মাননীয়/মাননীয়া, একটু পড়ুন এই লেখা আর একটু ভাবুন…

এইডি। প্রতীকী ছবি

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

২০২১ সালে ইউরো কাপ খেলা চলাকালীন ডেনমার্কের ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ান এরিকসন মাঠের মধ্যে হঠাৎ “সাডেন কার্ডিয়াক এরেস্ট”-এ আক্রান্ত হয়েও মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন শুধুমাত্র একটি মেশিনের সৌজন্যে।

আর একটি ঘটনা ঘটেছে এই বছর ২০২৩- এ। ইউরো ফুটবল ম্যাচ চলাকালীন একজন গোলকিপার-কে দেখা গেল, যে, সে মাঠের পাশে রাখা একটি মেশিন গ্যালারিতে দর্শকদের দিকে ছুঁড়ে দিচ্ছে। গ্যালারির এক দর্শকের ” সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট -র জন্যই তিনি এই কাণ্ড করেছেন। ফলে সেই দর্শক প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন।

মেশিনটি কি? মেশিনটির নাম অটোমেটেড এক্সটারনাল ডি-ফিব্রিলেটর (Automated external defibrillator /সংক্ষেপে AED/ আমাদের দেশে দাম এক লক্ষ টাকার কম।)

সম্প্রতি একটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের খেলায়। খেলাটি হচ্ছিল কলকাতা লিগের প্রিমিয়ার ডিভিশনের একটি খেলা।একজন দর্শক সাডেন কার্ডিয়াক এরেস্ট-এ আক্রান্ত হয়ে কোনও রকম চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেছেন। পরে এ ওর ঘাড়ে,ও তার ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে। তাই বলি,এই চাপান উতোর করে কোনও লাভ নেই।

আমাদের সরকারি, বেসরকারি,এনজিও, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা,ইত্যাদি সহ সমস্ত মহলের উচিত যে এই মেশিন-টির বন্দোবস্ত করা এবং যথাস্থানে রাখা। এই মেশিন চালানোর জন্য প্রশিক্ষিত প্যারামেডিকেল স্টাফ থাকলে ভালো। এমনকি একজন সাধারণ মানুষও মেশিনের নির্দেশ শুনে শুনে এই মেশিন চালাতে পারবেন। পরে আক্রান্তকে যথাযথ চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে।

ইউরোপ, আমেরিকা,এশিয়ার অনেক দেশেই এই মেশিন রাস্তায়,শপিং মলে, ক্লাবে, পার্কে, থানায়, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে, জলসায়, জনসমাবেশের ময়দানে,সামাজিক অনুষ্ঠান বাড়িতে, স্টেডিয়ামে, দূরপাল্লার ট্রেনে, রেলস্টেশনে, লোকাল ট্রেনের প্রতিটি স্টেশনে, স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে, অফিসে, বিভিন্ন ব্যবসায়ী কেন্দ্রে, এয়ারপোর্টে, ইত্যাদি জনসমাগম ঘটে এমন সব জায়গায় রাখা থাকে।

স্থায়ীভাবে রাখার জন্য কেনা যেতে পারে,আবার,অল্প সময়ের প্রয়োজনের জন্য ভাড়াতেও নেওয়া যেতে পারে। যেমন অক্সিজেন সিলিন্ডার, ইত্যাদি, ইত্যাদি।

আমাদের দেশেও কি এই ব্যবস্থা সাধারণ মানুষের জন্য করা যায়না? কেন্দ্র রাজ্য,সরকারি বেসরকারি সংস্থাগুলোতে,বিভিন্ন ধরনের ইনস্টিটিউটে পাবলিক ওয়েলফেয়ার ফান্ড বরাদ্দ থাকে,সেখান থেকেই এই ব্যবস্থা করা যেতে পারে।প্রশিক্ষিত প্যারামেডিকেল স্টাফ হিসাবে বেশ কিছু কর্মসংস্থান ঘটতে পারে। বিভিন্ন মেডিকেল শপগুলি এই মেশিন রেখে অনুষ্ঠানে ভাড়া দিতে পারেন ইত্যাদি,ইত্যাদি। তবে তাদের মাথায় থাকতে হবে এটি মানুষের সেবার জন্য করা হচ্ছে।ব্যবসায়ীক মানসিকতা থাকুক,তবে তাতে অবশ্যই যেন একটা পরিমিতিবোধ থাকে।

জনকল্যাণমুখী উন্নয়ন-ই পারে একটি দেশের অগ্রগতিকে তরান্বিত করতে। শুধু প্রয়োজন একটু ভাবনা চিন্তার, খানিকটা উদ্যোগ -উদ্যম আর মানুষের মঙ্গলের জন্য সদিচ্ছা।

এই ব্যাপারে ভাবনা চিন্তা শুরু হোক। সেটা হলেই কিন্তু ধীরে ধীরে সেই ভাবনা চিন্তাগুলো বাস্তবে রূপায়িত হবেই, এই বিশ্বাস আমাদের সকলেরই আছে।

এই মেশিন কেনা বেচায়,রক্ষণাবেক্ষণে,পরিচালনায় কোনো রকমের অসাধুতা যেন না থাকে,সেটা দেখাই হবে আমাদের সব ক্ষেত্রেই মানবিক দায়বদ্ধতা। সেই দায়বদ্ধতার প্রতি সম্মান রেখেই বিনম্র আবেদন– একটু ভাবুন,প্লিজ একটু ভাবুন এবং উদ্যোগ নিন।

সকলে ভালো থাকুন, সকলকে ভালো রাখুন।

Related posts

কিন্তু মৃত্যু যে ভয়ংকর, সে-দেহে তাহার কোন প্রমাণ ছিল না

২৭ শে এপ্রিল মানে জাগা, জেগে থাকা, জাগানো…

‘কলকাতার যীশু’, ‘উলঙ্গ রাজা’, ‘অমলকান্তি’-র প্রণেতা, শতবর্ষী কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী