প্রথম পাতা প্রবন্ধ উপন্যাসের মতো ঘটনাবহূল জীবন ছিল বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের

উপন্যাসের মতো ঘটনাবহূল জীবন ছিল বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের

2.9K views
A+A-
Reset

পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়

বোধহয় তাঁর এই পথ চলাতেই ছিল আনন্দ।তাই বিশ্বগ্রাসী দৃষ্টি দিয়েই তিনি দেখেছিলেন সমকালীন মানুষদের,তাদের হাসি কান্না,সুখ দুঃখের জীবনের কথা,আর দেখেছিলেন মানুষের জীবনের সাথে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িয়ে থাকা প্রকৃতির নানান রূপ,নানান মুহূর্তগুলিকে।

“খুলিলে মনের দ্বার না লাগে কপাট”– কিম্বা ” আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া,বুকের মাঝে বিশ্বলোকের পাবি সাড়া..” এই কথাগুলির মূর্ত প্রতীক ছিলেন বিভূতিভূষণ।

১৮৯৪ সালের ১২ ই সেপ্টেম্বর আজকের উত্তর ২৪ পরগনার কাঁচড়াপাড়ার কাছে মুরারীপুকুর এলাকার ঘোষপাড়ায় মামারবাড়িতে বিভূতিভূষণের জন্ম। যদিও আদি বাড়ি ছিল বসিরহাটের পাতিসর গ্রামে। তাঁর পিতামহ সেখান থেকে চলে আসেন বনগ্রাম মানে বনগাঁতে। সেখানে তিনি কবিরাজি করতেন এবং পাকাপাকি ভাবে বসবাস করতেও শুরু করেন।সেইজন্য বিভুতি ভূষনের পৈতৃক ভিটে বলা যেতে পারে বনগাঁর বাড়িকে।

বাবার নাম ছিল মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় আর মায়ের নাম ছিল শ্রীমতী মৃণালিনী দেবী।

প্রথম জীবনে গ্রামের পাঠশালাতে পড়াশোনা শুরু করেন, তারপর স্থানীয় স্কুল থেকে ১৯১৪ সালে এন্ট্রান্স পাশ করে কলকাতায় ১৯১৪ সালেতেই তিনি চলে আসেন এবং রিপন কলেজ (এখনকার সুরেন্দ্রনাথ কলেজ,শিয়ালদহ) থেকে ১৯১৬ সালে আই.এ পরীক্ষায় পাশ করেন, ১৯১৮ সালে বি.এ পাশ করেন প্রথম বিভাগে।তারপর ১৯১৯ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়তে আইন নিয়ে এম.এ পড়া শুরু করেন। কিন্তু খুব গরীব ঘরের ছেলে ছিলেন তিনি,তার ওপর বাবা মারা গেছেন,তাই আর পড়াশোনা না করে রোজগারের চেষ্টা শুরু করেন। সেই বছরেই তিনি হুগলির জাঙ্গীপাড়ায় দ্বারকানাথ হাই স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন।

তারপর তিনি বিয়ে করেন ১৯১৯ সালে।স্ত্রীর নাম ছিল শ্রীমতী গৌরী দেবী।কিন্তু,বিয়ের এক বছরের মধ্যেই অসামান্যা সুন্দরী গৌরী দেবী মারা যান।স্ত্রীর শোকে মুহ্যমান হয়ে তিনি সংসার ছেড়ে কিছুদিন সন্ন্যাসীর জীবন অতিবাহিত করেন।পরবর্তীতে তিনি অবশ্য আবার সাংসারিক জীবনে ফিরে আসেন।বিভিন্ন জায়গাতে বিভিন্ন সময়ে তিনি চাকরীর জন্য ঘুরেছেন।শিক্ষকতা করেছেন,গোরক্ষা সমিতির প্রচারকের কাজ করেছেন,জমিদারের এস্টেটের ম্যানেজারী করেছেন,ইত্যাদি।ঘুরেছেন বহু জায়গাতে,দেখেছেন বহু মানুষ,অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন অনেক। জীবনের প্রায় মাঝ বয়সে তিনি আবার বিয়ে করেন,এই দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম ছিল শ্রীমতী রমা দেবী। এক উপন্যাসের মতো ঘটনা বহুল জীবন ছিল তাঁর।

বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় মানে প্রকৃতির কাছে শিল্পীর দায়বদ্ধতা, প্রকৃতি আর জীবনের মেল বন্ধন। বিভূতিভূষণ এর নাম করলেই চোখের সামনে ভাসে আমাদের শৈশব,যৌবনের অনেক স্মৃতি। তাঁর সৃষ্ট চরিত্র “অপু” সে যেন আমার-তোমার মুখ।ইংরাজীতে একটি কথা আছে “Man is curious by nature..”, হ্যাঁ, ঠিকই তাই,মানুষের সহজাত কৌতুহলের মধ্যেই প্রতি মুহুর্তে  জন্ম নেয় জিজ্ঞাসা..,সে খুঁজে  চলে তার হাজারো প্রশ্নের উত্তর নিজের ভিতর,সমকালীন জগতের মুখোমুখি হয়ে।

আসলে বিভূতিভূষণের “পথের পাঁচালি”-র অপু এবং বিভূতিভূষণ নিজে বোধহয় এক। তিনি এই বিশ্ব-গ্রাসী মন পেয়েছিলেন তাঁর বাবা মহানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে।

যদি তাঁর ছোটোবেলার খবর নিই,তাহলে জানতে পারি,যে,বিভূতিভূষণের প্রথম পড়াশোনা শুরু বাবা মহানন্দের কাছে। এই পড়া নিয়ে একটি মজার ঘটনা আছে। মাসের প্রথমেই বাবা মহানন্দ বাবু ছেলের পড়ার জন্য সাড়ে সাত আনা পয়সা দিয়ে বিদ্যাসাগরের  “বর্ণপরিচয়” বই এক মাসের কিনে রাখতেন। রোজ সকালে এক পয়সার একটা “বর্ণপরিচয়” দিয়েই পড়া শুরু হোত,সন্ধ্যের পরে সেই বিয়ের হতদ্দশা হোত,আর  দু-তিনদিন পরে সে আর বই থাকতো না,হতো ছেঁড়া কাগজের টুকরো। এরপর গ্রামের হরি রায়ের পাঠশালা, তারপর হুগলি জেলার সাগঞ্জ-কেওটাতে, সবশেষে কলকাতার বৌবাজারের আরপুলি লেন।!

বিভূতিভূষণের সেই সময়ের একাকীত্বের যে বেদনা,তারও উল্লেখ করেন নীরোদচন্দ্র। সেখানেই জানা যায় যে প্রায়শই বন্ধুর কাছে স্ত্রী-র মারা যাওয়ার কথা বলতেন বিভূতিভূষণবন্দ্যোপাধ্যায়। নীরোদচন্দ্র বন্ধু বিভূতিভূষণের দারিদ্র্যের কথা শুনতেন খুব আন্তরিকভাবে। পরে তিনিই বলেছেন যে “অপরাজিত”-র অপু-ই তাঁর কাছে স্বয়ং বিভূতিভূষণ। তিনি বলেছেন,বন্ধু বিভুতি ছিলেন অত্যন্ত বাস্তববাদী এবং স্থিতধী স্বভাবের। জীবনের নানান যুদ্ধেও তিনি কখনোই হতাশায় ভোগেননি। তিনি সকলের প্রতি সংবেদনশীল এবং সহানুভুতিশীল ছিলেন। সরলতাই ছিল তাঁর চরিত্রের প্রাণ।

বিভূতিভূষণের স্কুলের নাম ছিল বনগ্রাম (বনগাঁ) উচ্চ ইংরাজি বিদ্যালয়। যদিও তিনি পাঁচ বছর বয়স থেকেই বাবার কাছে সংস্কৃত এবং ব্যাকরন পাঠ নিয়েছিলেন।তবু  তাঁর মায়ের ইচ্ছেতেই তিনি ঐ স্কুলে ভর্তি হন। এই নিয়ে একটি ঘটনায় জানা যায় যে,তখন বাবা মহানন্দ বাড়িতে ছিলেন না। ভীষন অভাব-অনটনের মধ্যে দিয়ে সংসার চলছে। বিভূতিভূষণদেখতেন পাড়ার অন্যান্য সমবয়সী ছেলেরা স্কুলে ভর্তি হয়ে স্কুলে যাচ্ছে। তিনি মায়ের কাছে আবদার করলেন স্কুলে ভর্তির জন্য।কিন্তু মায়ের কাছে তখন সংসার চালোনোই ছিল এক সমস্যার,তার ওপর স্কুলে ভর্তি?  কি করে হবে!!?? শেষে মা মৃণালিনী দেবী লক্ষীর ঝাঁপি থেকে সিঁদুর মাখানো কয়েকটি টাকা দিয়ে ছেলেকে কোন এক ইংরাজি বছরের মাঝামাঝি স্কুলে ভর্তি করার জন্য ছেলের হাতে তুলে দিলেন।

