পুরানো সেই দিনের কথা

পঙ্কজট্টোপাধ্যায়

ইংরাজি বা গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির (যা সাধারণত আমাদের সমাজে প্রচলিত ক্যালেন্ডার) অনুযায়ী ইংরেজি  নববর্ষের, মানে ১জানুয়ারী র প্রাক্কাল বলতে আমরা বুঝি পুরনো বছরের সদ্য বিদায় নেওয়ার শেষ দিনটিকে, মানে ৩১ ডিসেম্বরকে। এই দিনের সকাল থেকেই কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে যায় নতুন বছরের অপেক্ষায়।।তবে এদিনের সন্ধ্যা থেকেই সবিশেষভাবে শুরু হয়ে যায় সেই নতুন বছরকে স্বাগত  জানানোর নানা রকমের আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ। এই ৩১ ডিসেম্বরের দিনটিকে বলা হয় “সেন্ট সিলভেস্টার্ ডে”… ১০৫ খ্রিস্টাব্দতে আয়ারল্যান্ডে সেন্ট সিলভেস্টার্ প্রথম এই নববর্ষের আগের দিন পুরাতন বছরকে বিদায় জানানো এবং নতুন বছরকে অভিবাদন জানানোর অনুষ্ঠান করেছিলেন গীর্জাতে। সেই থেকে পরে ধীরে ধীরে তা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে।

ঘন শীতের ৩১ ডিসেম্বরের সন্ধেতে সারা বিশ্বের দেশে দেশে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ বিভিন্ন ধরনের,বয়সের মানুষ আনন্দের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মেতে ওঠেন। আলোক সজ্জায়, আতশবাজিতে, ফুল-মালায়,গানে-নাচে,খানা-পিনায় বিভিন্ন দেশে চলে বিভিন্ন অনুষ্ঠান। গির্জায় গির্জায় বেজে ওঠে ঘন্টা ধ্বনি।বন্দরে বন্দরে,জাহাজঘাটায় দাঁড়িয়ে থাকা জাহাজ থেকে হুটার বাজানো হয়। এসবই হয় বিশেষ করে ৩১ ডিসেম্বরের  ঘড়িতে যখন বেজে ওঠে ঠিক রাত ১২ টা।

সারা দুনিয়ার শহরগুলিতে,মফঃস্বলে,এমন কি অনেক গ্রামাঞ্চলেও সন্ধে থেকেই মানুষের ঢল নামে রাস্তায়,আলোক সজ্জিত শহরে-শহরতলীতে। পুরাতন বছরকে বিনম্র বিদায় জানিয়ে,বিগত এক বছরের ভালো মন্দ অনেক স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে, বিষন্নতায়,বিহ্বলতায় নতুন বছরকে স্বাগত জানায় মানুষের প্রাণ,মানুষের মন।

পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে মানুষরা গেয়ে ওঠেন “অউল্ড্ ল্যাং জাইন্..(Auld lang syne..) গানটি। এখানে উল্লেখ্য যে ১৭/১৮ বছরের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথমবার বিলেতে গিয়ে এই গানটি শুনেছিলেন এবং তাঁর খুব ভাল লেগেছিল, তিনি পরে সেই গান অনুদিত করে তৈরী করেছিলেন সেই বিখ্যাত গান, ‘‘পুরানো সেই দিনের কথা,ভুলবি কিরে হায়,./ ও সে চোখের দেখা,প্রানের কথা,সে কি ভোলা যায়’’।

সারা পৃথিবীতে ৩১ ডিসেম্বরের রাতকে ‘31st. Night’ হিসাবে পালন করা হয়। মাঝরাতে অভিবাদিত করা হয়, অভিনন্দিত করা হয়  পরবর্তী নতুন বছরের প্রথম দিনটিকে।

পুরানো বছরের অনেক ব্যাথা-বেদনা, দুঃখ-কষ্ট ভুলে  পুরানো বছরের বিদায় ক্ষণ-কে বিদায় জানিয়ে,..”পুরানো সেই দিনের কথা”-কে মনে রেখেই বরন করে নেওয়া হয় নতুন বছরের  ১লা জানুয়ারী কে–, সবাই সবাইকে শুভেচ্ছা অভিনন্দন আর ভালোবাসা জানিয়ে বলে ওঠেঃ‘Happy New Year’।

Related posts

২৭ শে এপ্রিল মানে জাগা, জেগে থাকা, জাগানো…

‘কলকাতার যীশু’, ‘উলঙ্গ রাজা’, ‘অমলকান্তি’-র প্রণেতা, শতবর্ষী কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী

চৈত্র বৈশাখ মধুমাধবের মায়ায় মায়ায়