প্রথম পাতা খবর দেশে-বিদেশে দেবী কালিকা পূজিতা হন নানা নামে, নানা রূপে…শুভ দীপাবলি

দেশে-বিদেশে দেবী কালিকা পূজিতা হন নানা নামে, নানা রূপে…শুভ দীপাবলি

329 views
A+A-
Reset

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

মানব সভ্যতার সবচেয়ে আদি তথা প্রাচীন আরাধনার নাম হল মাতৃপুজা বা শক্তিপুজা। এই আরাধনা সেই কোন প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে আজ অবধি যুগ যুগ ধরে হয়ে আসছে পরম্পরা ঐতিহ্য মেনে দেশে বিদেশে বিভিন্ন স্থানে।

এই মহাশক্তি দেবী মাতৃকার সাধনা বা আরাধনা আমরা দেখতে পাই আমাদের দেশে প্রাচীন সময়কাল থেকে। আমাদের প্রাগৈতিহাসিক ভারতবর্ষের ইতিহাসে, তিব্বতে, নেপালে, শ্রীলঙ্কায়, ভুটানে, আজকের বাংলাদেশে, মায়ানমার, ইয়াঙ্গন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, জাপানে, চিনে দেবী কালী বিভিন্ন রূপে, বিভিন্ন নামে, বিভিন্ন উপাচারে পূজিতা হন।

দেবী দুর্গার এক রূপ হলো এই দেবী কালিকা। এক কথায় বলা যায় মহাশক্তি মহামায়ার অভিন্ন রূপই এই দেবী কালিকা।

দেবী কালীর অস্তিত্ব হিন্দুশাস্ত্রের বাইরেও পাওয়া যায়। তবে ভিন্ন নামে। ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ মতে শ্রীকৃষ্ণ প্রথম দেবী কালীর উপাসনা করেছিলেন এবং নিজের রূপে কালীর রূপ ধারণ করেন– যার নাম হয়েছিল কৃষ্ণকালী। সেই রূপ দেখেছিলেন শ্রীরাধিকা স্বয়ং। রামায়ণেও দেবী কালিকার চামুণ্ডা রূপ পাওয়া যায় মহীরাবন বধের সময়ে।

তাছাড়া, এও জানা যায়, যে,মধু ও কৈটভ নামে দুই অশুভ শক্তিকে বিনাশ করার জন্য প্রজাপতি ব্রহ্মা দেবী কালীর আরাধনা করেছিলেন। দেবরাজ ইন্দ্র-ও দেবী কালীর উপাসনা করেছিলেন। দেবাদিদেব মহাদেবও দেবী কালীর উপাসনা করেছিলেন সমুদ্রমন্থন কালে।কারন,এই সমুদ্রমন্থনকালে কালিকা পুরাণ মতে যে তীব্র হলাহল কূট-বিষ উত্থিত হয়েছিল,তার প্রভাবে অনিবার্য ধ্বংস হয়ে যেত বিশ্বচরাচর। সেই প্রলয়ঙ্কর ধ্বংসের হাত থেকে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে রক্ষা করার জন্য সেই বিষ স্বয়ং দেবাদিদেব মহাদেব নিজে পান করে নীলকন্ঠ হয়েছিলেন এবং সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছিলেন। তখন দেবী কালিকা দেবাদিদেব মহাদেব-কে মা-তারা তথা মাতৃরূপে স্তন্যসুধা তথা স্তন্যামৃত পান করান এবং দেবাদিদেব-কে রক্ষা করেন।

এ তো গেল আমাদের দেশের কথা।আমাদের দেবী কালিকা-র মতো প্রাচীন গ্রীক সভ্যতায়, আজটেক সভ্যতায়, ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলিতে, স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, রাশিয়া, স্পেনে, ফিনল্যান্ডে, প্রভৃতি নানা স্থানে দেবী কালীর সদৃশ দেবীর আরাধনা, উপাসনা করা হয়। যেমন, গ্রীক দেশে এবং ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে প্রাচীনকাল থেকেই দেবী “রিয়া” বা দেবী “রিয়ানকলিকা”-র উপাসনা হয়। এই দেবীর রূপ আমাদের দেবী কালিকার মতোই। যুদ্ধ ও সংহারের দেবী রিয়া-কে পুজো করা হতো শ্বেতজবা, লালজবা, লালপদ্ম ও শালুকফুল দিয়ে। রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে দেবী কালীর মতই এক দেবীর উপাসনা করা হয়,যিনি “রাকিয়াস্তস্কিলিকা” বা “রা” নামে। এই দেবী সংহারের দেবী। এই দেবী “রিয়ানমন” নামেও পুজিতা হন।এনার স্বামীর নাম “ক্রানাস”। যিনি আমাদের মহাকালের মতো সবকিছু ধ্বংস করেন। ফলে অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায় আমাদের দেবী কালিকা এবং দেবাদিদেব মহাদেব-এর কাহিনির সঙ্গে।