কিন্তু,প্রথম ক’টা দিন ভয়েতে স্কুলের গেটের কাছে গিয়েই আবার বাড়ি ফিরে এসেছিলেন ছেলে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক চারুচন্দ্র মুখোপাধ্যায়,বিষয়টি তাঁর নজর এড়ায়নি, তিনি একদিন ডেকে পাঠালেন ছেলেটিকে।ভয়ে ভয়ে ছেলেটি  গেল, তার হাতে সেই সিঁদুর মাখানো টাকাগুলি দেখে চারু বাবু আসল ঘটনা জানতে চান।ছেলেটির কাছে সব শুনে  তাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে নেন এবং বেতন মাফ করে দেন। বিভূতিভূষণযখন অষ্টম শ্রেনীতে, তখন বাবা মহানন্দ মারা যান। শুরু হয় বেঁচে থাকার লড়াই।আবার পড়াশোনাও চলতে থাকে।

তখন বিভূতিভূষণ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.এ (আইন)-এর ছাত্র।থাকেন কলকাতার বৌবাজারের মেসে,বন্ধুত্ব হোল নীরোদচন্দ্র চৌধুরীর সঙ্গে। একেবারে হরিহরাত্মা। পরে এই কথার প্রামান্যতা পাওয়া যায় নীরোদচন্দ্রের লেখা বই ” দাই হ্যান্ড গ্রেট অ্যানার্ক্”-এ।

নীরোদচন্দ্র তখন অবিবাহিত, আর বিভূতিভূষণ স্ত্রী গৌরীদেবীর অকাল প্রয়ানে সদা- বিসন্ন,বিমর্ষ, বিচলিত। তবু তারই মধ্যে তিনি লিখছেন এক কাহিনী। কিন্তু তার গতি অত্যন্ত শ্লথ।বন্ধু নীরোদ চন্দ্র সেই লেখা শেষ করার জন্যে অনুপ্রানিত করলেন বন্ধুকে। এই অনুপ্রেরনা তিনি দিয়েছিলেন একটানা সাড়ে তিন বছর ধরে। নীরোদচন্দ্র চৌধুরীর লেখাতেই পাওয়া যায়.. “১৯২৮ সালে প্রকাশিত তাঁহার প্রথম উপন্যাস তাঁহার আসন প্রতিষ্ঠিত করিয়া দিল এবং এখন ঐ গ্রন্থটির সত্যজিৎ রায় -কৃত চলচ্চিত্র রূপ সারা বিশ্বে সমাদৃত হইয়াছে। ১৯২৪- কয়েক পৃষ্ঠা লিখিয়াই তিনি আমাকে পড়িয়া শুনাইয়াছিলেন…১৯২৮-এ উহা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হইবার পর আমি এক প্রকাশক খুঁজিয়া পাই যিনি উহা গ্রন্থাকারে ছাপিতে সম্মত হন।”

পরে রমাদেবীর পক্ষ থেকে বিয়ে করার প্রস্তাব এলে বয়সের ব্যবধানের জন্য বিভূতিভূষণ অরাজী ছিলেন।বলেও ছিলেন তাঁর প্রথম বিয়ের কথা,বলেও ছিলেন বয়সের তফাতের কথা,কিন্তু রমা দেবী সমস্ত রকমের বাধা তুচ্ছ করে বিয়ে করতে বদ্ধ- পরিকর ছিলেন। তাই ১৯৪০ সালে তাঁদের বিয়ে হয়।

বিভূতি ভূষণেরপ্রতিদিনের রোজনামচা ছিল ভোর বেলায় উঠে ইছামতীতে চান করতে যাওয়া, তারপর ফিরে সকাল ৭ টায় সকালের জল খাবার খেয়ে লিখতে বসতেন। ৯ টায় স্কুলে যেতেন,তখন তিনি গোপালনগর উচ্চ ইংরাজি  বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। বিকালে স্কুল থেকে ফিরে সামান্য কিছু খেতেন।তারপর  আশেপাশে ঘুরতে বেরোতেন।

কখনো কখনো সন্ধ্যেতে প্রতিবেশীদের ছেলেমেয়েদের পড়াতেন।রাতে খাওয়ার পর আড্ডা দিতে আবার বাইরে যেতেন,ফিরতেন মাঝরাতে। প্রকৃতিকে দেখতেন মনের আনন্দে,অচেনার আনন্দে।

ভাষাচার্য সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, ” বিভুতিভূষণ সার্থক-কর্মা দিব্যদৃষ্টি সম্পন্ন লেখকের মতো প্রকৃতি আর মানুষ এই দুইটি প্রধান বিষয় বা বস্তু নিয়েই যা কিছু বলবার তা বলে গিয়েছেন।”

সত্যিই তাই।প্রকৃতি আর মানুষ নিয়ে তিনি বাস্তব ছবি তৈরি করতেন লেখনীতে।

“পথের পাঁচালী”-তে অপু- দুর্গার আশ-শ্যাওড়া গাছের ফল খাওয়ার কথা। জন্মে থেকে তারা কোনদিন তো কোন ভাল জিনিষ খেতে পায়নি। তাই সেই ফলের মিষ্টি আস্বাদ পেতে চায় তারা। তাদের তো মিষ্টি কিনে খাবার সামর্থ নেই। আবার, “তালনবমী” গল্পে গোপাল আগের দিনের রাতে স্বপ্ন দেখেছিল,সেই স্বপ্ন যেখানে পেট ভরে খাওয়ার কথা… ” “খোকা,কাঁকুড়ের ডালনা আর নিবি? মুগের ডাল বেশী করে মেখে নে মেখে নে….খোকা তাল কুড়িয়ে দিয়েছিলি,তাই পায়েস হোল! আরো পায়েস নে,বেশী করে নে, নে।খা,খা,– খুব খা—আজ যে তালনবমী রে…”।

তিনিই লিখছেন..” লুব্ধ দরিদ্র ঘরের বালক বালিকাদের জন্য তাই করুণাময়ী বনদেবীরা বনের তুচ্ছ ফল ফুল মিষ্টি মধুতে ভরাইয়া রাখেন।” সত্যিই তো তাই।যাদের মিষ্টি কিনে খাবার জো নেই,তাদের জন্য প্রকৃতি তার বুকে ভরে রেখে দিয়েছে বিশ্বের অনন্ত সম্পদ-রাজি।  অপু,খোকা… এরা হোল সেই বঞ্চিত,অপারগদের প্রতিনিধি। তাই অপু নিশ্চিন্দিপুরের পাশের গ্রামে আদ্যশ্রাদ্ধের নিমন্ত্রনে গিয়ে অন্যান্য ব্রাহ্মণ-দের মতো ছাঁদা বাঁধে। কারন,বাড়িতে দীন দুঃখী মা আছেন। আর,  অপু বাড়ি ফেরার পরে সেই ছাঁদা দেখে খুব খুশী হন মা সর্বজয়া। মায়ের মনেই পড়ে না ভালো করে কবে কোন কালে এমন ভালো ভালো খাবার খেয়েছিল।মায়ের খুশী দু-চোখ বড়ো বড়ো করে দেখে অপুর্ব রায় ওরফে “পথের পাঁচালী”-র বিশ্ব বন্দিত চরিত্র অপু।

কঠিন কঠোর দারিদ্র্য সারা জীবনে বারবার দেখেছেন লেখক। সেই অভিজ্ঞতা থাকবেই তো তাঁর সাহিত্য। তাই বিভূতি ভূষণের বিভিন্ন লেখাতে উঠে এসেছে বারবার

” খিদে”-র কথা। “দৃষ্টিপ্রদীপ”, ” সই”, ” পুঁইমাচা “, “অনুবর্তন” প্রভৃতি উপন্যাস,গল্পে।

বিভূতি ভূষণেরঅতি প্রিয় ছিল প্রকৃতির সৌন্দর্য। গাছ-গাছড়া,মেঘে ভরা আকাশ,মেঘ-মুক্ত নীল আকাশ, লম্বা লম্বা বনস্পতি,বিভিন্ন লতাপাতা, অরণ্যের নানা রূপ, ঝিঁঝিঁ ডাকা অন্ধকার, চাঁদিনী রাতের মাতোয়ারা আলো, মুষলধারে বরষার রূপ, ইত্যাদি এসবই ছিল তাঁর পছন্দের। প্রিয় ফুল ছিল বকুল,চাঁপা,জুঁই,বেল,শেফালি,টগর,ঘেঁটু,এড়াঞ্চিফুল,রজনীগন্ধা,গন্ধরাজ,কদম,নিশিগন্ধা,ইত্যাদি। ফলের মধ্যে প্রিয় ছিল আম,কাঁঠাল,জাম, প্রভৃতি।

বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি পড়তেন,এটা ছিল তাঁর নেশার মতো। তিনি পড়তেন জীবন বিজ্ঞান, উদ্ভিদবিদ্যা,জ্যোতির্বিজ্ঞান, ভ্রমন,ভূগোল,ইতিহাস,সাহিত্য,ইত্যাদি বিষয়গুলি।শোনা যায় , জীবনের শেষপ্রান্তে এসে তিনি পরলোকতত্ত্ব নিয়েও চর্চা করতেন। এই বিষয়ে জানা যায়,যে তিনি নাকি প্ল্যানচেট করে তাঁর প্রথমা স্ত্রী পরলোকগতা গৌরী দেবীর আত্মার সাথে কথাও বলেছিলেন। শুধু তাই নয়,তিনি মৃত্যুর আগে একবার কি একটা কাজে গিয়েছিলেন ধলভুমগড়,সেখানে তিনি একটি শুনশান জায়গাতে একজন মানুষকে সর্বাঙ্গ ঢাকা দিয়ে শুয়ে থাকতে দেখে,তার কাছে গিয়ে তার মুখের চাদর সরিয়ে দেখেছিলেন সেটা নাকি ছিল তাঁর নিজের মুখ।

