জন নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ানকে নিয়ে আসছিল বাসটি। ভোর ৪টে ২৫ মিনিট নাগাদ চাড্ডা ক্যাম্পের কাছে হামলা চালানো হয়। এদিনের হামল প্রসঙ্গে আধাসামরিক বাহিনীর এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, জঙ্গিরা বাস লক্ষ্য করে গুলি চালায়। গ্রেনেডও ছোড়ে তারা। এই ঘটনায় অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইন্সপেক্টর এস পি পাটিলের মৃত্যু হয়েছে।
জঙ্গিদের হামলার সঙ্গে সঙ্গেই পালটা জবাব দেয় নিরাপত্তা বাহিনী। এক জঙ্গিকেও নিকেশ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই CISF আধিকারিক। পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, তল্লাশি অভিযান চলাকালীন হামলা চালায় জঙ্গিরা।
জম্মুর অতিরিক্ত ডিজিপি মুকেশ সিং জানিয়েছেন, এলাকায় যখন পুলিশের বিশেষ দল ও CRPF যৌথ ভাবে তল্লাশি অভিযান শুরু করে, তখনই হামলা চালায় জঙ্গিরা। তিনি বলেছেন,”আমাদের কাছে খবর ছিল যে, জঙ্গিরা কিছু একটা করতে পারে। ওই খবরের ভিত্তিতে আমরা এলাকা ঘিরে রেখেছিলাম। এলাকায় তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছিল…মনে করা হচ্ছে, জঙ্গিরা একটা বাড়িতে লুকিয়ে রয়েছে। এখনও গুলির লড়াই চলছে।’
এদিনের হামলার জেরে ওই এলাকায় মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। আজকের জন্য স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে। আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র সমতে দুই জঙ্গিকে ঘিরে রাখা হয়েছে। তারা জইশ-এ-মহম্মদের সদস্য বলে মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, কিছুদিন আগেই দক্ষিণ কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলায় কাকাপোরায় জঙ্গি হামলায় এক আরপিএফের পুলিশ কর্মীর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় জখম হন আর এক। এর আগে জম্মু-কাশ্মীরের কুলগামে জঙ্গি হামলা ঘটেছিল। সতীশ কুমার সিং নামে এক গাড়িচালককে গুলি করে খুন করে জঙ্গিরা।
তাৎপর্যের বিষয় হল, ২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার পর এটাই প্রধানমন্ত্রীর প্রথম কাশ্মীর সফর। এই সফরে মোদীর পাল্লি গ্রামে পঞ্চায়েত সদস্যদের নিয়ে এক বড় জনসভায় বক্তৃতা দেওয়ারও কথা রয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সেই সফরের ঠিক প্রাক মুহূর্তে এই ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে উপত্যকায়।