জীবন থেকে নেওয়া এক মানবিকতার কাহিনী…গল্প হলেও সত্যি

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

৪৫/৪৬ বছরের রমেশ।পেশায় দিনমজুর।স্ত্রী-সন্তান নিয়ে গরীবের সংসার। বেশ দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের জীবনের সুখ দুঃখের টানাটানি নিয়ে চলছিল জীবনের ধারা।হঠাৎ মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। বেশ কিছুদিন শরীরে নানা সমস্যা হচ্ছিল।হাসপাতালে গেল,ডাক্তার দেখানো হলো, পরীক্ষা নিরিক্ষার পর ধরা পড়লো রমেশের ক্যান্সার।

ক্যান্সার ধরা পড়ায় রমেশ পুরকায়স্থ( নাম পরিবর্তন করা হয়েছে) আসামের ধর্মনগরের বাসিন্দা চিকিৎসার জন্য আসতে শুরু করলেন শিলচরের কাছাড়ের ক্যান্সার হাসপাতালে। যাতায়াতের খরচ,মাঝে মধ্যে ওষুধ কেনা,পাশাপাশি সংসার চালানো..একেবারে জেরবার হয়ে গিয়েছিলেন রমেশ।হাসপাতাল থেকে ওষুধ ফ্রীতে পাওয়া যায়,তবু কোন কোন ওষুধ বাইরে থেকে কিনতেই তো হয়। খরচের অবস্থা খুবই খারাপ। আর পারা যাচ্ছেনা।

২০০৮ সাল। শেষ ডোজটি নেওয়ার পরে ডাক্তার যখন রমেশকে প্রেসক্রিপশনে পরের তারিখটা লিখতে যাবেন,তখনই রমেশ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে… হাতজোড় করে ডাক্তারকে বলে–আর তারিখ দেবেন না ডাক্তারবাবু, যা পরিনতি হবার হবে।”

রমেশের পাশে তখন দাঁড়িয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী.. সেও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে…।

কিন্তু কেন?? কেন??

আসলে রোগের চিকিৎসা করাতে গিয়ে সেই ধর্মনগর থেকে বারবার এই শিলচরে আসা-যাওয়ার খরচ,থাকা-খাওয়ার খরচ,মাঝেমধ্যে ওষুধ কেনা..সবমিলিয়ে রমেশ আজ সর্বস্বান্ত।

ডাক্তার জানতে চাইলেন,কেন রমেশ তার চিকিৎসার জন্য পরের তারিখটা লিখতে বারন করছেন। রমেশ বলেন.. “এবার-ই আসতে চাইছিলাম না, কি করে আসবো? কাজকম্ম সব বন্ধ আজ কতোদিন।”

ঘটি-বাটি দু-চারটে ব্রোঞ্জের গয়না যা ছিল,সব বিক্রিবাটা করে রমেশ চিকিৎসা করাচ্ছে।এখন বাকি শুধু ছিটেবেড়ার দেয়ালে টিনের চালের ঘরটা। যা ধারদেনা করেছে,সেটাও বিক্রি করতে হবে। কিন্তু এখনো খদ্দের পায়নি। তাই এবারে রমেশ তার ৭বছরের একমাত্র ছেলেটাকে এলাকার একজনের কাছে বন্ধক দিয়ে ৫হাজার টাকা নিয়ে এসেছে। ফিরে গিয়ে ঘর বিক্রি করে সেই টাকা থেকে ৫হাজার টাকা সুদ সমেত ফেরত দিয়ে ছেলেকে মুক্ত করবে।

রমেশের সব কথা শুনলেন ডাক্তার।ডেকে পাঠালেন হাসপাতালের CEO কল্যান চক্রবর্তীকে।ডাক্তার তাঁর নিজের account থেকে ৫ হাজার টাকা রমেশকে দিতে বললেন,আর জানালেন যে এরপর রমেশের পুরো চিকিৎসা বিনা খরচে হবে।

Related posts

কিন্তু মৃত্যু যে ভয়ংকর, সে-দেহে তাহার কোন প্রমাণ ছিল না

২৭ শে এপ্রিল মানে জাগা, জেগে থাকা, জাগানো…

‘কলকাতার যীশু’, ‘উলঙ্গ রাজা’, ‘অমলকান্তি’-র প্রণেতা, শতবর্ষী কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী