প্রথম পাতা প্রবন্ধ অমরত্ব রয়ে গেল আপনার জন্য, ধর্মেন্দ্র সাহাব, সাত দশকের উজ্জ্বল নক্ষত্রের পতন

অমরত্ব রয়ে গেল আপনার জন্য, ধর্মেন্দ্র সাহাব, সাত দশকের উজ্জ্বল নক্ষত্রের পতন

28 views
A+A-
Reset

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

ভারতীয় চলচ্চিত্রের একটানা প্রায় ৭০ বছরের স্টারডম, রোম্যান্টিক হিরো ধর্মেন্দ্র পাড়ি দিলেন চিরশান্তির দেশে—অনন্তলোকে।

ধর্মেন্দ্র—আসল নাম ধর্মেন্দ্র কেওয়ালাল কৃষণ দেওল। মাত্র ১৯ বছর বয়সে, ১৯৫৪ সালে তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন। জন্ম ১৯৩৫ সালের ৮ ডিসেম্বর, পাঞ্জাবের নাসরালির সাহনেওয়াল গ্রামের এক শিক্ষিত জাট পরিবারে। মায়ের নাম সতবন্ত কৌর, এবং বাবা কেওয়ালাল কৃষণ দেওল ছিলেন একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তাঁদের আদি বাড়ি ছিল অবিভক্ত পাঞ্জাবের লুধিয়ানার পাকহোয়াল তহসিলের রাইকট এলাকার দাঙ্গোঁ গ্রামে।

শিক্ষাজীবন শুরু করেন লুধিয়ানার লালটন কালাঁ স্কুলে। এরপর ফাগোয়ারা থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে কলেজে ভর্তি হন। কলেজে পড়াকালীন একটি অভিনয়ের ট্যালেন্ট সার্চ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রথম হন তিনি, আর সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর অভিনয়যাত্রা।
১৯৫৪ সালে পার্শ্বচরিত্রের মাধ্যমে অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ, আর ১৯৬০ সালে দিল ভি তেরা, হাম ভি তেরা ছবিতে নায়ক হিসেবে প্রথম পর্দায় আসেন।

সারা জীবনে তিনি ৩০০–রও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেছেন ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রায় সব যুগের মহানায়িকারা—নাদিরা, নূতন, বৈজয়ন্তীমালা, মধুবালা, লীলা চন্দ্রাভারকর, তনুজা, আশা পারেখ, নন্দা, সাধনা, সায়রা বানু, ববিতা, রাখী, শর্মিলা ঠাকুর, মমতাজ, রেখা, জিনাত আমান, ওয়াহিদা রহমন, শাবানা আজমি, জয়া ভাদুড়ী (বচ্চন), শ্রীদেবী, সুচিত্রা সেন, সুপ্রিয়া দেবী, হেমা মালিনী (পরবর্তীতে তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী), প্রমুখ।

ধর্মেন্দ্রর একটি বাংলা ছবিতেও অভিনয়ের নজির রয়েছে। সাহিত্যিক জরাসন্ধের কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত ‘পাড়ি’ (১৯৬৬) ছবিতে তিনি অভিনয় করেন। পরিচালনায় ছিলেন জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়, সঙ্গীতে সলিল চৌধুরী, প্রযোজনা ও নায়িকার ভূমিকায় প্রণতি ঘোষ। পরে এই ছবিটি ১৯৭০ সালে হিন্দিতে আনোখা মিলন নামে পুনর্নির্মিত হয়।

অভিনয়জীবনে পেয়েছেন বহু সম্মান—
১৯৯৭ সালে Filmfare Lifetime Achievement Award,
২০১২ সালে ভারত সরকারের পদ্ম ভূষণ সম্মান,
এ ছাড়াও পেয়েছেন অসংখ্য দর্শকের অগাধ ভালোবাসা।

তাঁর ৩০০ ছবির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়—অমর ক্লাসিক ‘শোলে’ (১৯৭৫)। এ ছাড়া জীবনমৃত্যু, আয়া সাওয়ান ঝুম কে, মেরা গাঁও মেরা দেশ, গীতা অউর সীতা, রাজাজানি, ধর্মবীর, চাচা ভাতিজা, ড্রিম গার্ল, গুলামী, হুকুমত, আগ হি আগ, এলান–ই–জং, বন্দিনী, হকিকত, রেশম কি ডোরি, চুপকে চুপকে, অনুপমা, দ্য বার্নিং ট্রেন—সহ অসংখ্য কালজয়ী ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।

ব্যক্তিগত জীবনে ধর্মেন্দ্র দু’বার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন—প্রথম বিবাহ ১৯৫৩ সালে প্রকাশ কৌর-এর সঙ্গে, দ্বিতীয় বিবাহ ১৯৭৫ সালে হেমা মালিনী-র সঙ্গে।

আক্ষরিক অর্থেই বলা যায়, ২৪ নভেম্বর ২০২৫ ভারতীয় চলচ্চিত্রের আকাশ থেকে হারিয়ে গেল এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।
তাঁরই শোলে ছবির বিখ্যাত সংলাপ দিয়ে যেন বিদায় জানাতে ইচ্ছে করে—
“তুমকো মেরা আখরি সালাম… গুডবাই।”

অমরত্ব রয়ে গেল আপনার জন্য, ধর্মেন্দ্র সাহাব—
আপনি থাকবেন প্রজন্মের পর প্রজন্মের হৃদয়ের অন্তরে, সিনেমার রুপালি স্মৃতির ভান্ডারে।

আরও খবর

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.