তাঁর বাড়িতে বইপত্র ছড়ানো থাকতো,থাকতো মানচিত্রের গ্লোব। তিনি বই আলমারিতে গুছিয়ে রাখা নাকি পছন্দ করতেন না।এই সমস্ত কথা জানা যায় তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী রমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা “আমাদের বিভূতিভূষণ ” বই থেকে।

তাঁর দ্বিতীয় বিয়ের ব্যাপারেও এক চমকপ্রদ ঘটনার কথা জানা যায়। তখন বিভূতিভূষণ বনগ্রামে। লেখক হিসাবে বেশ নামডাক হয়েছে। হঠাৎ একদিন হৈচৈ পড়ে যায়,কারন, বিভূতি ভূষণেরছোট বোন জাহ্নবী দেবী ইছামতী নদীতে চান করতে গিয়ে জলে ডুবে গিয়েছেন। সেই ঘটনার কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সেই সময়ে অত্যন্ত বিমর্ষ বিভূতি ভূষণেরসাথে ঠিকানা জোগাড় করে দেখা করতে আসেন অনেক পাঠক-পাঠিকারা।তাদের মধ্যে অন্যতমা ছিলেন অবিভক্ত বাংলার ফরিদপুর জেলার ছয়গাঁও গ্রামের ষোড়ষীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের দ্বিতীয়া কন্যা রমা দেবী। অল্প কথার পরে অটোগ্রাফ খাতা বাড়িয়ে দিলেন রমা দেবী।বিভূতিভূষণ লিখে দিলেন..”গতিই জীবন,গতির দৈন্যই মৃত্যু।”

তারপর সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রায় ৩০ বছরের ব্যবধানের দুই মানব-মানবীর চিঠি দেওয়া নেওয়া,এবং ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব তৈরী হয়।

বিভূতি ভূষণেরঅতি প্রিয় ছিল প্রকৃতির সৌন্দর্য। গাছ-গাছড়া,মেঘে ভরা আকাশ,মেঘ-মুক্ত নীল আকাশ, লম্বা লম্বা বনস্পতি,বিভিন্ন লতাপাতা, অরণ্যের নানা রূপ, ঝিঁঝিঁ ডাকা অন্ধকার, চাঁদিনী রাতের মাতোয়ারা আলো, মুষলধারে বরষার রূপ, ইত্যাদি এসবই ছিল তাঁর পছন্দের। প্রিয় ফুল ছিল বকুল,চাঁপা,জুঁই,বেল,শেফালি,টগর,ঘেঁটু,এড়াঞ্চিফুল,রজনীগন্ধা,গন্ধরাজ,কদম,নিশিগন্ধা,ইত্যাদি। ফলের মধ্যে প্রিয় ছিল আম,কাঁঠাল,জাম, প্রভৃতি।

বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি পড়তেন,এটা ছিল তাঁর নেশার মতো। তিনি পড়তেন জীবন বিজ্ঞান, উদ্ভিদবিদ্যা,জ্যোতির্বিজ্ঞান, ভ্রমন,ভূগোল,ইতিহাস,সাহিত্য,ইত্যাদি বিষয়গুলি।শোনা যায় , জীবনের শেষপ্রান্তে এসে তিনি পরলোকতত্ত্ব নিয়েও চর্চা করতেন। এই বিষয়ে জানা যায়,যে তিনি নাকি প্ল্যানচেট করে তাঁর প্রথমা স্ত্রী পরলোকগতা গৌরী দেবীর আত্মার সাথে কথাও বলেছিলেন। শুধু তাই নয়,তিনি মৃত্যুর আগে একবার কি একটা কাজে গিয়েছিলেন ধলভুমগড়,সেখানে তিনি একটি শুনশান জায়গাতে একজন মানুষকে সর্বাঙ্গ ঢাকা দিয়ে শুয়ে থাকতে দেখে,তার কাছে গিয়ে তার মুখের চাদর সরিয়ে দেখেছিলেন সেটা নাকি ছিল তাঁর নিজের মুখ।

তাঁর বাড়িতে বইপত্র ছড়ানো থাকতো,থাকতো মানচিত্রের গ্লোব। তিনি বই আলমারিতে গুছিয়ে রাখা নাকি পছন্দ করতেন না।এই সমস্ত কথা জানা যায় তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী রমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা “আমাদের বিভূতিভূষণ ” বই থেকে।

