‘কলকাতার যীশু’, ‘উলঙ্গ রাজা’, ‘অমলকান্তি’-র প্রণেতা, শতবর্ষী কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

১৯৪৩ সাল থেকে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বাংলা সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন গত শতকের নব্বইয়ের দশক অবধি। আর তিনি বাংলা কবিতা ও সাহিত্যের সাথে যুক্ত ছিলেন আমরণ।

১৯২৪ সালের ১৯শে অক্টোবর নীরেন্দ্রনাথ অবিভক্ত বাংলার ফরিদপুর জেলার চান্দ্রাগ্রামের ভাঙ্গাতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর মা বাবা কাজের সুত্রে তখন থাকতেন কলকাতায়। তাই শৈশবে নীরেন্দ্রনাথ তাঁদের গ্রামের বাড়িতে দাদু (লোকনাথ চক্রবর্তী) ঠাকুমার কাছে থাকতেন। পরে দাদু যখন মারা যান,তখন নীরেন্দ্রনাথ ১৯৩০ সালে কলকাতায় মা বাবার কাছে চলে আসেন।

শুরু হয় পড়াশোনা। প্রথমে বঙ্গবাসী স্কুলে,এবং পরে মিত্র ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হন তিনি।প্রবেশিকা পরীক্ষা পাস করার পরে তিনি ভর্তি হন বঙ্গবাসী কলেজ-এ আই.এ.পড়াশোনা এবং পরীক্ষায় পাশ করেন এবং সেন্ট পলস কলেজ থেকে বি.এ. পরীক্ষায় পাশ করেন। ১৬ বছর বয়সে নীরেন্দ্রনাথ একটি পত্রিকা সম্পাদনা করেন,নাম ছিল “শ্রীহর্ষ”।

১৯৪৩ সালে নীরেন্দ্রনাথ সাংবাদিকতার কাজ শুরু করেন। পত্রিকার নাম ছিল “দৈনিক প্রত্যহ”। তারপর তিনি ” সত্যযুগ” পত্রিকায়, “মাতৃভুমি” পত্রিকায়, “স্বরাজ” পত্রিকায়, “ভারত” পত্রিকায় যুক্ত ছিলেন। এরপর তিনি যুক্ত হন “ইউনাইটেড প্রেস অফ ইন্ডিয়া”- তে। ১৯৫১ সালে নীরেন্দ্রনাথ যুক্ত হন আনন্দবাজার পত্রিকায়। পরে তিনি শিশু কিশোর দের জন্য ” আনন্দমেলা” পত্রিকার সম্পাদকও হন।

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে অন্যতম হল “নীল নির্জন”, ” নীরক্ত করবী”, “আজ সকালে”, ইত্যাদি। আত্মসর্বস্ব আধুনিক সভ্যতার নির্লজ্জ রূপ দেখে ব্যাথিত কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী রূপকের ছলে প্রশ্ন করেছেন শাসক শক্তির কাছে –” রাজা তোর কাপড় কোথায়..?”

মানুষের কবি,মানবতার কবি,অখণ্ড দৃষ্টিতে মানুষের মধ্যেই ঈশ্বরকে দেখেছেন।তাই তিনি লেখেন–” স্তব্ধ হয়ে সবাই দেখছে/ টালমাটাল পায়ে/ রাস্তার একপার থেকে অন্যপারে হেঁটে চলে যায় সম্পূর্ণ উলঙ্গ এক শিশু। (কলকাতার যীশু)।

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ১৯৫৮ সালে উল্টোরথ পত্রিকা সম্মান পান।এরপর ১৯৭০ সালে পুরস্কৃত হয়েছিলেন “তারাশঙ্কর স্মৃতি” পুরস্কারে। ১৯৭৪ সালি তিনি সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার পান।১৯৭৬ সালে “আনন্দ শিরোমণি” সম্মানে ভূষিত হন। ২০০৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীকে “ডি.লিট.সম্মান প্রদান করেন। ২০১৭ সালে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীকে “বঙ্গবিভুষণ” সম্মানে সম্মানিত করেন।

আমাদের বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির এক অনন্যসাধারণ পুরোধাপুরুষ সাংবাদিক এবং কবি সাহিত্যিক নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বয়সজনীত কারনে ২০১৮ সালে ২৫ শে ডিসেম্বর কলকাতার একটি বেসরকারি নারসিং হোমে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
অপূরনীয় ক্ষতি হয় বাংলা সাহিত্য জগতের।

কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী-এর জন্মশতবর্ষতে রইল আমাদের প্রণাম।

Related posts

কিন্তু মৃত্যু যে ভয়ংকর, সে-দেহে তাহার কোন প্রমাণ ছিল না

২৭ শে এপ্রিল মানে জাগা, জেগে থাকা, জাগানো…

চৈত্র বৈশাখ মধুমাধবের মায়ায় মায়ায়