ভারতীয় শিল্প জগতে এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী অধ্যায়ের অবসান ঘটল। ৮৬ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন রতন টাটা, যিনি টাটা সন্সের চেয়ারম্যান এমেরিটাস এবং ভারতের অন্যতম প্রভাবশালী শিল্পপতি ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে দেশের কর্পোরেট জগতের একটি বড় অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল। রতন টাটা ছিলেন উদ্ভাবন, নেতৃত্ব এবং দারিদ্র্যমুক্ত ভারতের স্বপ্নের প্রতীক।
১৯৯১ সালে রতন টাটা যখন টাটা গ্রুপের দায়িত্ব নেন, তখন সংস্থাটি অনেকটা সংকটময় অবস্থায় ছিল। তাঁর দৃঢ় নেতৃত্বে এবং সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে টাটা গ্রুপ পরিণত হয় একটি বিশ্বমানের সংস্থায়। আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতকে বিশেষ মর্যাদায় পৌঁছে দিয়েছিলেন তিনি, বিশেষ করে ২০০৮ সালে যখন জাগুয়ার এবং ল্যান্ড রোভার ব্র্যান্ডগুলি টাটার মালিকানায় আসে।
তাঁর উদ্যোগে তৈরি হওয়া ‘টাটা ন্যানো’ গাড়ি সারা বিশ্বে আলোচিত হয়েছিল। ২০০৯ সালে যখন তিনি এই সস্তার গাড়ি বাজারে আনেন, তখন সারা বিশ্বে ভারতীয় উদ্ভাবন এবং সাশ্রয়ী মূল্যের প্রতীক হয়ে ওঠে এই গাড়ি।
রতন টাটার ব্যক্তিত্ব কেবলমাত্র একজন সফল শিল্পপতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। মানবিক গুণাবলী, পশুপ্রেম এবং সামাজিক সেবায় তাঁর অবদান অনন্য। বম্বে হাউস, টাটা গ্রুপের সদর দফতর, তিনি একটি আশ্রয়স্থলে পরিণত করেছিলেন যেখানে পথ কুকুররা আশ্রয় পেত। এটি তাঁর মানবিকতার একটি স্মরণীয় উদাহরণ হিসেবে থেকে যাবে।
সামাজিক মাধ্যমে তাঁর অনুরাগীর সংখ্যা ছিল অসাধারণ। তাঁর সরল, হৃদয়গ্রাহী পোস্টগুলি লক্ষ লক্ষ মানুষের মনে জায়গা করে নিত। জীবনের শেষ পর্যন্ত তিনি সামাজিক এবং মানবিক দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মন জয় করে গেছেন।
তাঁর ব্যক্তিগত জীবনেও রতন টাটা ছিলেন অত্যন্ত মিতভাষী এবং বিনয়ী। একাধিকবার বিয়ের কাছাকাছি পৌঁছালেও, তা সম্ভব হয়নি। তাঁর জীবনের প্রেমের কাহিনীও অনেকের কাছে এক রহস্যের মতো রয়ে গেছে।
তাঁর কর্মজীবনে অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন রতন টাটা। ২০০০ সালে পদ্ম ভূষণ এবং ২০০৮ সালে পদ্ম বিভূষণ সম্মানে তাঁকে সম্মানিত করা হয়েছিল। তিনি তাঁর জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে উদ্ভাবন এবং জনকল্যাণের নতুন মাত্রা যোগ করেছিলেন।
রতন টাটার মৃত্যু শুধু একটি শিল্পপতির নয়, একজন মানবিক ব্যক্তিত্বের প্রস্থান। ভারত এবং সারা বিশ্বের মানুষের হৃদয়ে তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন তাঁর কাজের মাধ্যমে।