তাঁর দ্বিতীয় বিয়ের ব্যাপারেও এক চমকপ্রদ ঘটনার কথা জানা যায়। তখন বিভূতিভূষণ বনগ্রামে। লেখক হিসাবে বেশ নামডাক হয়েছে। হঠাৎ একদিন হৈচৈ পড়ে যায়,কারন, বিভূতি ভূষণেরছোট বোন জাহ্নবী দেবী ইছামতী নদীতে চান করতে গিয়ে জলে ডুবে গিয়েছেন। সেই ঘটনার কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সেই সময়ে অত্যন্ত বিমর্ষ বিভূতি ভূষণেরসাথে ঠিকানা জোগাড় করে দেখা করতে আসেন অনেক পাঠক-পাঠিকারা।তাদের মধ্যে অন্যতমা ছিলেন অবিভক্ত বাংলার ফরিদপুর জেলার ছয়গাঁও গ্রামের ষোড়ষীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের দ্বিতীয়া কন্যা রমা দেবী। অল্প কথার পরে অটোগ্রাফ খাতা বাড়িয়ে দিলেন রমা দেবী।বিভূতিভূষণ লিখে দিলেন..”গতিই জীবন,গতির দৈন্যই মৃত্যু।”

তারপর সেই পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রায় ৩০ বছরের ব্যবধানের দুই মানব-মানবীর চিঠি দেওয়া নেওয়া,এবং ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব তৈরী হয়।

“পথের পাঁচালী” কাহিনীর প্রসঙ্গে কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের পুত্র দিলীপ কুমার রায় কে একটি চিঠিতে স্বয়ং বিভুতিভুষন লিখেছিলেন..”দৈনন্দিন ছোটোখাটো সুখ দুঃখের মধ্য দিয়ে যে জীবনধারা ক্ষুদ্র গ্রাম্য নদীর মতো মন্থর বেগে অথচ পরিপূর্ণ বিধ্বাসের ও আনন্দের সঙ্গে চলেছে– আসল জিনিসটা সেখানেই লুকিয়ে থাকে,তাকেই রূপ দিতে হয় নভেলে…নভেল কেন কৃত্রিম হবে।”

বিভূতিভূষণ  রোজ সকালে দিনলিপি লিখতেন।সেখানে তিনি লিখেছিলেন..”ভালবাসা pity নয়,করুণা নয়, Charity নয়, সহানুভুতি নয়,এমন কি বন্ধুত্বও নয়– ভালবাসা ভালবাসা। এখন সেই জিনিসের সূক্ষ মহিমা ও রসটুকু না বুঝে যে নষ্ট করে ফ্যালে অযাচিতভাবে দিয়ে,অপাত্রে দিয়ে– তার চেয়ে মূর্খ আর কে..?” আসলে বিভূতি ভূষণেরভালবাসা ছিল অকৃত্রিম,অকৃপণ।

বিভূতিভূষণ  তখনকার দিনের বিহারের,এখন ঝাড়খন্ডের ঘাটশিলাতে বাড়ি করেছিলেন।বাংলা সাহিত্যের অনেক লেখক,কবি সেই বাড়িতে গেছেন।তিনি শারদীয়া পুজোর কয়েকদিন আগে সেখানে চলে যেতেন। আবার ফিরে আসতেন ফাল্গুন মাসের শুরুতে।

ঘাটশিলার সংগে তাঁর যোগাযোগ ছিল গত শতকের তিরিশের দশক থেকে। সেখানে একটি বাড়ি কিনেছিলেন তিনি, নাম রেখেছিলেন প্রয়াতা স্ত্রী গৌরী দেবীর স্মৃতিতে “গৌরী কুঞ্জ”। ১৯৪২ সালে ব্যারাকপুর-বনগ্রাম অঞ্চলে পুরোপুরি সংসার পাতার পর তিনি পুজোয় ঘাটশিলাতে চলে যেতেন। সেই সময়ে সেখানে যেতেন তাঁর সাহিত্যিক-কবি বন্ধু-বান্ধবরা,যথা,প্রবোধ কুমার সান্যাল,প্রমথনাথ বিশী, গজেন্দ্রকুমার মিত্র,বিশ্বপতি চৌধুরী, বানী রায়,নীরোদচন্দ্র চৌধুরী, নীরদরঞ্জন দাশগুপ্ত, সুমথনাথ ঘোষ,অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত,প্রেমেন্দ্র মিত্র,বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়, প্রমুখরা।

বিভূতি ভূষণেরনির্জনতা ছিল খুব প্রিয়। তাই একা একাই তিনি কখনো সুবর্ণরেখা নদীর ধারে,পান্ডবশীলায়,

এঁদেলবেড়ের জঙ্গলে,কাছিমদহের পাড়ে,ফুলডুংরি পাহাড়ে ঘুরে বেড়াতেন। মাঝে মধ্যে তিনি পাহাড়ে পাথরের ওপরে বসে উপাসনা করতেন।

