কলকাতা: ইয়াস (Yaas)-এর দাপটে তছনছ হয়ে গিয়েছে সেই সমুদ্র সৈকত। অনেক কিছুই ভেঙে গিয়েছে। সাইক্লোনের পর সেই সৌন্দর্যাায়নের কাজ নিয়েই সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী। ‘পেভার ব্লক’ কী ভাবে খুলে গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রীর।তাঁর কথায়, ‘যারা করেছে তাদের দোষ, তদন্ত হওয়া উচিৎ’। ‘যারা করেছে তাদের দোষ, তদন্ত হওয়া উচিৎ’।
এদিন নবান্নে প্রশাসনিক বৈঠকে সেচ দফতরের কাজ নিয়ে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বলেন, ‘প্রতিবছরই সেচ দফতর বাঁধ সারাচ্ছে, প্রতিবছরই ভেঙে যাচ্ছে। লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে জলে যাচ্ছে।’ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির কথা বলতে গিয়ে বন দফতরের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট কী করেছে? ৫ কোটির ম্যানগ্রোভ পুঁতবে বলেছিল, কিন্তু কাজ হয়নি।
বুধবার নবান্নে সেচ দফতরের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের দাপটে শতাধিক বাঁধ ভেঙেছে রাজ্যে। দিকেদিকে এখনও মানুষের বাড়িঘর সব জলের তলায়। আর ইয়াসের পর ঘূর্ণিঝড় কবলিত হিঙ্গলগঞ্জ, সাগর ও দিঘা ঘুরে দেখে সেচ দফতরের কাজে রীতিমতো ক্ষোভ উগড়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। দিঘার বাঁধ ভাঙার নিয়ে রীতিমতো তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
ফের একবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রকৃতিই সহায়ক বলে মনে করিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমফানের সময় প্রচুর গাছ ভেঙেছে, সেই গাছ কোথায় গেল? সব দফতরের থেকে ৩ দিনের মধ্যে রিপোর্ট চাই।’ এর পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন, ‘১১ জুন ও ২৬ জুন ভরা কটাল রয়েছে। তার আগে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ করতে হবে।’
ইয়াসের আগে গত বছর বাংলায় আঘাত হেনেছিল আমফান। সেই ঝড়ে বহু গাছ পড়ে গিয়েছিল। সেই সব কাজ কোথায় গেল, তা নিয়ে এ বার প্রশ্ন তুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন থেকে তিনি বলেন, ‘অনেক গাছ কাটা হয়েছিল, সে গুলো কোথায় গেল? বলেছিলাম গাছ ফেলে নদী ভাঙন আটকানো যেতে পারে।’ মমতার অভিযোগ, সেই গাছ কখনও বন দফতর তুলে নিয়ে যায়, কখনও পুরসভা নিয়ে যায়, কণোও সেচ দফতর নিয়ে যায়। এর কোনও হিসেব নেই। তিনদিনের মধ্যে সেই সংক্রান্ত রিপোর্ট চাইলেন মমতা। তিনি বলেন, ‘আমফানে পড়ে যাওয়া গাছগুলো কোথায় গেল? ব্যবহার করা হয়েছে কিনা, তিন দিনের মধ্যে সেই রিপোর্ট দিতে হবে।’
‘প্রতিবছর বাঁধ ঠিক করা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও কেন ভাঙছে?
তিনি বলেন, প্রতিবছর বুুলবুল, আয়লা আসছে, আর টাকাগুলি জলে চলে যাচ্ছে। ১০ বা ২০ বছরে ভাঙবে না এমন বাঁধ তৈরি করতে হবে। একটা বিশেষজ্ঞ কমিটির পরামর্শ নিতে হবে। যেখানে কংক্রিট কাজ করবে না, সেখানে ম্যানগ্রোভ লাগাতে হবে। ৫ লক্ষ ম্যানগ্রোভ লাগিয়েছি। সাড়ে ৬ কোটি টাকা লেগেছে গাছ লাগাতে।
এদিন তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর বাঁধ ঠিক করা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও কেন ভাঙছে? দায়বদ্ধতার অভাবে ভুগছে। রিপোর্টের অপেক্ষায় বসে থাকলে চলবে না। দিঘার জন্য আলাদা পরিকল্পনা করতে হবে। দিঘার সৌন্দার্যায়ন নষ্ট হয়ে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘সুন্দরবনে বিদ্যাধরী নদীর বাঁধ সবথেকে বেশি ভেঙেছে। বিদ্যাধরীর জলে বেশিরভাগ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। প্রয়োজনে ১০০ দিনের কাজের লোকেদের কাজে লাগাতে হবে।’নদীর ভাঙন রুখতে কয়েকটি প্রস্তাবও পেশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘বন দফতর ৫ কোটি করে ম্যানগ্রোভ দুই ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে বসানো হোক। ভাঙন রুখতে নদীর পাড়ে ভ্যাটিভার ঘাস লাগানো হোক।’
দিঘায় সেচ দফতরের একটি ব্রিজ তৈরি করার কথা ছিল। মমতার দাবি তিনি যখনই জিজ্ঞেস করতেন, তখনই তাঁকে বলা হত, ‘আর ৬ মাস।’ একসময় রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের দায়িত্বে থাকা সেচ দফতরের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘৬ মাস কবে শেষ হবে?’ দ্রুত ওই সেতুর কাজ শেষ করার বার্তা দিয়েছেন তিনি।
ডিসেম্বরের মধ্যে গোটা দেশে টিকাকরণের লক্ষ্যমাত্রা কেন্দ্রের
এদিন চেনা ছন্দে কেন্দ্রকে আক্রমণ শানালেন তৃণমূলনেত্রী। ডিসেম্বরের মধ্যে গোটা দেশে টিকাকরণের লক্ষ্যমাত্রা কেন্দ্রের, ওটা সম্পূর্ণ গুজব। বিহারের ভোটের আগে বলেছিল সকলের টিকাকরণ করে দেব। ওদের কথার দাম নেই। ভাষণ দেওয়া সহজ। তারা টিকা পাঠাচ্ছে না রাজ্যকে। আর বলে দিচ্ছে, ডিসেম্বরের মধ্যে করে দেব। ৬ মাস লাগবে টিকাকরণে। রাজ্যের কাছেই নেই। রাজ্য সরকার নিজে থেকে ১৫০ কোটি টাকায় ভ্যাকসিন কিনেছে। ১.৪ কোটি হয়েছে। দিল্লি থেকে যা ইচ্ছে বলে কিন্তু কিছু করে না। সব রাজ্যকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দিতে হবে।
এও বলেন, নবীন পট্টনায়েক ফোন করেছিলেন। কেরলের মুখ্যমন্ত্রীও চিঠি দিয়েছেন। তাঁরা চাইছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়া উচিত। আমরা সম্মত হয়েছি।