পঙ্কজ চট্টোপাধ্যায়
ঠিক এই মুহূর্তে, ২০২২ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে এশিয়ার আরব দুনিয়ার কাতারে চলছে ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা। সারা বিশ্ব যখন ফুটবল খেলার আকর্ষণ নিয়ে,আলোচনা করতে ব্যস্ত,..ঠিক তখনই একটা খবর ভেসে উঠলো সোস্যাল মিডিয়ায়, প্রিন্ট,ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়…..” ফুটবলের সম্রাট পেলে খুবই অসুস্থ…কিছু খেতে পারছেন না, সারা শরীর ফুলে গেছে…চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন তিনি..”।
খবরটা মন খারাপ করা খবর। তাই এই মুহূর্তে সারা বিশ্বের ফুটবল প্রেমীদের আন্তর্জাতিক আন্তরিক প্রার্থনা… পেলে সুস্থ হয়ে উঠুন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব…।
ফুটবল খেলা এবং পেলে… এই শব্দবন্ধ যেন একে অন্যের পরিপুরক। পেলে ১৯৪০ সালের ২৩ শে অক্টোবর ল্যাটিন আমেরিকার অন্যতম ছোট্ট দেশ ব্রাজিলের ম্যাইনাস গেরেইস স্টেটের ( state of Minas gerais) ত্রেস্ কোরাকোয়েস( Tres coracoes)- এ জন্মগ্রহণ করেন। পেলে ব্রাজিলিয়ান পর্তুগীজ। পেলের আসল নাম এডসন্ আরান্তেস্ দো ন্যাসিমেন্টো ( Edson Arantes do Nascimento)।
ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি ফুটবল খেলা ছিল পেলের অত্যন্ত প্রিয়।তাই তিনি সারা বিশ্বে খুব কম বয়সে (১৩ বছর বয়সে) ক্লাব ফুটবল খেলতে শুরু করেন। ক্লাবের নাম ছিল “বাউরু”, পেলে এই ক্লাবে খেলেন ১৯৫৩ থেকে ১৯৫৬ সাল অবধি। পেলে প্রথম আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচ খেলেন মারকানায় আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে,৭ই জুলাই, ১৯৫৭ সাল,পেলের তখন ১৬ বছর ৯ মাস বয়স। সারা বিশ্বে ফুটবল খেলার ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সের ছিলেন পেলে।
পেলে ১৯৫৬ সাল থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত সান্টোস এফ.সি. দলে খেলেছিলেন, তারপরে ১৯৭৫-১৯৭৭ তিনি খেলেছেন নিউইয়র্ক কসমস ক্লাবে।এই কসমস ক্লাব ১৯৭৭ সালে আমাদের কলকাতায় এসেছিল ফুটবল ম্যাচ খেলতে মোহনবাগানের সাথে।স্বয়ং পেলেও এসেছিলেন সেই সময়ে।কলকাতার মাঠে তিনি খেলেওছিলেন।সারা কলকাতা তথা সারা ভারতবর্ষের সে এক অনির্বচনীয় আবেগের আবেশে রোমাঞ্চকর অবস্থা হয়েছিল সেদিন।
পেলে ১৯৫৬ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত সান্টোস এফ.সি.-র হয়ে ফুটবল ম্যাচ খেলেছিলেন ৬৩৮ টি,গোল করেছেন ৬১৯ টি। এরপরে ১৯৭৫-৭৭ নিউইয়র্ক কসমস ক্লাবের হয়ে খেলেছিলেন ৫৬ টি ফুটবল ম্যাচ,আর গোল করেছেন ৩১ টি। এককথায় সর্বমোট ৬৯৪ টি ম্যাচে ৬৫০ টি গোল।
পেলে খেলতেন ফরোয়ার্ড পজিশনে। তিনি তার দেশ ব্রাজিলের হয়ে ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা খেলেছেন ১৯৫৮(সুইডেন এ অনুষ্ঠিত), ১৯৬২(সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত), ১৯৬৬(ইংল্যাণ্ডে অনুষ্ঠিত), ১৯৭০ (মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত)… এই বছর গুলিতে। ১৯৫৮ সালে প্রথম ব্রাজিল ফিফা ফুটবল প্রতিযোগিতার বিশ্বকাপে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল পেলের অনবদ্ধ ক্রীড়ানৈপুণ্যের জন্য। তার মধ্যে ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপে তিনি প্রথম খেলাতেই খুব আঘাত পান।ফলে সেবার বিশ্বকাপে খেলতে পারেননি। তিনি ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপে খেলেছেন ৯২টি ফুটবল ম্যাচ,দেশের হয়ে গোল করেছেন ৭৭ টি। যা এক চিরন্তন ইতিহাস। পেলে বিশ্বকাপে যেদিন প্রথম গোল করেছিলেন, সেই সময়ে পেলের বয়স ছিল ১৭ বছর ২৩৯ দিন,সারা বিশ্বে সবচেয়ে কমবয়সের দৃষ্টান্ত।যা আজও অটুট। ১৯৫৯ সালে ব্রাজিল প্রথম আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে কোপা আমেরিকার ফুটবল প্রতিযোগিতায় খেলে,সেই দিন সেই টীমে পেলে ছিলেন মধ্যমণি।
পেলে তাঁর খেলার জীবনে সহ খেলোয়াড় হিসাবে পেয়েছিলেন বিখ্যাত সব খেলোয়াড়দের, তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন গ্যারিঞ্চা,জিকো,ভাভা, জোয়ার্জিনহো,গারসন,রিভেলহিনহো,প্রমুখ।
পেলের ব্যক্তিগত জীবনও বিচিত্রিতায় ভরা। তিনি প্রথম বিয়ে করেন রোজমেরি ডোজ্ রেস চলবি-কে(১৯৬৬-৮২// Rosemerry dos reis cholbi), এরপরে, বিয়ে করেন আসিরিয়া ন্যাসিমেন্টো-কে( ১৯৯৪-২০০৮//assiria nascimento), শেষ বিয়ে করেন মারসিয়া আওকি-কে(২০১৬// marcia aoki)। পেলের অনেকগুলি সন্তান। পেলে সারা বিশ্বে অনেক সম্মান পেয়েছেন, তিনি ব্রাজিল গভর্নমেন্টের Sports and Game Minister এর পদ অলংকৃত করেছেন।
পেলের এখন বয়স ৮২। এই বিশ্বকাপ তিনি দেখছেন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। তিনি ফুটবলের রাজাধিরাজ। তাঁর সিংহাসন অসংখ্য ক্রীড়ামোদীদের অন্তরে। সেই অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে কামনা করি,প্রার্থনা করি,ফুটবল সম্রাট পেলে রোগ শয্যা থেকে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন। এই আমাদের প্রত্যাশা।