১৯৪৩ সাল, বছরের শেষের দিকের সময়,ফরেস্ট অফিসার বন্ধু যোগেন্দ্রনাথ সিং-এর আমন্ত্রনে তিনি গিয়েছিলেন সারান্ডার গভীর গহন জঙ্গলে।সেই সময়েই সেখানে লিখেছিলেন  “দেবযান “। তিনি সেখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে,প্রায়শই তিনি মাঝরাত অবধি জেগে থেকে অরন্যের রাত্রির সৌন্দর্য উপলব্ধি করতেন। পাশে বয়ে চলেছে তিরতির করে কোয়েনা নদী,চারিদিকে হয় অন্ধকার,নয়তো চন্দ্রিমার শোভারাশি..সেই পরিবেশে তিনি লিখে চলেছেন.. “অরণ্যই ভারতবর্ষের আসল রূপ,সভ্যতার জন্ম হয়েছে এই অরণ্য-শান্তির মধ্যে, বেদ,আরণ্যক উপনিষদ জন্ম নিয়েছে এখানে–এই সমাহিত স্তব্ধতায়–নগরীর কোলাহলের  মধ্যে নয়..।”

তিনি এতটাই অন্তরের অন্দরে অন্তর্গত ছিলেন যে,কোনদিন সুদুর আফ্রিকা মহাদেশে না গিয়েও শুধুমাত্র রোসিটা ফোর্বস্, এইচ.এইচ জনস্টন প্রমুখ কয়েকজন বিশ্বখ্যাত পর্যটকের বই পড়ে আর নিজের মননশীলতায় আফ্রিকা মহাদেশের ভৌগোলিক এবং ভূ-প্রকৃতির নিখুঁত বর্ননা দিয়ে লিখেছিলেন বিখ্যাত উপন্যাস ” চাঁদের পাহাড় “।

ব্যারাকপুরে থাকাকালীন তিনি লেখেন ” অশনি সংকেত”,”ইছামতী” উপন্যাস।

তিনি মৃত্যুর কয়েকদিন আগে পুজোর ছুটিতে জীবনের শেষ গল্প “শেষ লেখা” লিখেছিলেন। তাঁর চিরবিদায়ের পরে বিভূতি ভূষণেরলেখার জায়গা থেকে সেটি পাওয়া যায়।

তাঁর ছিল সুগভীর পর্যবেক্ষনশীলতা। সেই জন্যই তিনি মানুষের মনের এবং প্রকৃতির বিভিন্নতা নিয়ে অনুভবের অভিব্যক্ততা ঘটাতে পেরেছিলেন তাঁর বিভিন্ন রচনাতে।

বিভূতিভূষণ চিরদিন ছিলেন খুব সাধারণভাবে জীবন যাপনে অভ্যস্ত। নীরোদচন্দ্র লিখছেন,…” বহু বৎসর পর, আমার বিবাহ পরবর্তীকালে, তিনি আমার স্ত্রীর সঙ্গে ভারী বন্ধুত্ব করিয়াছিলেন, তাঁহার সহিত আসিয়া পছন্দ-অপছন্দের গল্প করিতেন।…শান্তভাবে বিড়ি টানিতে টানিতে সোজা শয়ন কক্ষে চলিয়া যাইতেন…।আমার স্ত্রী তাঁহাকে  বিড়ি ফেলিতে বাধ্য করিয়া,ভৃত্যকে দিয়া এক প্যাকেট খ্যাতনামা সিগারেট আনাইয়া দিতেন।”

একবার কলকাতা থেকে কয়েকজন গিয়েছিলেন ঘাটশিলাতে লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে তাঁদের  একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করে সম্বর্ধনা দেবার জন্যে। তারা লেখকের বাড়ির ঠিকানা নিয়ে সেইদিকে যেতে যেতে পথের মধ্যে দেখতে পান জনা চারেক মানুষ একটি জায়গাতে বসে তাস খেলছেন।আর কয়েকজন তাদের সেই খেলা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। কলকাতার সেই উদ্যোক্তারা তাদের জিজ্ঞাসা করলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িটা কোন দিকে। তাস খেলুড়েদের একজন বিড়িতে লম্বা টান দিয়ে দেখিয়ে দিলেন কোনদিকে লেখকের বাড়ি। সেইমতো উদ্যোক্তারা এগিয়ে গেলেন। লেখকের বাড়িতে তাদের অভ্যর্থনা করে বসানো হোল।কিছুক্ষন পরে তাদের সামনে উপস্থিত হলেন লুঙ্গি-ফতুয়া-চাদর গায়ে, মুখে বিড়ি নিয়ে, লেখক স্বয়ং।সকলেই অবাক!! আরে ইনিই তো একটু আগে তাস খেলতে খেলতে বাড়ির পথটা দেখিয়ে দিয়েছিলেন!! এতো বড়ো মাপের লেখক কি অনাবিল সরল স্বাভাবিক স্বচ্ছন্দতায় আর পাঁচজনের সাথে তাদের সঙ্গে মিশে গিয়ে তাদের-ই  একজন হয়ে গিয়েছিলেন। উদ্যোক্তাদের মনে তখন লেখকের সম্মন্ধে অপরিসীম শ্রদ্ধার বিনম্রতা।