আবার প্রাচীন স্পেনে,ল্যাটিন আমেরিকার কিছু জায়গাতে আরাধনা করা হতো দেবী “ক্যালিফা” বা দেবী “ক্যলিফিয়া”-র। মনে করা হয়,এই ক্যালিফা নাম থেকেই জন্ম হয়েছিল একটি দেশের, যার নাম হল… ক্যালিফোর্নিয়া।

মা কালীর মতই মেক্সিকোতেও এক দেবীর আরাধনার ইতিহাস পাওয়া যায়। প্রাচীন আজটেক সভ্যতার দেবী ছিলেন “কোটালিকাই”। এই দেবী ছিলেন ধ্বংস এবং সৃষ্টির দেবী। আবার আমাদের দেশেও মা কালী-কে ধ্বংস আর সৃষ্টি-র দেবী রূপে উল্লেখ করা হয়। আমাদের মা-কালী-র মতোই এই “কোটালিকাই” দেবীর গলায় নরমুন্ড মালা এবং কোমরে রয়েছে অসংখ্য সাপ।

ফিনল্যান্ডের কৃষ্ণবর্ণা দেবী…”কেলমা” বা “কালমা” সম্পূর্ণ আমাদের দেবী মা-কালীর মতো। আমাদের শ্মশান কালীর মতো তিনিও মৃতদের কবরের জায়গায় ঘুরে বেড়ান। এই দেবী দক্ষিণ ফ্রান্সেও পুজিত হন।

ইউরোপের আয়ারল্যান্ড দেশে র কালোরূপের দেবীর নাম “কোলিয়েক”। আবার আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড -কে বলা হতো “ক্যালিডোনিয়া” বা কালী প্রদত্ত ভূ-খণ্ড। আমাদের দেশে যেমন রোগ, ব্যাধি, ইত্যাদির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য রক্ষাকালী-র পুজো করা হয়,ঠিক তেমনই,আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, প্রভৃতি দেশেও এই কোলিয়েক দেবীর পুজো করা হয়।

আমাদের বাংলায় সুপ্রাচীন কালে কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ স্বপ্নের মধ্যে আজকের যে দেবী কালীর রূপ আমরা দেখি, সেই রূপের সন্ধান পেয়েছিলেন।

পরিশেষে, বলা যায়,যে আমাদের এই বিশ্বের সকল দেশের মানুষের মধ্যে একটা অন্ত্যমিল খুঁজে পাওয়া যায় এই দেবী কালিকার আরাধনায়,উপাসনায়।

এর সাথে,আর একটি তথ্য উল্লেখ করা দরকার,তা হল, সারা ভারতবর্ষে, তথা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে দীপাবলি বা দেওয়ালি উৎসব পালন করার পরম্পরা। কথিত আছে,দশেরাতে রাবন বধের পর রামচন্দ্র অযোধ্যায় ফিরেছিলেন এই সময়ে,আর সেই প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে কৃষ্ণপক্ষের নিকষকালো অন্ধকার দূর করতে চারিদিকে আলোকিত সুসজ্জিত পরিবেশ তৈরি করার উদ্দেশ্যেই এই দীপালোকের আয়োজন করা হয়েছিল,যা পরম্পরাগতভাবে আজও প্রবহমান।

শুভ দীপাবলির অভিনন্দন শুভেচ্ছা এবং সকলের ভালো থাকার শুভকামনা রইল। সকলে আনন্দে থাকুন, কিন্তু আতশবাজির বিপজ্জনক দিকে নজর রাখবেন, সদা সতর্ক থাকবেন।

আরও খবর

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

সম্পাদকের পছন্দ

টাটকা খবর

©2023 newsonly24. All rights reserved.