এই হোল বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

বিভূতিভূষণ  তখন হরিনাভিতে এক স্কুলের শিক্ষক। স্কুল থেকে ফিরে একটু বিশ্রাম নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন পাড়া ঘোরার জন্যে। বেশ কিছুক্ষন চলাফেরার পরে কোনদিন গিয়ে বসতেন “ছ’-আনি চৌধুরীদের ভাঙাবাড়ির দোলন-মাচার সামনে, কিম্বা কোনদিন চলে যেতেন ময়রাপাড়ার খোঁড়া গুরুমশায়ের পাঠশালার কাছে। মন দিয়ে শুনতেন কেমন সুর করে পাঠশালার ছাত্ররা নামতা পড়ছে। এমন বহুদিন হয়েছে সন্ধ্যে হয়ে গেছে তিনি ফেরেন নি বাড়িতে।তখন তার খোঁজে কখনো বোসপুকুরের আশেপাশে বা কোনদিন নিশ্চিন্দিপুরের ফাঁকা শুনশান মাঠের পাশের মেঠো রাস্তায় তাকে খুঁজতে বেরোতে হোত। আবার কখনো তাকে পাওয়া যেত খগেন বোসের বাগান বাড়ির সামনে কাঁঠালিচাঁপা ফুলের বনের ধারে। তিনি হাঁটতে হাঁটতে একদিন চলে গিয়েছিলেন বোড়াল পর্যন্ত। সেখানে দেখতে গিয়েছিলেন রাজনারায়ন বসুর ভিটে বাড়ি। আবার আরেকদিন বোড়াল থেকে ফেরার পথে রাজপুরের কাছে গঙ্গার ধারে কর-মশাইয়ের মন্দির দেখতে গেলেন।সাথে ছিলেন বন্ধু যতীন্দ্রমোহন রায় ওরফে পাঁচুগোপাল। তাকে লেখক বললেন..” বুঝলে এত দূর এসে এখানে একটু না এলে কর মশাই দুঃখ পাবেন,রাগ করবেন, তাই এলাম”। সঙ্গী যতীন্দ্রমোহন অবাক হলেন সে কথা শুনে,কারন, সেই কর মশাই বহুদিন আগে মারা গেছেন,সবাই জানে। বিভূতিভূষণ বললেন..” তাঁর দেহ নেই,কিন্তু আত্মা আছে তাঁর কীর্তিগুলি ঘিরে,তুমি টের পাও না,আমি কিন্তু টের পাই।” যতীন্দ্রমোহন রায়ের লেখা স্মৃতিচারন থেকে পাওয়া যায়–” ভবিষ্যতে  ‘দেবযান’ নির্মাতার তখনকার এই কথাগুলি মনে পড়লে আজও সারা দেহ রোমাঞ্চিত হ’য়ে ওঠে।” তিনি ঠিকই বলেছেন, কারন সেই ছ’আনি চৌধুরীদের প্রাচীন ভাঙা বাড়ির পটভূমিতেই সৃষ্টি হয়েছিল “কেদার রাজা”-র পটভুমিকা।

১৯২০ সালেই তিনি এই হরিনাভিতেই দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ অ্যাংলো-সংস্কৃত স্কুলে শিক্ষকতার কাজে যোগ দিয়েছিলেন। এখানেই বিভূতি ভূষণেরলেখালিখির সুত্রপাত।এখানেই পরিচয় হয় যতীন্দ্রমোহন রায়ের সঙ্গে।

প্রথম লেখা “পুজনীয়া”…যা পরে প্রকাশিত হয়েছিল “উপেক্ষিতা” নামে। সেই হোল বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর লেখার শুরু। তারপর কলম আর থামেনি। অনেক লেখনীর কালজয়ী কীর্তির শেষে সেই লিখন থামলো ১৯৫০ সালের ১ লা নভেম্বর…ঘাটশীলাতে। পথের পাঁচালীর অপরাজিত প্রকৃতি প্রেমিক,মানব দরদী বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় চলে গেলেন দেবযানে মহাপ্রস্থানের পথে। শুধু রয়ে গেলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়  তাঁর সাহিত্যের কীর্তির সাথে বাঙালীর ঘরে ঘরে,বাঙালীর অন্তরে অন্তরে।

মন্তব্য করুন

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

সম্পাদকের পছন্দ

টাটকা খবর

©2023 newsonly24. All rights reserved.